শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল কে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেন আ’লীগ ও অঙ্গসংগঠন

0
1500

সাইমুম মোর্শেদঃ

খুলনায় এলেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল। দুপুরে হেলিকাপ্টার যোগে শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল হ্যালিপ্যাড গ্রাউন্ডে এসে নামেন তিনি। এসময় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠন এর নেতাকর্মীরা তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেয়। পরবর্তীতে মোটর সাইকেল সোভাযাত্রা বহর নিয়ে খুলনাস্থ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান তিনি। বিকেলে দলীয় কার্যলয়ে এক বর্ধিত সভা করার কথা রয়েছে এই নেতার। ধারনা করা যাচ্ছে, আজকের বর্ধিত সভার মধ্য দিয়ে আসন্ন জাতীয় একাদশ নির্বাচনে শেখ জুয়েলের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হতে পারে।

এদিকে আলোচনা-সমালোচনা আর গুঞ্জনের মধ্য দিয়ে নিস্পত্বি হতে যাচ্ছে খুলনা-২ আসনে কে হতে যাচ্ছে নৌকার মাঝি। সারা শহর জুড়ে আসন্ন নির্বাচনে ‘নৌকা প্রতীকে’ ভোট প্রার্থনা জন্য বিশালাকৃতির বিলবোর্ডগুলোতে জুড়ে দেয়া প্যানায় আভাস দিচ্ছে পরিবর্তনের হাওয়া।দলীয় একাধিক সূত্রে মোটামুটি নিশ্চিত। একজন সাদামনের মানুষ হিসেবে পরিচিত, সদালাপি, সদা হাসিখুশি, মিডিয়া বান্ধব ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক গ্রুপের বিদায়ী সভাপতি শেখ সালাহউদ্দিন খুলনাবাসীর কাছে শেখ জুয়েল নামেই সমধিক পরিচিত।

খুলনা-২ নির্বাচনী এলাকাজুড়ে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলের ছবি সম্বলিত প্যানায় ছয়লাব হলেও এখনো গন মানুষের মধ্য ধোয়াসা কাটেনি খুলনা সদরের এই আসনটিকে ঘিরে।

আবার অন্যদিকে, বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজানের সাথে দলীয় নেতা-কর্মীদের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। তিনি খুলনার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে বলেও দাবী খুলনার রাজনৈতিক মহলের এক অংশের। তারা দাবি করছেন খুলনার উন্নয়নে সাংসদ মিজানের কোন বিকল্প নাই।

খুলনা দুই আসন মূলত বিএনপি’র ঘাটি বলে ধারনা করা হলেও, বর্তমান পেক্ষাপট ভিন্ন আভাস দিচ্ছে। ভোট ব্যাংকখ্যাত এ আসনটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে প্রার্থী পরিবর্তনের আভাস বারংবার কৌতূহলী করে তুলছে নেতা-কর্মীদের। খুলনা-২ আসনে প্রস্তুতি গ্রহণে স্বয়ং দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোন ঘোষণা দেয়নি দলটি।

খুলনা ১৪ দলের সম্বয়ক ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনিও জনগনের কাছে আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ভোট প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ জুয়েলের প্যানায় ভোট প্রার্থনার দৃশ্যপট দেখে কৌতূহল নেতা-কর্মীরা। নেতাকর্মী সহ জনমনের প্রশ্ন, কে হচ্ছেন খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

 

 

সূত্রমতে, বর্তমানে খুলনা দুই আসনে ভোটার সংখ্যা খুলনা-২ (সদর) আসনের মোট ভোটার দুই লাখ ৯৪ হাজার ৮৯ জন। ১৯৭৩ সালের পর ৪০ বছরে আর কখনো খুলনা-২ আসনে বিজয় হয়নি আওয়ামী লীগের। ফলে মুসলিম লীগ-বিএনপি’র ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসনটি।

