খুলনা মহানগরীতে সয়েল টেস্ট ও পাইলিংয়ে দু’টি ফার্মের আধিপত্য : জিম্মি নগরবাসী

0
495

নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা মহানগরীতে গৃহ নির্মাণে সয়েল টেস্ট ও পাইলিংয়ের অধিকাংশ কাজ দু’টি প্রতিষ্ঠান কৌশলে উচ্চ রেটে বাগিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠান দু’টি হচ্ছে প্রিমিয়ার বোরিং এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স এবং সোহেল সয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং। ফলে এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের কাছে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। আর এই দু’টি প্রতিষ্ঠানেরই মালিক খোদ কেডিএ’র অথরাইজড কর্মকর্তা মো: মুজিবর রহমান।
কেডিএ’র তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬১ সালের মাস্টার প্লান অনুযায়ী ১৮১ দশমিক ৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত হয় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। এরপর সময়ের সাথে চাহিদা অনুযায়ী বেড়েছে এর অধিক্ষেত্র। ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অধিক্ষেত্র বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২৪ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার। যার উত্তরে নওয়াপাড়া পৌরসভার উত্তর সীমানা, দক্ষিণে মোংলা পৌরসভার দক্ষিণ সীমানা, পূর্বে রূপসা ও রামপাল উপজেলা, পশ্চিমে কৈয়া বাজার ও পশুর নদী। অধিক্ষেত্র বৃদ্ধির সাথে সাথে ওই সব এলাকায় নিত্য নতুন মানুষের বসতি গড়ে উঠছে। এসব বসতিকে কেন্দ্র করে নির্মাণ হচ্ছে অসংখ্য ঘর-বাড়িসহ নানা স্থাপনা। এসব গৃহ ও স্থাপনা নির্মাণে কেডিএ’র কাছ থেকে প্লান অনুমোদনে প্রতিমাসে গড়ে অন্তত তিন শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। এরপর অনুমোদনের জন্য অথরাইজড শাখায় যেতে হয়।
অভিযোগ আছে, আবেদনকারী অথরাইজড শাখায় যোগাযোগ করলে শর্ত জুড়ে দেয়া হয় সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার ৫নং রোডস্থ ৫৭নং বাড়িতে অবস্থিত প্রিমিয়ার বোরিং এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স এবং সোহেল সয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম থেকে সয়েল টেস্ট ও পাইলিং করাতে হবে। কেউ কথা না শুনলে প্লান অনুমোদনে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই অনুমোদন নিতে বাধ্য হয়ে গ্রাহকরা ওই ফার্ম থেকে কাজ করতে রাজি হন। কেডিএ’র প্লান অনুমোদনের নথিগুলো খতিয়ে দেখলে তার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে সূত্রটি জানায়। এখানে মালিকদের জিম্মি করে সয়েল টেস্টে ১০০ ফুটে ১৩ হাজার টাকা এবং পাইলিং-এ ফুট ১৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অন্য ফার্মে এ সয়েল টেস্টে ১০০ ফুট মাত্র ৮ হাজার টাকা এবং পাইলিং-এ ফুট মাত্র ১১৫ টাকা নেয়া হয়। তবে নগরবাসী উক্ত অফিসের চাপে পড়ে অনেকটা অসহায় হয়ে বাড়তি টাকা গুণতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রিমিয়ার বোরিং এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স এবং সোহেল সয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম অফিস সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার ৫নং রোডস্থ ৫৭নং বাড়িতে। বর্তমানে ওই ফার্মে ২০ লাখ টাকার ৮টি পাইলিং মেশিন, ১ কোটি টাকার অটোমেটিক ম্যাকানিক্যাল পাইলিং মেশিন, ২০ লাখ টাকার ডিজিটাল সয়েল টেস্ট, ১০ লাখ টাকার ইনগ্রেটিভ টেস্ট মেশিন, ২০ লাখ টাকার পাইল লোড টেস্ট মেশিন, ২০ লাখ টাকার ২টি ডিজিটাল সার্ভে মেশিন, ২০ লাখ টাকার হাইডো গ্রাফিক্স সার্ভে, ১ লাখ টাকার লেভেল সার্ভে ও ১৫ লাখ টাকার কনক্রিট স্ট্রেন্থ চেক মেশিন রয়েছে।
