টাইমস ডেস্ক :
বর্ণাঢ্য অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে পা রাখতে যাচ্ছেন বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। গত ৩০ বছরে এই প্রথম কোনো পোপ বাংলাদেশ সফরে আসছেন। পোপ দ্বিতীয় জন পল ১৯৮৬ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমার সফর শেষে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবেন। বিমানবন্দরে পোপকে অভ্যর্থনা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ সময় পোপকে ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাগত জানানো হবে এবং দেয়া হবে গার্ড অব অনার।
বিমানবন্দর থেকে পোপ ফ্রান্সিস সরাসরি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। তার আগমন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ধোয়া-মোছা থেকে শুরু করে সেখানে আবার নতুন রং করা হয়েছে। পোপের আগমন উপলক্ষে ২৩ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত স্মৃতিসৌধে জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া স্মৃতিসৌধের মূল ফটকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও ধর্মীয় গুরু পোপ ফ্রান্সিসের ছবি টাঙানো হয়েছে। পোপ বীর শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন এবং শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করবেন। এ ছাড়া পোপ ফ্রান্সিসকে তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনারও দেয়া হবে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি পরিদর্শন বইয়ে সই করবেন। স্মৃতিসৌধ এলাকায় একটি নাগেশ্বর চাপা গাছের চারা রোপণেরও কথা রয়েছে তার।
সাভার থেকে ঢাকার ধানমন্ডিত গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে যাবেন পোপ। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর থেকে বঙ্গ ভবনে যাবেন পোপ, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন তিনি। বঙ্গ ভবনে দরবার হলে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দেবেন। রাতে বারিধারার ভ্যাটিকান দূতাবাসে থাকবেন পোপ ফ্রান্সিস।
সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশে প্রার্থনা করবেন পোপ ফ্রান্সিস। অনুষ্ঠানে প্রায় ৮০ হাজার ধর্মপ্রাণ লোকসমাগম হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্যাথলিক বিশপ সম্মেলনের সভাপতি কার্ডিনাল পেট্রিক ডি রোজারিও। তিনি বলেন, ওই উপাসনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায় ও সংস্কৃতির লোকজন অংশ নেবেন। শান্তি, সম্প্রীতি ও পুনর্মিলনের বার্তা নিয়ে পোপের সফরটি হবে সর্বজনীন। রোজারিও আরো বলেন, পোপ কেবল ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জন্য নয়, সব ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষের সঙ্গে মিলিত হবেন।
এদিকে পোপের সংবাদ কাভার করার জন্য শতাধিক সাংবাদিক ঢাকা আসছেন। পোপ এ দেশের জনগণের জীবন বাস্তবতার আলোকে সুন্দর ও মঙ্গলজনক দিক তুলে ধরবেন। পাশাপাশি দেশের যুব ও ছাত্রসমাজকে নতুন স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ করবেন। মানবতা, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার নতুন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য পরামর্শ দেবেন, উৎসাহিত করবেন। এরপর বিকেলে ভ্যাটিকান দূতাবাসে সাক্ষাৎ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এরপর পোপ যাবেন কাকরাইলের রমনা ক্যাথেড্রালে। সেখানে আর্চবিশপ হাউজে বিশপদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। শান্তি কামনায় আন্তঃধর্মীয় ও সম্প্রদায়গত ঐক্য বিষয়ক সভায় তিনি অংশ নেবেন।
সফরের শেষ দিন শনিবার সকালে তেজগাঁওয়ে মাদার টেরিজা হাউজ পরিদর্শনে যাবেন পোপ। এরপর তেজগাঁও হলি রোজারিও চার্চে খ্রিস্টান যাজক, ধর্মগুরু ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে চার্চের কবরস্থান পরিদর্শন করবেন পোপ। দুপুরের পর তিনি ঢাকায় নটর ডেম কলেজে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সফর শেষে বিকেল ৫টায় রোমের উদ্দেশে শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়বেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। বিমানবন্দরে তাকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
সফরকালে পোপের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। ফ্রান্সিস ২০১৩ সালের মার্চে ভ্যাটিকানের ২৬৬তম পোপ নির্বাচিত হন। রোমের বিশপ হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান। পোপ ফ্রান্সিসের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইয়ার্সে। ক্যাথলিক পুরোহিত হিসেবে তার অভিষেক হয় ১৯৬৯ সালে। পুরো আমেরিকা অঞ্চল এবং দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ তিনি।