খুলনায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেসবিহীন মোটরযান 

0
486

কামরুল হোসেন মনি:
খুলনার বিভিন্ন রুটে লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন বাস-মিনিবাসহ অন্যান্য যানবাহন বিভিন্ন রুটে বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। অপ্রাপ্ত বয়স্কও ছেলেরা এ পেশায় ঢুকে পড়েছেন। নগরীর বিভিন্ন সড়কে যত্রতত্রভাবে ইজিবাইক পার্কিং ও ফুটপাত থাকছে দখলে। এসব অনিয়মের কারণে দিনকে দিন সড়কে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ চালকের ভারি যানবাহন চালাবার লাইসেন্স নেই।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) খুলনা কার্যালয় এর সূত্র মতে, ২০১৮ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বাস-মিনিবাস, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, মিনি ট্রাক, মোটরসাইকেল, জিপ, কার্গো ট্রাক, অটোটেম্পু, অটোরিক্সা (থ্রি হুইলার),  মোটরসাইকেলসহ বিআটিএর আওতাধীন ৭১টি বিভিন্ন ধরনের মোটরযানের বিপরীতে রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরযানের সংখ্যা ৮২ হাজার ৫৯৭টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যানবাহনের মধ্যে মাইক্রোর ১৫৫টি, ট্যাক্সি ক্যাব (থ্রি হুইলার) ২৪০টি, জিপ ১২৩টি, মিনি ট্রাক ৩১৭টি, মোটরসাইকেল ৬৭ হাজার ৫৩৭টি, কার (সেলন) ১ হাজার ৬৮৮টি, কার (হাতব্যাক) ১১৫, কার্গো ট্রাক ১৯৫টি, ট্রিপার (বালির মিনি ট্রাক) ৩২৪টি, মিনিবাস ৮২১টি, মিনিবাস (ছোট), মিনিবাস (মিডিয়াম) ১৮৬টি, মিনিবাস (লার্জ) ১৪৩টি, অটোটেম্পু ৪৫৬টি বিআরটিএ’র রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরযান রয়েছে। এর বাইরেও রয়েছে অসংখ্য রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেসবীহিন বাস-মিনিবাসসহ অন্যান্য মোটরযান।
জানা গেছে, অনেক পরিবহণ মালিক ক্ষমতা অপব্যবহার করে একটি রুটি পারমিট দেখিয়ে আরও কয়েকটি বাস রুট পারমিট ছাড়াই চলাচল করছে। খুলনায় কতগুলো রেজিস্ট্রেশনবিহীন বাস-মিনিবাস ও রুট পারমিট ছাড়াই চলাচল করছে এমন পরিসংখ্যান নেই খুলনা বিআরটিএতে। ফলে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই রাস্তায় চলাচল করছে এইসব যানবাহনগুলো। সড়কে বিভিন্ন রুটে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ অবৈধভাবে চলাচল করা এসব যানবাহন আটক করলেও টাকার বিনিময়ে পরে ছেড়ে দেওয়ার নজির রয়েছে। রেজিস্ট্রেশনবিহীন ও ফিটনেস ছাড়া যানবাহন এবং অদক্ষ চালকের হাতে বাস-মিনিবাস চলাচলের পাশাপাশি ইজিবাইক ও থ্রি হুইলার যত্রতত্রভাবে যেখানে সেখানে পার্কিং ও পথচারিদের চলাচলের ফুটপাত অবৈধভাবে দখলে থাকাও দুর্ঘটনার একটি অন্যতম কারণ। মহানগরীতে নিয়ম-শৃঙ্খলা ছাড়াই চলছে ৩৫ সহ¯্রাধিক ইজিবাইক। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বিভিন্ন মোড়ে দিনের বেলায় প্রায়শ যানজট লেগেই থাকে। ঘটছে দুর্ঘটনাও।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) খুলনা কার্যালয় এর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) মোঃ আবুল বাসার সার্বিক বিষয়ে বলেন, জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে তাদেরকে নিয়ে অবৈধ মোটরযানের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কেউ যদি মাইক্রোবাসকে অ্যাম্বুলেন্স তৈরি করে শহরে চলাচল করে মোবাইল কোর্টের সামনে পড়লেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহন আটক হলে সরাসরি ডাম্পিংয়ে চলে যাবে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মিজানুর রহমান বৃহস্পতিবার দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, গত দুই দিনে মোটরযান চলাচলে বিভিন্ন অপরাধের কারণে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১৮ জনকে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার নগরীর অফিল গেটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৭ জনকে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ জরিমানা করা হয়। জেলা প্রশাসনের অপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাশেদুল ইসলাম, খুলনা বিআরটি এর মোটরযান পরিদর্শক মোঃ সাইফুর রহমান ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
