রায়ে সন্তুষ্ট নিহত পুলিশ সদস্য সালাউদ্দিন ও রবিউলের পরিবার

0
363

খুলনাটাইমস: গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার মামলার বিচার শেষে সাত আসামির মৃত্যুদ- ও একজনকে খালাস দিয়ে আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ওই ঘটনায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন খান ও রবিউল করিমের পরিবারের সদস্যরা। গতকাল বুধবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে রায় ঘোষণার পর তা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (সিনিয়র এসি) রবিউল করিমের মা করিমন নেসা। করিমন নেসা বলেন, আমি তো আর আমার সন্তানকে ফিরে পাব না। দীর্ঘ তিনটি বছর এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ যে রায় হলো, এতে আমি সন্তুষ্ট। আমি এই রায় দ্রুত কার্যকর (হওয়া দেখতে) চাই। কারণ এই সন্তানই ছিল আমার একমাত্র মাথার ছায়া। তাকে হত্যা করার পর আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। তারপরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসনকে আমি অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। কারণ আমাদের বিপদের সময় তারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। এদিকে দুপুরে রায় ঘোষণার পর সাভারে নিজ কর্মস্থল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রবিউল করিমের স্ত্রী উম্মে সালমা বলেন, রবিউল জঙ্গিবাদ দমন করতে গিয়ে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে পুরো পরিবারের শোকের ছায়া নেমে এলেও দেশের মানুষ যে শ্রদ্ধায় এখনো তাঁকে স্মরণ করছে, তাতে আমাদের পুরো পরিবার গর্বিত। স্বামীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া চান উম্মে সালমা। সিনিয়র এসি রবিউলের স্ত্রী উম্মে সালমা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শাখায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রয়াত পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল করিমের ছোট ভাই সামছুজ্জামান শামস আদালত চত্বরে বলেন, এই রায়ে আমি খুশি। রায় শুনেই আমার চোখের সামনে আমার বীর ভাইয়ের লাশের ছবি ভেসে উঠেছে। রায়ে যাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, এরাও হয়তো মারা যাবে। লাশ হবে। কিন্তু আমার ভাই আর এদের মধ্যে পার্থক্য হলো, আমার ভাইকে জাঁতি বীর হিসেবে স্মরণ করবে আর এদেরকে জঙ্গি বা অপরাধী হিসেবে ঘৃণাভরে স্মরণ করবে। শামস আরো বলেন, আমার ভাইকে হত্যা করার পর, আমাদের ভেতরে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল সেটা হয়তো কিছুটা কমবে। কিন্তু ভাই তো আর ফিরে আসবে না। একজনকে আদালত খালাস দিয়েছেন। আদালত হয়তো বুঝেই দিয়েছেন। সব মিলিয়ে আমরা এই রায়ে খুশি। শামস সাংবাদিকদের বলেন, কাক্সিক্ষত রায় আমরা পেয়েছি। এমন রায় আমাদের সবার কাম্য ছিল। এটা দৃষ্টান্তমূলক রায়।
সন্তুষ্ট নিহত ওসি সালাউদ্দিনের পরিবার
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে তৎকালীন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিহত সালাউদ্দিন খানের পরিবারের সদস্যরা। একই সঙ্গে দ্রুততম সময়ে এ রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন তারা। গতকাল বুধবার রায় ঘোষণার পর নিহত সালাউদ্দিনের পরিবারসহ এলাকাবাসী সন্তোষ প্রকাশ করেন। গোপালগঞ্জের সন্তান নিহত সালাউদ্দিন খানের বড় ভাই রাজি উদ্দিন খান ও ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী খান রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনায় আটকেপড়াদের উদ্ধার করতে যান আমাদের ভাই বনানী থানার তৎকালীন ওসি সালাউদ্দিন খান। জঙ্গিদের ছোঁড়া গ্রেনেডে আমাদের ভাই নিহত হন। আমরা ন্যায্য বিচারের আশায় দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিলাম। আজ রায় ঘোষণা করা হয়েছে। সাতজন আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একজনকে খালাস দিয়েছে। এ রায়ে আমরা খুশি। তবে খালাসপ্রাপ্ত আসামির বিরুদ্ধে আপিল করাসহ সাজাপ্রাপ্তদের রায় উচ্চ আদালত বহাল রাখবে এবং দ্রুততম সময়ে এ রায় কার্যকর করা হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
তিন বছর আগে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় ২২ জনকে হত্যার দায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। সর্বোচ্চ সাজার আদেশ পাওয়া জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ, আবদুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ, মামুনুর রশিদ রিপন ও খালাস পাওয়া মিজানুর রহমান এ সময় কাঠগড়ায় ছিলেন। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা ঢোকার পর সেখানে অভিযানে গিয়ে হামলায় নিহত হন সে সময় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল। রবিউলের ছোটভাই বলেন, এ রায় আমাদের সবার কাম্য ছিল। এটা শুধু আমাদের পরিবারের নয়; বাংলাদেশের মানুষ ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিল এমন একটা শাস্তির, এমন একটা দৃষ্টান্তমূলক রায়, যা বিদেশের দরবারে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, পাশাপাশি অনেক বিদেশি নাগরিক ছিলেন, যারা আত্মীয়স্বজন হারিয়েছিল। তারাও অপেক্ষায় ছিল এমন একটি রায়ের। সব দিক থেকে সবার কাক্সিক্ষত রায় আমরা পেয়েছি ৭ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ এর মাধ্যমে। বাকি একজনের ক্ষেত্রে আমি আশাবাদী রাষ্ট্রপক্ষ বাদী; তারা বিচার বিবেচনায় নিয়ে প্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার যেটা প্রয়োজন; তা নেবে।