মশক নিধন কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়লে চলবে না

0
323

অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এবছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি। গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশের হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯৪ হাজার ৬৬১জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ডেথ রিভিউ কমিটি সর্বশেষ মোট ২৪৮ জন সন্দেহভাজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষের মধ্যে ১৭১টি মৃত্যুর কারণ রিভিউ করে। তার মধ্যে ১০৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ডেথ রিভিউ কমিটি। তবে বেসরকারি হিসেবে এ মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি।
এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিষয়টি আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছিল। এর পরই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন অনেক বিতর্ক পেরিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করে। তখন ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে রাজধানীর প্রতিটি অলিগলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং বছরজুড়ে মশক নিধন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। রাজধানীতে ডেঙ্গু যখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল সে সময় নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কিন্তু বর্তমানে কাজের গতি কমেছে সংস্থা দুটির।
ডেঙ্গু যখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল সে সময় মশক নিধন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পরিচালিত হলেও বর্তমানে তা ঝিমিয়ে পড়েছে। এখন আর আগের মতো মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না। এ কাজে নিয়োজিত কর্মীদেরও মাঠে তেমন দেখা যাচ্ছে না। অথচ সংস্থা দুটি ঘোষণা দিয়েছিল, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে বছরজুড়ে কাজ করতে হবে। অথচ বর্তমানে তাদের কার্যক্রমে মন্থরভাব দেখা দিয়েছে। শুধু বিশেষ মৌসুম বা নির্দিষ্ট সময়ে ডেঙ্গুবিরোধী তৎপরতা দেখালে হবে না। বরং বছরব্যাপী এ কার্যক্রম জোরদার রাখতে হবে।
কিছুদিন আগেও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বাসায় বাসায় গিয়ে এডিসের লার্ভা ধ্বংস করা হতো, জরিমানা আদায় করা হতো। সেই সঙ্গে মশকনিধনকর্মীদের মনিটরিং করা হতো। সবমিলিয়ে ব্যাপক তৎপরতা চোখে পড়ত। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই তাদের কার্যক্রমে ভাঁটা পড়েছে। এখন আর তাদের তৎপরতা চোখে পড়ে না। মশকনিধন কর্মীদেরও খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। অথচ ডেঙ্গু মোকাবিলায় সারাবছর ধরে মশকনিধন কার্যক্রম পরিচালনার কথা ছিল।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পর্যাপ্ত লোকবল না থাকার পাশাপাশি ফগার ও হুইলব্যারোসহ অন্যান্য মেশিন-যন্ত্রপাতিতে সংকট থাকায় মশকনিধন পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। পুরনো কাঠামোর মাত্র ৪৮ শতাংশ জনবল নিয়ে সংস্থা দুটি তাদের দ্বিগুণ এলাকায় নাগরিকসেবা দিয়ে আসছে। এ কারণে প্রতিটি সেবা-সংক্রান্ত কার্যক্রমেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সংস্থা দুটিকে। সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর নতুন করে ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ায় সংস্থা দুটির আয়তন বেড়েছে। কিন্তু জনবল বাড়েনি বরং বিভক্ত হওয়ার সময় দুই ভাগ হয়েছে আগের জনবল। এজন্য যথাযথ নাগরিকসেবা পাচ্ছেন না নগরবাসী। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ মোকাবিলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মোট ১২৯টি ওয়ার্ডের জন্য মশক নিধনকর্মী রয়েছেন মাত্র ৭০৯ জন। যে কারণে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনায় তারা হিমশিম খাচ্ছেন।
এরকম অবস্থায় আমরা আশা করি কর্তৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ নেবে। রাজধানী থেকে সারাদেশে যেভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে এবং এবছর ডেঙ্গুতে যে ক্ষতি হয়েছে তা আগামী বছর যেন আর না হয় -এই প্রত্যাশা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি দেশের প্রত্যেক পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে ডেঙ্গু বিরোধী কার্যক্রমের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ এবং লোকবল নিয়োগের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্ষাকাল পেরিয়ে গেছে বলে মশকনিধন অভিযানও গতি হারাবে -এমনটি কাম্য নয়।