৪০ বছর পর গত দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান এখানে এমপি নির্বাচিত হন। আগামী সংসদ নির্বাচনে আসনটি তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ আসনটি হাতছাড়া করতে চায় না আওয়ামী লীগ। খুলনা বিভাগীয় শহরের সদর এ আসনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলম মঞ্জু এমপি নির্বাচিত হন। স্বাধীনের পর প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (১৯৭৩ সালে) এই আসনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ বারী। এরপর ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ আসনে জয়ের মুখ দেখেনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজনীতিতে এই আসনটির গুরুত্ব বুঝে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এই আসন থেকে নির্বাচিত অন্য সংসদ সদস্যরাও বিগত সময়ে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে এই আসনে জয়ী হন সাবেক বিএনপি’র নেতা প্রয়াত এড. শেখ রাজ্জাক আলী। তিনি ৯১-৯৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া আসনটি ছেড়ে দেয়া পর উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলী আসগর লবী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে নির্বাচিত নজরুল ইসলাম মঞ্জু দল সরকারে না থাকায় সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকলেও তাকে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক পদে দায়িত্ব দেয়া হয়।

দীর্ঘদিন পর ফিরে পাওয়া এ আসন হাতছাড়া করতে চায় না আওয়ামী লীগ। আর ৪০ বছর ধরে নিজের দখলে থাকা আসটি হারিয়ে বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে সেটি পুনরায় পুনরুদ্ধারের।

সোয়া তিন যুগ পর ফিরে পাওয়া খুলনা-২ আসনটি আগামী সংসদ নির্বাচনে ধরে রাখতে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র নজরুল ইসলাম মঞ্জু ৯০ হাজার ৯৫০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের মুহাম্মদ মিজানুর রহমান পেয়েছিলেন ৮৯ হাজার ২৮০ ভোট। ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র এক হাজার ৬৭০। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান।

আসনটি ধরে রাখার প্রত্যয়ে পুনরায় দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন তিনি। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে খুলনায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। কোনো ষড়যন্ত্র জাতির উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। দল মনোনয়ন দিলে অব্যাহত উন্নয়নে খুলনাবাসীর পাশেই থাকবো। মহানগর আওয়ামী লীগে কোন মতানৈক্য নেই বলে দাবি করেন তিনি।”

নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কেসিসি মেয়র তালুকতার আব্দুল খালেক বলেন, “দল যাকেই মনোনয়ন দেবে দেশ, দল ও জনগনের স্বার্থে তার পক্ষে নৌকার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কে মনোনয়ন পাইলো, আর কে পাইলেন না তা নিয়ে ভাবনার সময় নেই। সেই ভাবনায় পড়ে থাকলে স্বাধীনতা বিরোধীরা সুযোগ নেবে।”

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-২ আসনে প্রার্থী হওয়া সম্পর্কে সরাসরি কোন মন্তব্য করতে রাজি না হলেও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বলে দাবি করেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল। তিনি বললেন, “এখন কিছু বলতে পারবো না। দল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা দেবার পরই সব স্পর্ষ্ট হবে।” প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, “নেত্রী আমাকে খুলনা-২ আসনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সময় হলে সকলকেই জানানো হবে; খুলনাবাসীর সাথেই আছি।

এখন পর্যন্ত খুলনা-২ আসনে দুই দলের যে দুজন সম্ভাব্য প্রার্থীকে আগামী নির্বাচনে চাইছেন মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা, দুজনেরই রয়েছে নিজ নিজ দলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। দুজনের কথা ওপরে বলা হয়েছে- আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান মিজান ও বিএনপির নজরুল ইসলম মঞ্জু।তবে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে আওয়ামীলীগের মধ্য।শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল হতে পারে খুলনা দুই আসনের আওয়ামী শ্বাসনকর্তা।সেক্ষেত্রে লড়াইটা হবে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্যতম সদস্য বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ জুয়েলের সাথে।