দাকোপে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

0
837

নিজস্ব প্রতিবেদক,খুলনাটাইমস :
খুলনার দাকোপ উপজেলার শ্রীনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার মণ্ডলের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক বলেছেন, ‘স্বর্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে’।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুনভাবে পরিষদ গঠনের তফসিল ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সেখানে নির্বাচন হয়ে নতুন কমিটি সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু পরিষদের সাবেক সভাপতি সমরেশ রায় ও প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশ থাকায় পূর্বের পরিষদ পুনর্বহাল রাখতে নানা টালবাহানা শুরু করেন বলে নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের অভিযোগ।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ১৯৮১ সালে প্রশান্ত কুমার মণ্ডল সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন শ্রীনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। তিনি দীর্ঘ সাতবছর পরে পদোন্নতি পেয়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আসেন। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে স্কুলে ঠিকমত উপস্থিত না হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা, ভর্তি ফি, সেশন ফি, জেএসসি-এসএসসি পরিক্ষার রেজিষ্ট্রেশন ফি ও ফরম পূরণে যশোর বোর্ডের নির্ধারিত ফি থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করেন।

কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে খুলনাটাইমসকে  বলেন, এবার মাধ্যমিক পরিক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত ফরম পূরণে ফি ১ হাজার ৭৩৫ টাকা এবং মানবিক ও বানিজ্য বিভাগে ১ হাজার ৬৪৫ টাকা থাকলেও ওই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ নেয়া হয়েছে ২ হাজার ২শত টাকা। আর মানবিক ও বানিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ১শত টাকা। এছাড়া অনিয়মিত শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে। তারা আরো বলেন, প্রধান শিক্ষক কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলে আত্মসাৎ করে থাকে। তাছাড়া প্রধান শিক্ষকের পরিবারের সকল সদস্য দীর্ঘদিন ভারতে বসবাস। এমনকি তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিক। ভারতের বারাসাত (সাধারণ) বিধানসভা নির্বানের তালিকায় ৯৯৯ সিরিয়ালের আরকিউএল ১২২৩৭৫৯ নম্বরে ভোটার হিসাবে তার নাম অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন।

স্থানীয় তন্ময় মণ্ডল অভিযোগ করে বলেন, স্কুলের কোনো শিক্ষক, কর্মচারি নিয়োগ হলে সেখানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বানিজ্য করে থাকে। তিনি আরও বলেন, অর্থের বিনিময় তার নিজের ভাইয়ের ছেলে ওই স্কুলে দফতরি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কথা থাকলেও হয়নি।
নবনির্বাচিত কমিটির অভিভাবক সদস্য সঞ্চয় মণ্ডল বলেন, স্কুলের নামে সরকারি, বেসরকারিভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা বরাদ্দ হলে সেসব টাকার দৃশ্যমান কোনো কাজ হয় না। প্রধান শিক্ষক কাওকে না বলে স্কুল তহবিলের টাকা আত্মসাৎ করে থাকে।

অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় কিছুটা নিশ্চিত করে পরিচালনা পরিষদের নবনির্বাচিত সভাপতি প্রসেনজিৎ রায় বলেন, প্রধান শিক্ষকের পরিবার ভারতে থাকে। তিনি প্রায় সময় ভারতে যাতায়াত করেন। তিনি আরো বলেন, আমরা অভিভাবকদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আজও ক্ষমতায় যেতে পারেনি।

ভারতের নাগরিক অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার মণ্ডল খুলনাটাইমসকে  বলেন, তার স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়ে স্ত্রী, সন্তান ভারতে বসবাস করে। তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে কোথায় কি কাজ হচ্ছে তা তিনি জানেন না। আর পরিক্ষার্থীদের ফরম পূরণে জনপ্রতি ১ হাজার ৯শত টাকা ফি আদায় করা হয়। এছাড়া স্কুলের সকল কার্যক্রম সাবেক সভাপতি পরিচালনা করে থাকেন। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক দাবি করে বলেন তার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ উঠেছে সব মিথ্যা।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সোহেল হোসেন মুঠোফোনে জানান, ওই স্কুলের নির্বাচন সম্পন্ন করে ব্যবস্থাপনা কমিটি বৈধ্য ঘোষণা দিয়ে শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল। পরে নবনির্বাচিত কমিটির বিরুদ্ধে বোর্ডে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এখন বোর্ড কি করেছে তা জানা নেই। তিনি আরো বলেন, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে অভিযোগকারিরা একটি লিখিত অভিযোগ দপ্তর বরাবর করলে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অভিযোগ সম্পর্কে এখনো কোনো ডকুমেন্ট হাতে পাইনি।