লবণের সর্বনিম্ন দামে চাষীদের মাথায় হাত

0
252

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: দীর্ঘদিন ধরেই দেশে মাঠপর্যায়ে লবণের দাম নিম্নমুখী। আর কভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর কারখানা বন্ধ ও পরিবহন সঙ্কটে লবণের দাম নেমে এসেছে সর্বনিম্নে। বর্তমানে বিক্রি না হওয়ার পাশাপাশি লোকসানে পড়ে দায়-দেনা এড়াতে চাষীরা মাঠে লবণ ফেলে যাচ্ছে। তবে অনেকে সংকট থেকে উত্তরণে মজুদ করে অপেক্ষার পরামর্শ দিলেও চাষীদের মাথায় হাত। বর্তমানে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার হাজার হাজার কৃষক এখন চরম সঙ্কটে দিন পার করছে। বিসিক এবং লবণ চাষীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত কয়েক বছর ধরেই লবণ চাষীরা লোকসান গুনছে। উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে লবণ বিক্রি করে লোকসানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন লবণচাষীরা। এবার লবণ চাষে কাণিপ্রতি যেখানে ব্যয় হচ্ছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা, সেখানে বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১০-১২ হাজার টাকা। এবার লবণ উৎপাদনও হয়েছে অনেক। কিন্তু দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় চাষীরা বিক্রি করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদিত লবণ মাঠেই ফেলে ব্যবসা থেকে সরে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো গতি নেই। কারণ চলমান নভেল করোনা ভাইরাস সঙ্কটের কারণে লবণের ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে অনেক কৃষক মাঠে লবণ রেখেই সরে যাচ্ছে। আর যে কোনো সময় বৃষ্টিপাত হলেবা মাঠের লবণ নষ্ট হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকদের হয় এখনই ওসব লবণ বিক্রি করে দিতে হবে, নয়তো মাঠেই গর্ত করে প্লাস্টিক আবরণ দিয়ে মজুদ করতে হবে। সেজন্য আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু চাষীরা সে ধাক্কা এখন আর নিতে পারছে না।
সূত্র জানায়, চলতি বছর দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টন। ৫৭ হাজার একর জমি থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ৯ টন লবণ উত্তোলন হয়েছে। আর গত ২০১৯ সালে ৬০ হাজার একর জমিতে ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ২৪ হাজার টন। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত লবণচাষীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৬০০। মাঠপর্যায়ে তারা এখন মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ১৪০ টাকা দামে লবণ বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছে। যদিও বিসিকের হিসাবে গড় দাম হচ্ছে ১৫৩ টাকা। অথচ প্রতি মণ লবণ উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় প্রায় ২০০ টাকা। সর্বশেষ ৩ বছর আগে চাষীরা লাভে লবণ বিক্রি করেছিল। ওই সময় পণ্যটির দামও উঠেছিল সর্বোচ্চ। কিন্তু তারপর থেকে প্রতিবারই লোকসানে লবণ বিক্রি করছে চাষীরা।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানেও কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব রোধে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে পড়া ও ভাড়া বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কারখানায় লবণের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। ফলে এবার লবণের দাম অস্বাভাবিক কমে নেমে এসেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যাপারীরা লবণ ক্রয় করলেও কৃষকদের নগদ টাকা দিতে পারছে না। ওই কারণেও অনেকে বড় ধরনের লোকসান দিয়েও লবণ বিক্রি করতে পারছে না।
এদিকে লবণ চাষীদের এমন বিপর্যয় প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকার মেসার্স লাল মিয়া সল্টের স্বত্বাধিকারী মো. আসাদুজ্জামান জানান, দেশে শিল্প লবণ আমদানির নামে সোডিয়াম সালফেটের অবাধ ব্যবহারের কারণে স্থানীয় উৎপাদনকারী চাষী ও প্রকৃত মিল মালিকরা লোকসানের মধ্যে রয়েছে। দেশী লবণ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে না পারলে আমদানিনির্ভরতা বাড়বে। যাতে নিত্যপণ্যটির বাজারকে মারাত্মক অস্থিতিশীলতার মুখে ঠেলে দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বিসিক কক্সবাজারের উপ-মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান জানান, চলমান নভেল করোনা ভাইরাসের সঙ্কটে চাষীরা লবণের ভালো দাম পাচ্ছে না। সারা দেশের শিল্প-কারখানা পুরোদমে চালু হলে লবণের দাম আবারো সহনীয় পর্যায়ে উঠে যাবে। উৎপাদন খরচ তুলে আনা ও লাভের জন্য দাম বেড়ে যাওয়া পর্যন্ত কৃষকদের অপেক্ষা করতে হবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বিসিকের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে স্বল্প সুদে কৃষিঋণ ও এনজিও থেকে ঋণ সুবিধা নিয়ে দিতে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনে লবণের দাম স্ট্যান্ডার্ড পর্যায়ে নির্ধারণের সুপারিশও করা হয়েছে। আশা করা যায়, চলমান বাণিজ্যিক সঙ্কট কেটে গেলে লবণচাষীরাও লাভের মুখ দেখবেন।