সরকারের কঠোর বিধি-বিধানেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েই চলেছে

0
190

টাইমস ডেস্ক:
সরকারের কিছু কঠোর বিধি-বিধানের কারণে করোনা মহামারীর প্রথম দিকে এপ্রিল মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে ৬০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে আসে। এখন তা আবার ৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই (জুলাই-আগস্ট) আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। মূলত রেমিটেন্সে উল্লম্ফন, ব্যাংকের চেয়ে সুদের হার বেশি এবং সরকারি চাকুরেদের একটি অংশ সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে ঝোঁকাসহ কয়েকটি কারণেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে চলেছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কমাতে গত বছরের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একইসঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। পাশাপাশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরো কিছু কঠোর ব্যব¯’া নেয়ার ফলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমতে শুরু করেছিল। কিš’ এখন তা আবার বাড়ছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ল্য ধরেছিল। বিক্রি কমায় বছরের মাঝামাঝিতে এসে ওই ল্য কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিš’ জুন মাসে অস্বাভাবিক বিক্রির কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ অর্থবছর শেষে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কা বাংলাদেশে লাগতে শুরু করার পর গত এপ্রিলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে নেমে আসে। ওই মাসে মোট ৬৬১ কোটি ৭৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সুদ-আসল বাবদ শোধ করা হয় তার প্রায় দ্বিগুণ ১ হাজার ২৮৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তাতে নিট বিক্রি ছিল ৬২১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ঋণাত্মক। অর্থাৎ এপ্রিল মাসে যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল তার থেকে ৬২১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বেশি গ্রাহকদের সুদ-আসল বাবদে পরিশোধ করা হয়েছিল। মে মাসে ৩ হাজার ২২৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। সুদ-আসল বাবদ শোধ করা হয় ২ হাজার ৭৯৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৩০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। তার আগের অর্থবছরে নিয়েছিল ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ধার হয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বো”চ।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ার একটা কারণ প্রবাসী আয়ে অব্যাহত ঊর্ধ্বমুখিতা। কারণ অনেকেই বিদেশে সঞ্চয় ভেঙে দেশে সঞ্চয় করছে। আর করোনার মধ্যেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়ে কোনো অসুবিধা হয়নি। তাদের বড় একটি অংশই সঞ্চয়পত্র কিনছে। চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) জুলাই-আগস্টে ৭ হাজার ৪৫৫ কোটি ৫ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই অংক গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ের দ্বিগুণেরও বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে ৩ হাজার ৭১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩ হাজার ৫৪৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। আর আগস্টে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭৪৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা এক মাসের হিসাবে গত দেড় বছরের মধ্যে সর্বো”চ। এর আগে ২০১৯ সালের মার্চে ৪ হাজার ১৩০ কোটি ৭১ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। আর গত বছরের আগস্টে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৯৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ওই হিসাবে গত বছরের আগস্টের চেয়ে এবার আগস্টে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের পুরো সময়ে মোট ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল।
এেিক এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার শফিকুর রহমান জানান, ব্যাংকের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি। তাছাড়া ঋণ না দেয়ায় ব্যাংকে পর্যাপ্ত আমানত আছে। আমানত নিয়ে আগের মতো তেমন কাড়াকাড়ি নেই। পুঁজিবাজারও আজ ঠিক তো কাল বেঠিক। এসব কারণে মানুষ যা বিনিয়োগ করছে, সবই সঞ্চয়পত্রে। তাই এর বিক্রি বাড়ছে।