নগরীর কয়েকজন বাড়ির মালিক জানান, প্লান অনুমোদনে আবেদনের পর অথরাইজড শাখায় যোগাযোগ করলে প্রিমিয়ার বোরিং এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স এবং সোহেল সয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম থেকে সয়েল টেস্ট ও পাইলিং করতে বলা হয়। কথা না শুনলে প্লান অনুমোদনে গড়িমসি করা হয়। তারা আরও জানান, নগরীর লবণচরা মৌজায় গৃহ নির্মাণ আইন লংঘন করে একতলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করায় বাড়ির মালিককে নোটিশ দিয়ে অনৈতিক সুবিধার দাবি করা হচ্ছে। শুধু লবণচরা না সংস্থাটির অথরাইজড শাখায় নিয়োজিতদের এ ধরনের কর্মকান্ডের অভিযোগ নানা স্থান থেকে প্রায়ই শোনা যায়।
এই দুই প্রতিষ্ঠানের অফিসে গেলে সাইট ইঞ্জিনিয়ার জামাল খন্দকারের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই অফিসে আগমন মালিক মো: মুজিবর রহমানের সাথে। তাকে দেখেই চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে সোহেল ও জামাল সালাম দিচ্ছেন। এ সময় জামাল পরিচয় করিয়ে দেন আমাদের মালিক মুজিবুর রহমান সাহেব। কিছুক্ষন বসে জামালকে বাহিরে ডেকে নিয়ে কিছু একটা বলে অপেক্ষমান কেডিএর গাড়িতে উঠে চলে যান। এরপর জামাল খন্দকার অফিসে ঢুকে বলেন, দেখছেন স্যার কত বিজি থাকে। স্যার দুপুরের খাবার খেতে এসেছে এখন আবার কেডিএর কর্মস্থলে চলে গেলেন। আমাদের স্যারই প্লান অনুমোদন করেন। আপনি কোন লেভেলের কাজ করবেন বলেন কোন সম্যসা হবে না। এ সময় প্রিমিয়ার বোরিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং একটি ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে বলেন আবার যখন আসবেন প্রয়োজনে ফোন দিয়েন।
বেশি রেটের কথা স্বীকার করে সোহেল সয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মের ম্যানেজার সোহেল বলেন, কাজ বাগিয়ে নেয়ার বিষয়টি অসত্য। তবে তার ফার্মের কাজের মান ভালো বলেই লোকজন বেশি আসে।
এ বিষয়ে কথা হয় টেকনোর মো: শাহ আলমের সাথে, তিনি বলেন আমরা দির্ঘদিন যাবত কেডিএকে রাজস্ব দিয়ে কাজ করে আসছি। অথচ দেখা যাচ্ছে কেডিএর অনুমোদন নেই এমন সব প্রতিষ্ঠানের নামে সয়েল টেষ্ট রিপোর্ট দাখিল করা হচ্ছে। আমাদের প্রতি মিটিং এ দুই একটি প্লান অনুমোদন হয় তবে অথারাইজড অফিসারের প্রতিষ্ঠান হলে কোন কথা নাই সব অনুমোদন হয়ে যায় । আমাদের প্লান পাশ করতে তিনি গরিমসি করা সত্বেও পাশ হয় তবে সময় নিয়ে । প্রিমিয়ার বোরিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা সোহেল সয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যাপারে তেমন একটা সময়ের প্রয়োজন পড়েনা ।
সুজন-এর জেলা সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানে সয়েল টেস্ট ও পাইলিং করতে বাধ্য করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। অন্যদিকে পরিকল্পিত নগর গড়তে ইমারতের নিয়ম বহির্ভূত অংশ ভেঙে ফেলতে হবে। তাই পরিকল্পনা বস্তবায়নের স্বার্থে নোটিশ দিয়ে সুবিধা নেয়া বা হয়রানি বন্ধ হওয়া উচিত।
কেডিএ অথরাইজড অফিসার মো: মুজিবর রহমান বলেন, বলেন, প্রিমিয়ার বোরিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স এখন সোহেল সয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং নামে চলছে। আমিই মালিক মো: মজিবুর রহমান বলছি কি দরকার বলেন,তাকে প্রশ্ন করা হয় ম্যানেজার সোহেল এর সাথে কথা বলবো নাকি আপনার সাথে তখন তিনি বলেন আমার সাথে বলেন ,প্রশ্ন করা হয় আপনি কেডিএর অথারাইজড অফিসার হয়ে কেডিএর তালিকা ভুক্ত না হয়ে প্রিমিয়ার বোরিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্সর নামে প্রতিষ্ঠানটি দির্ঘদিন যাবত কেডিএর রাজস্ব ফাকি দিয়ে কিভাবে ব্যাবসা পরিচালনা করছেন। এমন প্রশ্নে তিনি জানতে চান আপনি কে, সাংবাদিক পরিচয় শোনার পরে তিনি সব কিছু অস্বিকার করে সঙ্গে সঙ্গে সংযোগটি কেটে দেন। পরবর্তীতে কয়েকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি ।