নিরাপদ সড়কের দাবিতে উত্তাল খুলনা

0
1085

* প্রাইভেটকারের ধাক্কায় ট্রাফিকসহ আহত ৭
* কেডিএ’র পাজেরোর চাপায় আহত ২
* স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গাড়ী রেখে চালক উধাও

এম জে ফরাজী : ঢাকায় আন্দোলনরত ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদ এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে পড়েছিলো খুলনা। নগরীর শিববাড়ী মোড়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সমাবেশ করছেন। যা বিকাল ৪টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন ধরণের প্লে-কার্ড। এতে বিভিন্ন শ্লোগান লেখা রয়েছে। দুপুর ১টা থেকে কর্মসূচি শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টা থেকে শিববাড়ি মোড়ে অবস্থান নিতে শুরু করে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের কারণে শিববাড়ির মোড়ের আশে পাশের সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, সড়কে একের পর এক মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। রাস্তায় নামলেই ভয়ে থাকতে হয়। এভাবে চলতে পারে না। নিরাপদ সড়কের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকবে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনা মেডিকেল কলেজ, সরকারি বিএল কলেজ, আযমখান সরকারি কমার্স কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, সরকারি মহিলা কলেজ, পাইনিয়র কলেজ, খুলনা পাবলিক কলেজ, সরকারি সুন্দরবন কলেজ, খুলনা পলিটেকনিক কলেজ, সাউথ হেরাল্ড ইংলিশ স্কুল, শহীদ মডেল স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে খুলনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত ৬ শিক্ষার্থী ও এক ট্রাফিক পুলিশকে আহত করেছে কাগজপত্র বিহীন প্রাইভেটকার। যার নম্বর হচ্ছে খুলনা মেট্রো-চ-১১-০২৭১। আহতরা হলেন- খুলনা সরকারি (খুলনা কমার্শিয়াল কলেজ) কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র মেহেদী হাসান আবু জর, বয়রা মডেল কলেজের ছাত্র মিহান, আগাখান স্কুল ৭ শ্রেণীর রাফিদ হাসান, মহসিন কলেজের ছাত্র রাজু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম জানা যায়নি শহীদ মো. জাহিদ নামের এক ছাত্র ও ট্রাফিক পুলিশের এটিএসআই আবু সোলাইমান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বেলা ৩টার দিকে টাইগার গার্ডেনের সামনের সড়কে সামনে হঠাৎ ছাত্রছাত্রীরা গাড়ির কাগজ চেক করতে গেলে, অতর্কিতভাবে গাড়িটি কাগজ না দেখিয়ে দ্রুত টান দেয়, এ সময় আহত হয় এক ট্রাফিক পুলিশসহ ৭জন।
তারা জানান, ময়লাপোতা থেকে একটি প্রাইভেটকার আসছিলো। গাড়ি থামিয়ে চালকের কাছে কাগজপত্র দেখতে চায় আন্দোলকারীরা। তিনি কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। চালক গাড়ি নিয়ে পালাতে চাইলে আবার বাঁধা দেয় শিক্ষার্থীরা। তখন চালক বেপরোয়াভাবে শিববাড়ি হয়ে যশোর রোড দিয়ে পালাতে গেলে গাড়ির ধাক্কায় হোচট খেয়ে পড়েন ৫ শিক্ষার্থী। আর ট্রাফিক পুলিশ রাস্তার পাশের তারকাটার উপর পরে। এসময় শিক্ষার্থীরা ক্ষীপ্ত হয়ে মটরসাইকেল নিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার ধাওয়া করে ফুলবাড়িগেট এলাকা থেকে গাড়িটিকে আটক করে। এ সময় গাড়ির চালক গাড়ি রেখে পালিয়ে যান।
এছাড়া বিকেল ৪টার দিকে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) একটি পাজেরো। যার নাম্বার খুলনা মেট্রো-ঘ ১১-০০৫৭। গাড়িটি শেখপাড়া তেতুলতলা মোড় এলাকায় আন্দোলনকারী দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেয়। শিক্ষার্থীরা হলেন খানজাহান আলী সাইন্স এন্ড টেকনোলজি কলেজের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্র এমডি জাহিদ হোসেন, সুন্দরবন কলেজের এইচএসসি পরিক্ষার্থী আজবার রাজ। তাদের তাৎক্ষনিকভাবে কিউর হোম ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিক্ষুদ্ধ জনতা গাড়িটিকে ভেঙ্গে ফেলে। পরে আহতদের প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, খুলনা কেডিএ নিউমার্কেটের সামনে দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (ডিএসসি) একটি গাড়ি আটকে দেয় আন্দোলনরত ছাত্ররা। চালককে গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চাইলে ড্রাইভার কাগজপত্র দেখানোর কথা বলে গাড়ি থেকে নেমে চালক পালিয়ে যায়। গাড়ীর নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঠ ১৩-৩৫২৪। কোন কাগজপত্র বা চালক না থাকায় শিক্ষার্থীরা গাড়িটির সামনে ভুয়া লেখে দেয়। এছাড়াও পুলিশের খাবার সরবরাহের গাড়ী ও একজন ম্যাজিস্ট্রেট এর গাড়ীর লাইসেন্স দেখাতে বললে চালকরা দেখাতে না পারায় গাড়ীতে শিক্ষার্থীরা ভুয়া লাইসেন্স লিখে দেয়।
নিরাপদ সড়কের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- বেপোরোয়া ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাতে স্পিড ব্রেকার দিতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে, থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবে না। বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট বয়সসীমা ছাড়া ড্রাইভার হিসেবে গাড়ী চালানো যাবেনা। জেব্রা ক্রসিং দিতে হবে, ট্রাফিক পুলিশের সচেতনতা, কাজের প্রতি দায়িত্ব বাড়াতে হবে। পরিবহনে যৌন হয়রানি কমাতে হবে এবং এটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে শাস্তি প্রদান করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায়, স্কুল, কলেজ হাসপাতালের সামনেও সকল প্রকার গাড়ীর স্পীড লিমিট থাকতে হবে। নিদির্ষ্ট সংখ্যক লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইজিবাইক ছাড়া খুলনার রাস্তায় ইজিবাইক চলবেনা। যেখানে সেখানে গাড়ী পার্ক করা যাবেনা। উচ্ছৃংখলভাবে মোটর সাইকেল আরোহীদের জরিমানা সহ শাস্তি প্রদান করতে হবে।