ডুমুরিয়ার ভদ্রা চরে সামাজিক বনায়ন নজর কেড়েছে দর্শণার্থীদের

0
320

এস রফিক, ডুমুরিয়া:
ডুমুরিয়ায় সামাজিক বনায়নের দিকে ঝুঁকে পড়ছে বেশীর ভাগ মানুষ। সামাজিক বনায়ন একদিকে আর্থিক অন্যদিকে জলবায়ূর বিরুপ প্রভাব মোকাবেলায় অন্যতম সহায়ক। ইট পাথরের নগরী, ইটভাটা ও কল কারখানার কালো ধোঁয়ায় বাতাসে যখন কার্বন-ডাই অক্সাইডের আগ্রাসন, ঠিক তখন বেঁেচ থাকতে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য-জীব বৈচিত্র রক্ষার্থে বনায়নের কোন বিকল্প নেই। এমনটি বুঝে বনায়নের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে সাধারন মানুষ। কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ এটি না বুঝে কখনও কখনও বনায়নের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এজন্য আইনের শাসন ও জনসচেতনতার বিকল্প নেই বলে অভিমত সুশীল সমাজের।
উপজেলা সামাজিক বনায়ন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সাল থেকে ডুমুরিয়ায় সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতেই এ কার্যক্রমের প্রতি জনগনের তেমন আগ্রহ ছিলনা বললেই চলে। সম্প্রতি বনায়ন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান ও মানব স্বার্থে এর উপকারিতা অপরিহার্য এমনটি বুঝে এর প্রতি ঝুঁকে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার সাধারন মানুষ। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেঁড়িবাঁধের দু’পাশ ও খননকৃত ভদ্রানদীর চরে গড়ে উঠেছে শতাধিক বনায়ন। এরমধ্যে বেশীর ভাগ বনায়ন সৃষ্টি হয়েছে সবুজের সমারহ ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। এমনি বনায়নের মধ্যে একটি উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়নের শ্যামল বনায়ন নামের একটি বনায়ন। যাহা বাগমারা মসজিদ হতে বামুন্দিয়া অভিমূখে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে অবস্থিত। যেখানে ঝাউ, আকাশমনি, সুন্দরী, কৃষ্ণচূড়া, তেঁতুল, নারকেল, কদবেল সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ জাতীয় ১৪ হাজার বৃক্ষের চারা রোপন করা হয়েছে। মাত্র দু’বছর বয়সে বাগানটিতে ঘটেছে সবুজের বিপ্লব। আর ভৌগলিক অবস্থানে ওই বনায়নের একধারে খননকৃত ভদ্রানদী, এর কুল ঘেঁষে শ্যামল বনায়ন আর একপাশে নদী খননের বিশাল মাটির স্তুপ। যা দেখলে মনে হয় পাহাড়ের গা ঘেঁষা এক সবুজের সমারহ। এক পড়ন্ত বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুর দুরন্ত থেকে আগত প্রকৃতি প্রেমি ও ভ্রমন পিপাসু একাধিক নারী-পুরুষ জুটি বেঁধে বসে আছে বনায়নের ভিতর। দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন বেগম সুফিয়া কামালের “ঝাউ শাখে যেথা বনলতা বেঁধে হরষে খেয়েছি দোল” এমনই স্মৃতি গাঁথা কোন এক দৃশ্য। এ নিয়ে কথা হয় মাগুরখালী প্রাইমারী শিক্ষক প্রসেন বিশ্বাস, ছাত্র মহিতোষ মল্লিক, রাহুল মল্লিক, উত্তম বিশ্বাস, রনজিত বিশ্বাস, রাব্বি শেখ, রত্মা গাইন, দিপালী মল্লিক, ইসমাইল সরদারসহ একাধিক আগন্তক’র সাথে। তারা একই সুরে সুর মিলিয়ে বলেন, মনোমুগ্ধকর এ বনায়নে আসলে আমরা প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাই। গোধূলী লগ্নে মাটির স্তুপে বসলে মনে হয় যেন পাহাড়ের চূড়ায় বসে সবুজ বৃক্ষের ফাঁক দিয়ে শুনতে পাই নদীর কল কলনি শব্দ অন্যদিকে দেখতে পাই সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। যে কারনে শুধু আমরা নই বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত দর্শণার্থীরা এখানে ভিড় জমায়। আবার কেহ কেহ এটাকে পিকনিক কর্ণার হিসেবে বেছে নিয়েছে এ বনায়নটি। এখানে সরকার নজর দিলে এটি একটি মিনি পার্ক বা দর্শণীয় স্থান হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এ নিয়ে কথা হয় উপজেলা বন কর্মকর্ত্ ামোঃ ফোরকানুল আলমের সাথে। তিনি জানান বনায়নের সভাপতি আলমগীর হোসেন সহ সকল সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ও উপজেলা বন অধিদপ্তরের সার্বিক সহায়তায় উন্নতমানের ১৪ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের চারা রোপন করা হয়। যা অনেক প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে মাত্র দুই বছর বয়সে বেড়ে উঠে সবুজের বিপ্লব ঘটিয়েছে।এটি একদিকে আর্থিক অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য-জীববৈচিত্র রক্ষায় সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।