খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার রাজাকারের তালিকা

0
919

বিশেষ প্রতিবেদক: ১৯৭১ সালে মুক্তিয্দ্ধু চলাকালীন সময় মানবতা বিরোধ অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে দাকোপ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৭৩ জন যুদ্ধাপরাধীর নামের তালিকা প্রস্তুত করেছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন তদন্তের পর যুদ্ধাপরাধীদের নাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠায়।
১৯৭১ সালে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর মুক্তিকামী জনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। হিন্দু অধ্যুষিত ইউনিয়নগুলোর অধিবাসীরা ২৫ মার্চের পর দেশত্যাগ করে। মে মাসের পর থেকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্তরা মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়। এ এলাকার জাতীয় পরিষদ সদস্য লুৎফর রহমান মনি সংগঠক হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ইউপি চেয়ারম্যানরা পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার পক্ষে লড়াই করার জন্য যুবকদের রাজাকারে পাঠাতে উৎসাহিত করে। খুলনা থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তারা স্ব-স্ব এলাকায় ফিরে আসে।
স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মোহাম্মদ আবু সাঈদ মোল্লা ২০১০ সালের ১২ জুলাই রাজাকারদের তালিকা চেয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠি পাঠান। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কিত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। উপজেলা প্রশাসন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সুপারিশকৃত তালিকা জেলা প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত ২৫ অক্টোবর ২০১০ তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের কাছে ৭৩ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা পাঠায়। উপজেলা প্রশাসনের তৈরী করা ওই তালিকায় মৃত ব্যক্তিদের নামসহ বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সক্রিয় নেতার নাম রয়েছে।
পাকবাহিনীদের সহযোগিতা করার জন্য তৎকালীন দাকোপ থানা খাদ্য গুদামের কেরানী রশিদের (রশিদ কেরানী) নেতৃত্বে উল্লিখিত ৭৩ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য রাজাকার ক্যাম্পে পাঠানো হয়। খুলনার ভূতের বাড়ি আনসার সদর দপ্তরে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সকল রাজাকাররা সশস্ত্র অবস্থায় দাকোপের বিভিন্ন এলাকায় ফিরে এসে লুটতরাজ ও হত্যা মিশনে অংশ নেয়। তারা উল্লিখিত খাদ্য গুদামকে অস্থায়ী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী রহমত উল্লাহ দাদু’র নেতৃত্বে রাজাকারদের ওই ক্যাম্প দখল করে নেয়। উপজেলা প্রশাসনের পাঠানো তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধীরা হচ্ছে চালনা বাজারের অব্দুর রশিদ, আব্দুল হামিদ শেখ, ছাত্তার শেখ, আঃ লতিফ (নতো) নজরুল মোল্লা, আলতাফ শেখ, নুরুল আমীন মতো ওরফে মতলেব শেখ, সবুজ পল্লীর নাসির উদ্দিন, আনন্দনগর গ্রামের দলিল উদ্দিন, ইমান শেখ, ইছাহাক শেখ, মুনছুর আলী খান, পানখালী ইউনিয়নের পানখালী গ্রামের দলিল উদ্দিন শেখ, শহর আলী শেখ, আবু জাফর শেখ, হোসেন আলী শেখ, ছাত্তার শেখ, নুর আলী মোল্লা, হাছান মোল্লা, জলিল মোল্লা, আতিয়ার রহমান মোল্লা (থানা কমান্ডার) আঃ রাজ্জাক মোল্লা, আবু ফকির, রুহুল আমিন সরদার, হামিদ শেখ, সহর আলী শেখ, জয়নাল সরদার, বাবর আলী সরদার, ছাইদুল শেখ, কাটাবুনিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, আঃ ওহাব শেখ, মোজাহার উদ্দিন মোল্লা, রউফ শেখ, হাবিবুর রহমান শেখ, তৈয়বুর রহমান, হোগলাবুনিয়া গ্রামের হাফেজ উদ্দিন গাজী, মকবুল হোসেন গাজী, ইছাহাক মোল্লা, আঃ রহমান গাজী, মৌখালী গ্রামের মোঃ হাসেম সরদার, ডাঃ এইচ এম নাজিম, মহিনউদ্দিন বয়াতী, শাহাজান সরদার, করম হালদার, কুদ্দুস সরদার, লক্ষ্মীখোলা গ্রামের আফছার আলী শেখ, আঃ গফুর শেখ, আঃ রশিদ শেখ, আঃ গনি শেখ, মতিয়ার রহমান, মহিউদ্দিন শেখ, জহুর আলী ফকির, মোক্তার মোড়ল, আমজেদ সরদার, ছামছুর রহমান ফকির, ফুল মিয়া শেখ, খালেক ফকির, মুজিবর ফকির, তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কাঁকড়াবুনিয়া গ্রামের সোহরাব হোসেন মোল্লা, মতিয়ার রহমান সানা, হামিজুদ্দিন শেখ, গোলাম রহমান গাজী, সফিজুদ্দিন গাজী, আছমত গাজী, এলাহী গাজী, নলডাঙ্গা গ্রামের শেখ নওসের আলী, মমিন শেখ, নয়ন শেখ, হামিদ শেখ, জহুর শেখ, বাজুয়া ইউনিয়নের চুনকুড়ি গ্রামের ফক্কার আলী। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সূত্রমতে, এ পর্যন্ত উপজেলা থেকে যুদ্ধাপরাধীদের নামে পৃথক পৃথক ৬টি মামলা আদালতে দায়ের হয়েছে। থানা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ১টি মামলা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে চলমান রয়েছে।
শান্তি কমিটির সদস্যরা হচ্ছে, বাজুয়া গ্রামের লালু বাদ্যে, কালিবাড়ির আদম আলী, বানিয়াশান্তা গ্রামের আয়নাল, খাাঁইল গ্রামের আব্দুল ওহাব সিদ্দিক, চালনার হাফেজ, সুতারখালির মফেজ সানা ও মোনসেফ গাজী।
১৭ রাজাকার নিহত: জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোঃ আবু জাফরের বর্ণনা মতে, দাকোপ উপজেলার বানিয়াশান্তা ইউনিয়নের আমতলা গ্রামে নিরঞ্জন গাইনের পরিত্যক্ত বাড়িতে রাজাকাররা ক্যাম্প স্থাপন করে। সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ভোর রাতে রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে এ যুদ্ধে নেতৃত্বে দেন মংলার অধিবাসী কমান্ডার স্টিফেন মৃধা। উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়ের পর দিন আনুমানিক দুপুর ১২টায় রাজাকাররা আত্মসমর্পন করে। স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাজুয়া বাজারঘাটে পশুর নদীর তীরে ১৭ জন রাজাকারকে হত্যা করে।
মুুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোঃ আবু জাফরের কাছে সংরক্ষিত তালিকা অনুযায়ী লাউডোব গ্রামের আধিবাসী সুরঞ্জন হাওলাদার নামক এক খ্রিস্টান যুবক রাজাকার বাহিনীতে নাম অর্ন্তভূক্ত করে।