সুন্দরবনে দস্যুতায় নিত্যনতুন বাহিনী : সহায়তায় বিশেষ পেশাজীবীর নাম!

0
431

বিশেষ প্রতিনিধি : সরকারের কাছে অস্ত্র গোলা-বারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণকারী সুন্দরবনের সাবেক দস্যুদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা ধরণের সহানুভূতিমূলক আলোচনা হয়। এই মানুষ গুলো অন্ধকার পথ ছেড়ে সুন্দর আলোর পথে ফেরায় তাদের জন্য শুভ কামনাসহ পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে দাবিও জানান দেশের সাধারণ মানুষ। কিন্তু এদের মধ্যে কেউ কেউ পরোক্ষভাবে দস্যু পেশায় জড়িয়ে রয়েছেন। বনদস্যু পেশায় সরাসরি যোগদান না করলেও নিকট লোকজনকে সমাবেত করে অস্ত্র-গুলির ব্যবস্থা করেই নতুন বাহিনীর আত্মপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন। এছাড়া এদের সহায়তাকারী হিসেবে বিশেষ পেশার একজন ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। আর এতে করে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করণে সরকারের প্রচেষ্টা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে।
সুন্দরবনের বনদস্যু মুক্তকরণের প্রক্রিয়া ২০১৬সালে শুরু হয়। সেই থেকে বিভিন্ন সময় সরকারের কাছে ছোট-বড় অনেক বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেলেও পরোক্ষভাবে কেউ কেউ সাবেক পেশার মায়া ছাড়েনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলা কালিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মোঃ মজিদ ও তার ছেলে ইউনুস একটি বনদস্যু বাহিনীর সদস্য ছিলেন। অনেক দিন তারা সুন্দরবনে দস্যুতা করে সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কিন্তু তারা স্বাভাবিক জীবনে গেলেও সুন্দরবনকে স্বাভাবিক রাখার কোন চিন্তা নেই। মজিদের ছোট ছেলে জাকিরকে অস্ত্র ও গুলির যোগানদিয়ে “জাকির বাহিনী” গঠণ করে সুন্দরবনে নামনো হয়েছে। জাকির বাহিনীর সকল অস্ত্র-গুলি ও রসদ যোগান দিচ্ছেন তার বাবা মোঃ মজিদ ও ভাই ইউনুস। এমনকি জিম্মি বনজীবীদের মুক্তিপণের টাকাও তারা বিভিন্ন মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করছেন। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে জাকির বাহিনী দস্যুতা করছে।
এদিকে সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে “সাত্তার বাহিনী” নামের বনদস্যু বাহিনী। খুলনার দাকোপ উপজেলার বাসিন্দা সাত্তার ও তার আপন ছোটভাই কিবরিয়া ওই দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন। তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় রসদ ও বিশেষ প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহের সময় বিশেষ পেশার একজন ব্যক্তির সহায়তার কথা জানা গেছে। ট্রলারযোগে সুন্দরবনের গহীনে গিয়ে দস্যুদের কাছে এসকল মালামাল পৌছে দেন ওই ব্যক্তি।
সম্প্রতি সাত্তার বাহিনীর হাতে জিম্মি থাকার পর মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত হওয়া দু’জন জেলে এ প্রতিবেদককে জানান। বিশেষ পেশার ওই ব্যক্তি ট্রলারযোগে সাত্তার বাহিনীর জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় রসদ দিয়ে আসেন। এতে তিনি দস্যু বাহিনীর কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে থাকেন। তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কর্মরত রয়েছেন বলেও ওই জেলেরা জানান। তবে নিরাপত্তার কারনে প্রতিবেদনে তাদের নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে জানান, এরা আত্মসমর্পণের পর প্রশাসন ও সমাজের চোখে ভাল মানুষ হয়ে রয়েছেন। তারা নতুন বাহিনী তৈরি করে উপরে বসে টাকা আদায় করছেন। আমাদের নাম প্রকাশ করলে তারা সুন্দরবনের বাহিনী দিয়ে জেলেদের মেরে ফেলবে। তাই এ অন্যায় জেনে বুঝেই সহ্য করছেন ব্যবসায়ীরা।

র‌্যাব-৬’র স্পেশাল কোম্পানী কমান্ডার এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, সরকার আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বনদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এই মহতী উদ্যোগকে যদি কেউ প্রশ্নবিদ করে বা এধরণে অভিযোগের প্রমান মেলে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এবিষয়ে খুলনার রেঞ্জ ডিআইজি দিদার আহমেদ বলেন, অপরাধের সাথে জড়িত প্রমান পেলে কোন ছাড় হবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।