র‌্যাবের অভিযানে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ২১ জনকে ২ বছরের কারাদন্ড

0
496

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের দুজন সদস্যসহ ২৯ জনকে আটক করেছে র‌্যাব। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে সাথে তাঁরা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৫টার দিকে র‌্যাব-৬ এর সাতক্ষীরা কোম্পানি ও গোয়েন্দা বিভাগের যৌথ অভিযানে কলারোয়া উপজেলা পৌর সদরের সোনালী সুপার মার্কেট ভবনের কিডস ক্লাব সেন্টার থেকে তাঁদের আটক করে।
সাতক্ষীরা র‌্যাব-৬ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁরা জানতে পারেন যে, একটি প্রতারক চক্র প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র দেওয়ার নামে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এর ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকালে কলারোয়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব সদস্যরা। একপর্যায়ে কলারোয়া থানা থেকে প্রায় ৫০-৬০ গজ দূরে সোনালী সুপার মার্কেট ভবনের কিডস ক্লাব সেন্টারে ৩য় তলায় প্রতারক চক্রের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন তাঁরা। সকাল ৫টার দিকে সেখানে অভিযান চালিয়ে ২৯ জনকে আটক করে র‌্যাব সদস্যরা। এর মধ্যে দুজন প্রশ্ন ও উত্তরপত্র দেওয়ার নামে টাকা আদায়কারী প্রতারক চক্রের সদস্য রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান-প্রশ্নপত্র দেওয়ার নামে টাকা আদায়কারী প্রতারক চক্রের সন্ধান পান তাঁরা। সকালে কলারোয়া উপজেলা পৌর সদরের সোনালী সুপার মার্কেট ভবনের কিডস ক্লাব সেন্টারে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়-একজন ব্লাকবোর্ডে প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিচ্ছেন। তবে ওই প্রশ্ন-উত্তরের সঙ্গে শুক্রবার অনুষ্ঠিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মিল রয়েছে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতারক চক্র ১২ লাখ টাকা করে চুক্তি করেছে। পরীক্ষার আগে ৫ লাখ টাকা জমা দিতে হয়েছে। ফলাফলের পর বাকি ৭ লাখ টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে। আটক ২৯ জনের মধ্যে ১৮ জন শিক্ষার্থী, দুজন প্রতারক চক্রের সদস্য ও অন্যরা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে-প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের হোতা কিডস ক্লাব কোচিং সেন্টারের পরিচালক এবং জনতা ব্যাংক সেনেরগাতি (পাটকেলঘাটা) শাখার সহকারী অফিসার আফতাব আহম্মেদ, সোনালী ব্যাংক কলারোয়া শাখার সহকারী অফিসার সোহাগ হোসেন, কলারোয়া উপজেলার রামকৃষ্ণপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা থানার পরানখালি গ্রামের মৃত আহসান আলীর ছেলে ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম, কলারোয়ার উপজেলার ঝাপাঘাট গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার আফতাবুজ্জামান, একই গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে শিক্ষক আমিরুল ইসলাম, আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের চেউটিয়া গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে কলারোয়া কৃষি ব্যাংকের সহকারী অফিসার মনিরুল ইসলাম মনি, একই উপজেলার কাকবাসীয়া গ্রামের গ্রামের রইচ উদ্দীনের ছেলে সহকারী শিক্ষক তরিকুল ইসলাম, তালা উপজেলার ধানদিয়া গ্রামের আব্দুল হালিম। এর মধ্যে ২১জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। বাকী ৮জন অভিভাবকের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকায় তাদের র‌্যাব ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। উল্লেখ্য-সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়েছে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে। একটি সূত্র জানায়-রোববার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) ওয়েবসাইটে প্রথম ধাপের পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র সংযুক্ত করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করছেন। প্রথম ধাপে মোট-২৫ জেলায় লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। লিখিত পরীক্ষা প্রধম ধাপে ২৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মে, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ২১ জুন এবং চতুর্থ ধাপে ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে তিন পার্বত্য জেলা বাদে-৬১ জেলার ২৪ লাখ ১ হাজার ৯শ’১৯ প্রার্থী অংশ নিয়েছে।