ক্লিওপেট্রা সবসময়ই নিজের সৌর্ন্দযের জালে পুরুষদের বিমোহিত করার জন্য বিখ্যাত

0
1383

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃনিজের সৌন্দর্যের জালে পুরুষদের বিমোহিত করার জন্য বিখ্যাত ক্লিওপেট্রা সবসময়ই আমাদের মনে স্থান দখল করে থাকে। সেক্সপিয়ারের নাটক থেকে শুরু করে হলিউড মুভি এমনকি বিলাসবহুল সাবানের দোকানে তার ছবি সৌন্দর্য, সম্পদ, নারীত্ব এবং ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ঐ সুন্দর কূটনৈতিক চেহারার পেছনে কত টাকা ছিল? বর্তমানকালের বিলিয়নিয়ারদের তুলনায় ক্লিওপেট্রা কি অনেক বেশি ধনী ছিল নাকি শুধু ধনী হিসেবে বিবেচিত হতো? আর অন্যান্য মিশরীয় রাজাগণ বর্তমান সম্পদশালীদের তালিকায় কততম স্থান লাভ করবে?

ইতিহাস 
ইতিহাস

ক্লিওপেট্রা ইতিহাসের সেরা এবং সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব যিনি রাজনৈতিক সুযোগসুবিধা পেতে তার সৌন্দর্য ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানোর জন্য বিখ্যাত ছিলেন। আর ইতিহাসে ক্লিওপেট্রা  প্রেমিকা এবং যোদ্ধার চেয়ে একজন দার্শনিক হিসেবে বেশি পরিচিত, এবং তার মৃত্যুর চারশ বছর পর একটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে ক্লিওপেট্রার মূর্তি স্থাপিত হয় যাতে সাব-সাহারান তীর্থযাত্রীরা উত্তরদিক থেকে মিশরে যাবার সময় তাকে শ্রদ্ধা জানাতে পারে। কিছু ঐতিহাসিকদের মতে তিনি অনেক সুন্দর ছিলেন আবার অন্যরা দাবি করেন যে তিনি বরং অনেক সাধারণ ছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন যে তিনি যুদ্ধের জন্য ক্ষুধার্ত ছিলেন আবার অনেকের মতে তিনি সুপণ্ডিত ছিলেন। কিন্তু একটি বিষয়ে সকল ঐতিহাসিকরা একমত- ক্লিওপেট্রা অত্যন্ত সম্পদশালী ছিলেন।

ক্লিওপেট্রার জন্ম 
ক্লিওপেট্রার জন্ম

ম্যাশেডোনিয়াল রাজবংশে খ্রিষ্টপূর্ব ৬৯ সালে ক্লিওপেট্রার জন্ম হয়েছিল। এই রাজবংশটি খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ সালে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট এর মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে ক্লিওপেট্রার মৃত্যু পর্যন্ত মিশর শাসন করেছিল। ক্লিওপেট্রা তার শাসনামলে রাজনৈতিক জোট গঠন করেছিলেন এবং তাকে অত্যন্ত কমনীয় বলা হত। আর কাউকে আনন্দিত করার জন্য তিনি তার ব্যক্তিত্বকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে পারতেন। তার জীবনী উইলিয়াম শেক্সপীয়ারের নাটক এবং একটি ফিচার ফিল্মের বিষয়বস্তু হয়েছিল যাতে এলিজাবেথ টেলর অভিনয় করেন। আধুনিক দৈনন্দিন অনেক পণ্য ক্লিওপেট্রার নামে নামকরণ করা হয়েছে যেমন একটি জনপ্রিয় সাবান ব্র্যান্ড, একটি সুগন্ধি লাইন, মেকআপ,  মহিলাদের আঁটসাঁট পোশাক এবং মহিলাদের বুট।

ক্লিওপেট্রার শাসনামল 
ক্লিওপেট্রার শাসনামল

ক্লিওপেট্রার শাসনামলে মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভালো ছিল এবং বর্তমান সময়ের মান অনুযায়ী তিনি নিজে অকল্পনীয় সম্পদশালী ছিলেন। সেসময় মিশরীয় শিল্প সমৃদ্ধ ছিল গ্লাস, গম, লিলেন, তেল, প্যাপিরাস, আনগেন্টসসহ নানারকম পণ্যসামগ্রীতে- এবং এই সমস্ত জিনিসগুলোতে  মূলত রাজবংশীয়দের একচেটিয়া অধিকার ছিল আর তাই ক্লিওপেট্রা এই পণ্যসামগ্রীগুলো থেকে সরাসরি উপকৃত হত। আবার তার সব প্রজাগণ তাকে নির্দিষ্ট জিনিসপত্রের উপর নির্ধারিত পরিমাণ কর দিত। তাই পরোক্ষভাবে তিনি রাজকীয় পণ্যসামগ্রীর বাইরেও সমস্ত বাণিজ্য থেকে উপকৃত হতেন। এ থেকে আমরা গণনা করতে পারি যে মিশরের মোট উৎপাদিত দ্রব্যের প্রায় অর্ধেক যেত ক্লিওপেট্রার পকেটে এবং তার বার্ষিক নগদ আয় ছিল ১২৫০০ সিলভার ট্যালেন্ট।

