হাথুরুর চেয়ে যেখানে এগিয়ে থাকলেন রোডস

0
289

স্পোর্টস ডেস্কঃ

বাংলাদেশ ক্রিকেটে নিজের গাঢ় একটা চিহ্ন রেখে গেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহ। তাঁর অধীনে বাংলাদেশ অনেক সাফল্য পেয়েছে, স্বাভাবিকভাবে দেশের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কান কোচকে উঁচু জায়গায় রাখতে হবে। বাংলাদেশ দলের নতুন কোচ স্টিভ রোডস তাঁকে ছুঁতে কিংবা ছাড়িয়ে যেতে পারবেন কি না, সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে হাথুরুর সঙ্গে রোডসের অনেক জায়গায় মিল আছে।

প্রধান মিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দুজনের কোচিং পর্ব শুরু বাংলাদেশকে দিয়ে। এ মিলটাও কম চমকের নয়—বাংলাদেশের হয়ে হাথুরুর প্রথম ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। রোডসেরও তা-ই। শুরুটার একরকম হলেও দুজনের অভিজ্ঞতা দুরকম। ২০১৪ সালে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে হাথুরু তাঁর বাংলাদেশ-অধ্যায় শুরু করেছিলেন সেটি বড় তিক্ততায় ভরা। টেস্ট, ওয়ানডে প্রতিটি সংস্করণে ক্যারিবীয়দের কাছে ধবলধোলাই হয়েছিল বাংলাদেশ। সফরের একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি গিয়েছিল বৃষ্টিতে ভিজে। দায়িত্বের ‘প্রথম প্রহরে’ হাথুরু বুঝে গিয়েছিলেন পথ চলা তাঁর কঠিনই হতে যাচ্ছে।

রোডসের লঙ্কান কোচের ঠিক উল্টো জায়গায় দাঁড়িয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটা জঘন্যভাবে শুরু হলেও ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে। বাংলাদেশ জিতে গেল ওয়ানডে সিরিজ। যে সংস্করণে ক্যারিবীয়রা সব সময়ই দুর্দান্ত, সাকিবরা জিতলেন সেই টি-টোয়েন্টি সিরিজও। তিন ট্রফির দুটিই জিতে ফিরল বাংলাদেশ। প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে সাফল্যের হাসি সঙ্গী করে দলকে নিয়ে দেশে ফিরলেন রোডস। হতাশা দিয়ে শুরু হলেও হাথুরু পরে হেসেছিলেন সাফল্যের হাসিতে। তাঁর অধীনে বাংলাদেশ উঠতে পেরেছিলেন বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে। জিতেছিল ঘরের মাঠে টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ। রোডসও একই পথের পথিক হতে পারবেন কি না, এখনই বলা কঠিন। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুটি ট্রফি জিতে শুরুটা কিন্তু হাথুরুর চেয়ে দুর্দান্ত হলো বাংলাদেশ দলের নতুন কোচে।

মিষ্টভাষী, সদা হাস্যময় রোডস অবশ্য নিজেও খানিকটা অবাক, বিদেশের মাঠে বাংলাদেশের ধারাবাহিক দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। আজ সকাল বিমানবন্দরে বাংলাদেশের ইংলিশ কোচ বললেন, ‘টেস্ট সিরিজটা ছিল খুব কঠিন। ওই সময় আমরা একটু পর্যুদস্ত হয়েছি। তবে খুবই গর্বিত যে ছেলেরা পরে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ওয়ানডে জিতব, এমন একটা ভাবনা আমাদের ছিল। লক্ষ্য পূরণ কোটা অসাধারণ ব্যাপার। তবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় কিছুটা অবাক করার মতো বিষয়। আমরা আসলেই অসাধারণ খেলেছি শেষ দুই ম্যাচে। খুবই খুশি দুটি ট্রফি জেতায়। দারুণ চেষ্টা ছিল সবার।’

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতার পরও চলে আসছে টেস্ট সিরিজের বাজে পারফরম্যান্সের প্রসঙ্গটা। যে দলটা সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অন্য চেহারায় আবির্ভূত হলো, তাদের কী হয়েছিল যে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সংস্করণে অমন ভরাডুবি? রোডস বিষয়টা বিশ্লেষণ করলেন এভাবে, ‘টেস্ট ম্যাচে আমাদের ব্যাটিংয়ের কঙ্কাল কিছুটা বেরিয়ে পড়েছিল। টেস্টে আমাদের ব্যাটিং উন্নতি করতে হবে। আমাদের ভালো কিছু খেলোয়াড় আছে। আমাদের শুধু কন্ডিশনের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে ও প্রতিপক্ষ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে, বিশেষ করে আমরা যখন দেশের বাইরে খেলব।’

সফল এক সফর শেষ। কদিনের বিরতিতে বাংলাদেশকে নেমে পড়তে হবে পরের অভিযানে। মাশরাফি-তামিমদের সামনে এবার এশিয়া কাপ। ক্যারিবীয় সফর থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে এশিয়া কাপেও দারুণ কিছু করতে চান রোডস, ‘অবশ্যই এটা দলকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে (ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়)। জয়ের চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। এর আগেও ওয়ানডেতে আমরা ভালো খেলেছি। সুতরাং আমরা ইতিবাচক ভাবনায় এশিয়া কাপ খেলতে যাব। আমরা খুশিতে আত্মহারা হতে চাই না, তবে অবশ্যই সন্তুষ্ট। আমরা ওয়ানডে সিরিজটা ৩-০ ব্যবধানে জিততে পারতাম।’