খুলনায় ১২ খন্ড করে সবুজকে হত্যা ৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল

0
299

নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা মহানগরীতে ১২ খ- করে ইট ভাটার সরবরাহকারী যুবক হাবিবুর রহমান সবুজকে হত্যা মামলায় ৫ জনকে আসামি করে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক শেখ আবু বকর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। পরকীয়া প্রেম সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ৫ জন সরাসরি এই হত্যাকা-ে অংশ নেয় বলে জানিয়েছে পিবিআই।
চার্জশীটভুক্ত আসামিরা হচ্ছেন- সরদার আসাদুজ্জামান ওরফে আরিফ, অনুপম, খলিলুর রহমান, গাজী আবদুল হালিম ও এ কে এম মোস্তফা চৌধুরী মামুন। মোস্তফা মামুন পলাতক রয়েছে। অন্য ৪ আসামি গ্রেফতারের পর থেকে কারাগারে রয়েছে। মামলার চার্জশিটে মোট ৪৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
নিহত হাবিবুর রহমান সাতক্ষীরা সদরের উমরা এলাকার আবদুল হামিদ সরদারের ছেলে। তিনি সাতক্ষীরার একটি ইট ভাটায় শ্রমিক সরবরাহ করতেন।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ মার্চ সকালে নগরীর শের-এ বাংলা রোড থেকে পলিথিনে মোড়ানো হাবিবুর রহমানের মরদেহের একটি অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে দুপুরে ফারাজীপাড়া রোডে ড্রেনের পাশ থেকে দুটি ব্যাগে থাকা মাথা ও দুই হাতসহ খ- খ- অংশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভগ্নিপতি গোলাম মোস্তফা বাদি হয়ে গত ৯ মার্চ খুলনা সদর থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র‌্যাব-৬ সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মার্চ র‌্যাবের সদস্যরা নগরীর ফুলবাড়িগেট এলাকা থেকে হত্যাকান্ডে জড়িত সরদার আসাদুজ্জামান ওরফে আরিফকে আটক করে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নগরীর ৩৪নং ফারাজীপাড়া লেনের হাসনাত মঞ্জিলে তল্লাশি চালানো হয়। প্রায় ৩ মাস ধরে এই বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকতেন আসাদুজ্জামান।
র‌্যাব জানায়, আসাদুজ্জামানের ঘরের খাটের নিচ থেকে পলিথিনে মোড়ানো নিহত হাবিবুরের কাটা পা ও বাথরুমে বালতির ভেতর থেকে পলিথিনে মোড়ানো মরদেহের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও দা উদ্ধার করে র‌্যাব। নিহত হাবিবুরের ব্যবহৃত মোটর সাইকেল আসাদুজ্জামানের ঘরে পাওয়া যায়। র‌্যাবের আরেকটি টিম বটিয়াঘাটা থেকে হত্যাকান্ডে জড়িত যুবক অনুপম মহলদারকে আটক করে। পরবর্তীতে মামলার তদন্ত খুলনা থানা থেকে পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, তারা গত এপ্রিল মাসে হত্যাকান্ডে জড়িত খলিলুর রহমান ও গাজী আবদুল হালিমকে আটক করে।
সূত্রটি জানায়, হত্যাকান্ডের আগে নিহত হাবিবুর ও পলাতক আসামি এ কে এম মোস্তফা চৌধুরী মামুন পৃথক মামলায় কারাগারে ছিল। কারাগারে তাদের পরিচয় হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে হাবিবুর কারাগার থেকে জামিনে বের হয়। হাবিবুর জেল থেকে বের হওয়ার সময় মোস্তফা তাকে কারামুক্ত করতে সহযোগিতার অনুরোধ জানায় এবং তার স্ত্রী রিক্তার মোবাইল নম্বর দেয়। কিন্তু হাবিবুর কোনো সহযোগিতা করেনি। এমনকি মোস্তফার স্ত্রী রিক্তার সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। হাবিবুর রিক্তাকে নিয়ে কক্সবাজার, কুয়াকাটা ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। এছাড়া মোস্তফার বোনের সাথেও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে।
মোস্তফা কারাগার থেকে বেরিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে হাবিবুরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তার অনুরোধে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে আরও ৪ জন হাবিবুরকে হত্যাকান্ডে অংশ নেয়। ওই ৪ জনের সাথেও মোস্তফার পরিচয় কারাগারে থাকাকালীন। গত ৬ মার্চ রাতে ফারাজীপাড়া এলাকায় আসাদের বাসায় হাবিবুরকে ডেকে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো মিষ্টি খাওয়ানো হয়। হাবিবুর অচেতন হয়ে পড়লে ৫ জনে মিলে তাকে হত্যা করে এবং এরপর লাশ ১২ খ- করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক শেখ আবু বকর জানান, পরকীয়া প্রেম সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকা- ঘটে। হত্যাকা-ে সরাসরি অংশ নেওয়া ৫ জনকে আসামি করে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। মূল আসামি মোস্তফা মামুন এখনও পলাতক রয়েছে। সে ভারতে চলে গেছে বলে তাদের কাছে তথ্য আছে।