ক্লিওপেট্রার শাসনামল

ক্লিওপেট্রার সময়ে একজন ধর্ম যাজকের প্রতি বছর গড় মজুরি ছিল ১৫ ট্যালেন্ট। সবচেয়ে ব্যয়বহুল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য খরচ হতে পারে ১ টি ট্যালেন্ট। সুতরাং বর্তমানকাল অনুযায়ী ক্লিওপেট্রা বিল গেটসের মত বিলিয়নিয়ার ছিলেন। একটি কনটেম্পোরারি ধনী তালিকায় ক্লিওপেট্রার অবস্থান ২২ নাম্বারে যা জন ডি.রকফেলারের কয়েক পয়েন্ট পিছনে কিন্তু নেপোলিয়ন এবং জে.পি. মরগানের আগে। একই তালিকায় দেখানো হয়েছে যে তার নিট আয় প্রায় ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সমমান যা মার্ক জাকারবার্গ এবং এলোনমাস্কের সম্মিলিত আয়ের প্রায় সমান। মানি ম্যাগাজিনের ঐতিহাসিক ধনী নারীদের তালিকায় ক্যাথেরিন দ্য গ্রেট আছেন ৭ নাম্বারে আর ক্লিওপেট্রা আছেন ঠিক তার এক স্থান উপরে।

হ্যাটসেপসাট 
হ্যাটসেপসাট

ক্লিওপেট্রা মিশরের প্রথম মহিলা শাসক ছিলেন না; তার আগে হ্যাটসেপসাট এসেছিলেন যিনি সোনার খনিতে বাজি ধরে বর্তমান টাকার মানের প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিলেন এবং তিনি প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি তামা, সোনা এবং মূল্যবান পাথরের বিশাল ভাণ্ডার তার নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। মানি ম্যাগাজিনে ইতিহাস অনুসারে মহিলা শাসক হিসেবে হ্যাটশেপসুপ বিশ্বের ৯ম ধনী নারী, যা ক্লিওপেট্রার চেয়ে কেবল দুই স্থান পেছনে।

তুতানখামেন 
তুতানখামেন

সমৃদ্ধ ও বিখ্যাত প্রাচীন মিশরীয় জনগণ উচ্চ ফ্যাশন, পার্টি, মদ এবং যৌনতার অবক্ষীয়মান সময়ে বাস করত এবং মৃত্যু দিয়ে তাদের পার্টি শেষ হত। সত্যিকার ধনীরা মৃত্যুর আগেই নিজেদেরকে মমিতে পরিণত করার ব্যবস্থা করে যেত (অমরত্ব প্রকৃত ধনীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল) এবং সমাধিতে সেসকল সম্পদশালী ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য লিপিবদ্ধ থাকত। ১৯২২ সালের নভেম্বরে রাজা তুতের সমাধিটি যখন খোলা হয়েছিল তখন তার মধ্যে অমূল্য স্বর্ণের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। ২০০৪ সালে সুইজারল্যান্ডে প্রদর্শনের জন্য যাওয়ার আগে সমাধি থেকে পাওয়া সামগ্রীগুলোর ৬৮০ মিলিয়ন ডলারের বীমা করা হয়েছিল। রাজা টুটানখামন অপেক্ষাকৃত অজানা এবং গৌরবহীন বালক রাজা হলেও বিভিন্ন রাজাদের সমাধিগুলোর সন্ধান মনে প্রশ্ন জাগায় – কত অমূল্য সম্পদ এবং ধনদৌলত সুপ্রসিদ্ধ রাজাদের সমাধিতে রাখা আছে?

ধনী রাজা আমেনহোটেপ 
ধনী রাজা আমেনহোটেপ

মিশরের রাজাদের মধ্যে সামরিক বুদ্ধি এবং চতুরতার জন্য  সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বাধিক প্রশংসিত রাজা ছিলেন দ্বিতীয় রামসেস। ইন্টারেস্টিংলি রামসেস কোন রাজকীয় বংশে জন্মগ্রহণ করেন নি কিন্তু তার পরিবারের রাজবংশের প্রতি বশ্যতার ফলে তিনি সিংহাসনে উপনীত হয়েছিলেন এবং মহান যোদ্ধা হিসেবে প্রশংসিত হয়ে ওঠেছিলেন। রামসেস ৯৬ বছর জীবিত ছিলেন এবং তার ২০০ জন স্ত্রী ও রক্ষিতা ছিল। রামসেসের ৬০ জন কন্যা ও ৯০ জন পুত্র ছিল, এবং তার নাম মিশরের বিভিন্ন প্রাচীন স্থানে লিপিবদ্ধ আছে। রামসেস বিভিন্ন সামরিক জিনিসপত্র এবং আনন্দ প্রাসাদ যার নাম “হাউস অফ রামসেস” দিয়ে নিজের শহর গড়ে তুলেছিলেন। তার ক্ষমতা এবং সম্পদ এতই শক্তিশালী ও বেশি ছিল যে খ্রিষ্টপূর্ব ১২১৩ সালে তার মৃত্যুর পরে মিশরের জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কারন সাধারণত এটা বিশ্বাস করা হত যে রামসেসের মৃত্যুতে পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে।  সুতরাং ক্লিওপেট্রা এবং অন্যান্য শাসকদের সম্পদের পরিমাণ কি আপনাদের অবাক করেছে? কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান !