কোরবানির ঈদ এলেই ব্যস্ততা বাড়ে কামারশালার

0
742

ফকির শহিদুল ইসলামঃ
এমনিভাবে কোরবানির ঈদ এলেই ব্যস্ততা বাড়ে কামারশালার। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে খুলনা মহনগরীর কামারশালাগুলো ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীর । কোরবানির ঈদকে সামনে কামারশালাগুলো প্রস্তুতকৃত গরু জবেহ করায় প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র ও দা-বটির সান ব্যাপকহারে তৈরি করেন । সে লক্ষে কামারশালাগুলো তাদের পন্য তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত কাঁচা-পাঁকা লোহা বা ইস্পাত সংগ্রহ ও মজুদ রাখেন বস্তায় করে ভালোমানের কয়লা ।তারা কয়েকমাস ধরে দিন রাত পরিশ্রম করে কোরবানির ঈদে কাঁচা-পাঁকা লোহা দ্বারা তৈরি সান,বটি,দা,চাপাতী,ছোট কাটারী করেছে । গরুর হাট এলাকায় এ সব তৈজস পন্য নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছেন নগরী ও জেলার বিভিন্ন প্রান্তের লোহার শিল্পীরা । হাটে ও কামারপট্রি এলাকায় বিক্রিও বেড়েছে।

প্রায় ২৫ লক্ষ নাগরিকের এই খুলনা সিটির প্রধান লোহা-লক্কড়ের তৈরি তৈজসপত্র ও দা-বটির বাজার শেখপাড়া,বড় বাজার পেরি ফেরি, বৈকালী বাজার, দৌলতপুর মহসিন মোড়, খালিশপুর শিয়া মসজিদ, লিবার্টি হল মোড়
। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কামারশালা ও নিত্য ব্যবহার্য এইসব পণ্যের দোকান।

বছরজুড়ে তেমন কোনো খোঁজ-খবর না থাকলেও কোরবানির ঈদ এলেই ব্যাস্ততা বাড়ে কামারশালার। দূর থেকেই শোনা যায় কামারপট্টিতে হাতুড়ি পেটানোর শব্দ। নতুন চাপাতি, বটি, ছুরি, চাকু তৈরি ও পুরনোগুলোতে শান দিতে সময় কাটে কামারশিল্পীদের। আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে উৎপাদিত পন্য বিক্রির কর্মযজ্ঞে এখন ব্যাস্ত নগরীর কামারশালা ও হার্ডওয়ার দোকানীরা।

গতকাল খুলনা বড়বাজারসহ কয়েকটি কামারপট্টি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার যন্ত্রপাতি তৈরি ও বিক্রিতে ব্যাস্ততা বেড়েছে কামারশিল্পীদের। ঈদের বিক্রি শুরু হওয়ায় যন্ত্রপাতি তৈরিতে কারও যেনো দম ফেলার ফুরসত নেই।

কামারশালার লোকজন বলছেন, আগের মতো তাদের পণ্যের চাহিদা নেই। ঘর-গৃহস্থলীতে কর্মজীবী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে বিদেশী স্টেইনলেস স্টিলের ছুরি, কাঁচি ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে।

কর্মজীবী নারীদের ব্যাক পেইন কমাতে চিকিৎসকরা যে বটি ব্যবহারে অনুৎসাহিত করে ছুরি ব্যবহারের পরামর্শ দেন-তাও আজ অজানা নেই লোহা শিল্পীদের। তাছাড়া একটা জিনিস কিনলেও তো পরের বছর কিনতে হয় না, তাই ব্যবসায় একটা মন্দা ভাব এসেছে বলে জানালেন তারা।

তবে কামারপট্টির লোকদের ভাষ্য, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বছরে অনন্ত একবার জমজমাট ব্যবসা করেন তারা। এজন্য ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে কয়লার আগুনে রড গলানো, গ্লেয়ারিং মেশিনে বটি, দা, কুড়াল, চাকু ও ছুরিতে শান দেওয়া। আর হাঁতুড়ি দিয়ে লোহা পিটিয়ে পাইল করা, যন্ত্রপাতিতে বাট লাগানোসহ নানা কাজের ব্যাস্ততা।
বড়বাজারের কামারপট্টিতে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন শ্যাম কর্মকার। কয়লার আগুনে লোহা পোড়াতে পোড়াতেই খুলনাটাইমসের প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তিনি। বলেন, ‘সারা বছর মোটামুটি হলেও ঈদের কয়েকদিন খুব ভালো বেচা-বিক্রি হয়। ঈদ এলে আমাদের ব্যাস্ততাও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এবারের ঈদের বেচা-বিক্রি তেমন বেশ ভালো। শুধু খুলনা শহরে নয় খুলনার আশপাশ এলাকা থেকে অর্ডার আসছে। বিভিন্ন মাদ্রাসার জন্য অর্ডারের যন্ত্রপাতি তৈরি করে রাখছি। আশা করি ঈদের দিনেও ভালো বিক্রি হবে।

এবার কেনাকাটা ভালো হবে বলে আশা করছেন শেখ পাড়া বাজারের হাসেম এবং সুজিত। তারা বলেন, সম্ভবত এবার গরুর জোগান ও চাহিদা ভালো আছে। নির্বাচনের বছর হওয়ায় অনেকেই কোরবানি দিতে চাইবেন। এতে পশুর দাম ও পশু জবাই, মাংস কাটার যন্ত্রপাতির বিকিকিনি ভালো হচ্ছে।

কেবল নতুন পণ্য কিনতেই নয়, কামারশালাগুলোতে মানুষ আসছেন পুরোনো যন্ত্রপাতি শান দিতেও। বৈকালী বাজারের কামারশালায় চাপাতি ও ছুরি ধার দিতে এসেছিলেন মুজগুন্নির সজল ।

তার ভাষ্য, এখন খুলনার মানুষ তো গরু কন্ট্রাক্টে কাটতে দিয়ে দেয়। ওই সব মৌসুমী কসাইরা আবার খুলনার বাইরে থেকেও আসে। এদের সবাই ছুরি, চাপাতি, বটি নিয়ে আসে। তবে বাচ্চারা মজা করে মাংস কাটতে চায়। আর এজন্য ছুরি ও বটির প্রয়োজন হয়।

খুলনার বিভিন্ন কামারপট্টি ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি ওজনের চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। স্টান্ড বটি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫০০টাকা থেকে ৬০০ টাকা। সাধারণ বটির মূল্য আকারভেদে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।পশু জবাই করার ছুরির মাপ অনুযায়ী প্রতি পিছ ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, চামড়া ছোলার চাকু ৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, হাড় ভাঙার জন্য চায়নিজ কুড়াল ৬০০ টাকা ও বাংলাদেশি কুড়াল ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।