পাইকগাছায় সামাজিক বনায়নের গাছ কর্তন -খবর প্রকাশে দৌড়-ঝাঁপ শুরু

0
253

কপিলমুনি প্রতিনিধি:
সামাজিক বনায়নের আওতায় পাইকগাছার হরিঢালী ইউনিয়নের অন্তত ৮ টি সরকারি রাস্তার প্রায় ৯ কি:মি: এলাকায় লাগানো লক্ষ লক্ষ টাকার গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনায় খবর প্রকাশে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছে বিভিন্ন দপ্তরের পাশাপাশি বঞ্চিত উপকারভোগীদের সাথে।
ব্যাপক দূর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে গোপনে গাছ বিক্রির তথ্যবহুল সংবাদ দৈনিক কালান্তরসহ বিভিন্ন পত্রিকান্তে প্রকাশ হওয়ার পর প্রথমত এলাকায় নানা আস্ফলন করে বেড়ালেও বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষসহ সাংবাদিকদের ম্যানেজ মিশনে নেমেছেন কতিপয় চক্র।
জানাগেছে, প্রায় ২৪ বছর আগে সাতক্ষীরার তালার একটি বেসরকারি সাহায্যসেবী প্রতিষ্ঠান ”উত্তরণ” পাইকগাছার হরিঢালী ইউনিয়নের অন্তত ৮ রাস্তায় ৭ হাজার বিভিন্ন প্রকার ফলদ ও বনজ বৃক্ষের চারা রোপন করে। এরপর হরিঢালী কৃষক সমবায় সমিতি লিঃ এর ব্যনারে প্রতিটি সড়কের পাশে লাগানো গাছের মধ্যে আরো কিছু গাছের চারা রোপন করা হয়। পরে তারা সমুদয় গাছ তাদের লাগানো বলে দাবি করলে শুরু হয় বিতর্ক। এনিয়ে উভয় পক্ষ আদালতের আশ্রয় নেয়। যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ, রাস্তার পাশে ঝুঁকিপূর্ণ ও নতুন রাস্তা নির্মাণের অযুহাতে গত কয়েক বছরে ঐ গাছের অর্ধেকেরও বেশি পরিমাণে গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। তবে দু’টি পক্ষের মামলা ও কর্তনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় দৃশ্যত কেউ প্রতিাবাদ করেননা। এনিয়ে কথা বললে তাদের উল্টো মামলারও ভয় দেখানো হয়।
গত ২৭ আগস্ট স্থানীয় বি.আর.ডি.বি সমবায় সমিতির সদস্যরা গাছগুলি তাদের লাগানো বলে দাবি করে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে জানানো হয় যে, স্থানীয় বি.আর.ডি.বি’র ৩৫০ জন সদস্য ইউনিয়নের ৯ কি:মি: রাস্তার পাশে প্রায় ২০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজ বৃক্ষ রোপন করে তার রক্ষনা-বেক্ষণ করে আসছেন। তবে সম্প্রতি স্থানীয় কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল বিধি বহির্ভূতভাবে গোপনে বিভিন্ন সড়কের গাছ কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
এবিষয়ে অভিযোগকারীদের মধ্যে নির্ম্মল দত্ত জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাফর সিদ্দিকী রাজু সংশ্লিষ্ট বি.আর.ডি.বি’ যৌথ সমন্বয়ে প্রথম দফায় রাস্তার ১৬ টি গাছ কর্তনপূর্বক প্রকাশ্য নিলামে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। পরে ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে আরো ১৬ টি গাছ স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী রুহুলামিন মল্লিকের নিকট মাত্র ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
অভিযোগ করা হয় যে, ২য় দফায় বিক্রিত ১৬ টি গাছ ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে বিক্রি হলেও তার কোনটিই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কতিপয় ব্যক্তিরা চেয়ারম্যানকে ভূল বুঝিয়ে ঐসকল গাছ বিক্রির ছাড়পত্র নেন। এছাড়া বৈধ-অবৈধ উপায়ে দু’দফায় মোট ৩২ টি গাছের টেন্ডার হলেও স্বার্থান্বেষী মহল টেন্ডারের অন্তরালে আগে-পরে শত শত গাছ গোপনে কর্তনপূর্বক বিক্রি করে দিয়েছেন।
এব্যাপারে সরেজমিনে খোজ নিতে হরিঢালীর বিভিন্ন রাস্তায় গেলে গাছ কাটার বহু নমুনা দেখা যায়। এছাড়া অনেক এলাকায় গাছ কেটে খন্ড খন্ড করে ফেলানো অবস্থায় দেখা যায়।
এব্যাপারে স্থানীয় হরিঢালী পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মিজানুর রহমান জানান, পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তিনি গত বৃহস্পতিবার ফাঁড়ির সন্নিকটে মাদ্রাসার সামনে থেকে ১৯ পিচ কাঠ উদ্ধার করে ফাঁড়িতে এনে রেখেছেন। তবে কাঠগুলির মালিকানা দাবি করে কেউ তার কাছে আসেননি। এয়াড়া উপজেলা বনবিভাগ শেষ দফার গাছ কাটতে কোন প্রকার অনুমতি দেননি বলেও সূত্র জানায়।
রাস্তায় সামাজিক বনায়নের দলিলে দেখাযায়, সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীরা গাছের ৬৫ শতাংশের মালিক, ইউনিয়ন পরিষদ ২০ শতাংশ,বিভাগীয় বনবিভাগ ৫ শতাংশ ও স্থানীয় বিআরডিবি ১০ শতাংশের মালিক। তবে এখন পর্যন্ত গাছ বিক্রির টাকার ৪০ শতাংশ স্থানীয় ইউপি, এলাকার গরিব ও সুবিধা বঞ্চিত ৩১৩ জন সদস্যদের জন্য রাখা হয়েছে জনপ্রতি ১৮০ টাকা। বাকি টাকার কত অংশ কোথায় গেছে তার হিসাব মিলছেনা কোনভাবেই। এলাকাবাসীর প্রশ্ন চুক্তি অনুযায়ী গাছ বিক্রির ২০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে প্রদানের কথা থাকলেও সমিতির সদস্যদের বঞ্চিত করে কেন ইউপি চেয়ারম্যানকে ৪০ শতাংশ প্রদান করা হল।
অন্যদিকে গাছ কর্তন ও বিক্রির বিষয়য়ে উত্তরণ’’ পরিচালক শহীদুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, গাছগুলি তাদের লাগানো। তবে এর মালিকানা নিয়ে অন্য একটি সমবায় সমিতি দাবি করলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বর্তমানে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সর্বশেষ গাছ কর্তনের বিষয়টি তার জানা নেই দাবি করে তিনি বলেন, মালিকানা দাবিদার তার প্রতিষ্ঠানও একটি পার্টি। গাছ কর্তনপূর্বক বিক্রির উদ্যোগ নিলে তাদের জানানোর কথা থাকলেও তা জানানো হয়নি।
এব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ’র নিকট ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সর্বশেষ গোপনে শত শত গাছ কর্তনের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছেন সমিতির সদস্যদের পাশাপাশি সচেতন এলাকাবাসী। এব্যাপারে তারা আন্দোলনে যাওয়ারও প্র¯‘তি নিচ্ছেন বলে জানানো হয়।