খুলনা কেএমপি’র (ট্রাফিক) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধভাবে মোটরযান চলাচলের ক্ষেত্রে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া রোববার থেকে বিআরটিএ নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে একটি টিম বিভিন্ন সড়কে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (যানবাহন) লাইসেন্স অফিসার নগরীতে ১ হাজার ৯৬৩টি ইজিবাইক চলাচলের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিলো বলে জানান। এর পরে আর কোনো লাইসেন্স দেয়া হয়নি। নবনির্বাচিত মেয়র আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক দায়িত্ব গ্রহণের পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সড়ক দুর্ঘটনা অন্যতম কারণ ঃ
লাইসেন্স  ও  ফিটনেসবিহীন যানবহন এবং অদক্ষ চালকের হাতে বাস-মিনিবাস চলাচলের পাশাপাশি ইজিবাইক ও থ্রি হুইলার যত্রতত্রভাবে যেখানে সেখানে পার্কিং ও পথচারিদের চলাচল ফুটপাত অবৈধভাবে দখলে থাকায় দুর্ঘটনার একটি অন্যতম কারন। খুলনা সিটি কর্পোরেশন অসাধু কর্মকর্তার মাসিক মাসোহার নিয়ে এসব ফুটপাত দখলে থাকলেও জোরালোভাবে কোন অভিযান পরিচালনা করেন না। মাঝে মধ্যে অভিযান নামলেও দিনে উচ্ছেদ রাতে আবার দখলে চলে আসে। মহানগরী নিয়ম-শৃঙ্খলা ছাড়াই চলছে ৩৫ সহস্রাধিক ইজিবাইক। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বিভিন্ন মোড়ে দিনের বেলায় প্রায়শ যানজট লেগেই থাকে। ঘটছে দুর্ঘটনাও। জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় নগরীতে থ্রী হুইলার যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অননুমোদিত ইজিবাইক (৫ হাজারের মৌখিক অনুমোদন রয়েছে) চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত থমকে গেছে। এর আগেও কেসিসি ও কেএমপি কয়েকবার পদক্ষেপ নিলেও বন্ধ করতে পারেনি ইজিবাইক। গত ২০১০-১১ অর্থ বছরে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এক হাজার ৯৬৩টি ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সে লাইসেন্স ২০১২ সালে মাত্র একবার নবায়ন হয়েছে। তারপর থেকে মহানগরীতে বাড়তে থাকে ইজিবাইক। ২০১৪ সালে ইজিবাইক চলাচলের উপর হাইকোর্ট একটি রুল জারির প্রেক্ষিতে একই বছরে ৯ ও ১০ নভেম্বর এ দু’দিন চালকরা ধর্মঘট পালন করেছিল। এর প্রেক্ষিতে মিজানুর রহমান মিজান এমপির উদ্যোগে নগর আ’লীগ সভাপতি ও বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং ওই সময় সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি ও কেএমপি কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি আলোচনা করে পূর্বের এক হাজার ৯৬৭টিসহ মানগরীতে মোট পাঁচ হাজার ইজিবাইক চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৫ হাজার ইজিবাইক মহানগরীতে চলাচলের জন্য অনুমতির দেয়ার প্রস্তুতি কথা শোনা গেলেও বাস্তবে এখন চলছে ৩৫ সহস্রাধিক। নগরীতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সামনে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স। এ সব অ্যাম্বুলেন্স লক্কর-ঝক্কর মাইক্রোবাসকে কোন রকম রং-চং করে রাতারাতি বানিয়ে ফেলছে অ্যাম্বুলেন্স। নেই কোন তাদের অ্যাম্বুলেন্স চালানোর কোন পারমিট।