লজ্জা খেকো অধ্যক্ষের প্রতিবাদী ছাত্রী নুসরাত

0
506

এম. কে. দোলন বিশ্বাস
আজকের নিবন্ধের শিরোনাম নামটি শিক্ষকের হাতে সম্ভম হেনেস্তার শিকার হয়ে প্রতিবাদের আগ্নেগিরিতে এক ছাত্রীর জীবন বিসর্জন দেওয়ার জটিল যোগফল। ফেনীর সোনাগাজির মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। এক প্রতিবাদী নারীর নাম। নুসরাত তারই প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে যে প্রতিবাদের ধারা শুরু করেছিলো, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার সময় সে ধারাতেই নুসরাত দৃঢ় ছিলো। শেষ বেলাতেও নুসরাত বলে গেছে, ‘প্রতিবাদ করেই যাবে’। তার প্রতিবাদের ধারাতেই দেশজুড়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল আপামর জনতা। স্বস্তির খবর দিয়েছে আদালত, তোলপাড় তোলা ওই ঘটনার উপযুক্ত রায় পেয়েছে প্রতিবাদীরা।
অযুত-নিযুত চক্ষু যুগলের নজর যখন ফেনীর দিকে, তখন আদালতের বিচারকও তাদের হতাশ করেননি। তাদের তেষ্টা মিটিয়েছেন ‘আইনী’ ভাবেই। মুখিয়ে থাকাদের মুখেও হাসি ফুটিয়েছেন বিজ্ঞ বিচারক।
আদালত নুসরাতকে দিয়েছে বিশেষ চরিত্রের অধিকারী নারীর খেতাব। অপরদিকে মামলার প্রধান আসামী লজ্জা খেকো অধ্যক্ষ সিরাজসহ আসামীদের ‘কালিমা লিপ্তকারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। দেশজুড়ে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস যখন ফেলছিলেন, তখন প্রিয় সন্তানহারা নুসরাতের পিতামাতাসহ স্বজনরাও বিয়োগান্ত ….। প্রায় সাত মাস আগের তোলপাড় তোলা ঘটনা। অধ্যক্ষের যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মাত্র ৬১ কার্যদিবসে ১৬ আসামীর সবাইকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। পুরো দেশকে নাড়িয়ে দেওয়া ওই হত্যাকা-ের মামলায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদ গত ২৪ অক্টোবর জনাকীর্ণ আদালতে ওই রায় ঘোষণা করেন।
ঘটনাক্রম : নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষের বিররুদ্ধে মামলা করলে অধ্যক্ষ সিরাজ গ্রেপ্তার হয়। ৬ এপ্রিল পরীক্ষার হল থেকে ছাদে নিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন দেয় আসামীরা। ৮ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে লাইফ সাপোর্টে নুসরাত, মামলা দায়ের করা হয়। ১০ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যু, মামলা পিবিআইতে স্থানান্তর। ২৯ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ১৬ জনকে আসামী করে অভিযোগপত্র দাখিল। ৩০ মে হাকিম আদালত থেকে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর। ১০ জুন অভিযোগপত্র আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল, গ্রেপ্তার পাঁচজনকে অব্যাহতি। ২০ জুন ১৬ আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন। ২৭ জুন বাদীর সাক্ষ্য নেওয়ার মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু হয়ে ৯ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগহণ শেষ হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ হয়। ২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামীর সবার মৃত্যুদ- হয়। এদিকে আলোচিত এই রায় ঘিরে জেলা শহর, আদালত এলাকা ও সোনাগাজী উপজেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। যে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে আগের দিন রাত থেকে নুসরাতদের বাড়িতে পাহারা জোরদার করা হয়। প্রহরায় নিয়োজিত আগের তিন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে আরও ৯ সদস্যকে যুক্ত করা হয়। আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত লোকজনও রেজিস্টার খাতায় সই না করে ওই বাড়িতে ঢোকার অনুমতি পাচ্ছেন না। গত ৭ এপ্রিল থেকে বাড়িটিতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়।
বিচারকের রায় : বিচারক রায়ে উল্লেখ্য করেছেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা ফেনী জেলার অন্যতম বড় বিদ্যাপীঠ। দুই হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী সেখানে পড়ছে। এলাকার শিক্ষা সম্প্রসারণে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার আলোকোজ্জ্বল ভূমিকায় ‘কালিমা লিপ্তকারী’ এ ঘটনা ‘বিশ্ব বিবেককে’ নাড়া দিয়েছে। ‘নারীত্বের মর্যাদা রক্ষায় ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির তেজদ্বীপ্ত আত্মত্যাগ তাকে ইতোমধ্যে অমরত্ব দিয়েছে। তার এ অমরত্ব চিরকালের অনুপ্রেরণা। পাশাপাশি আসামীদের ঔদ্ধত্য কালান্তরে মানবতাকে লজ্জিত করবে নিশ্চয় বিধায়, দৃষ্টান্তমূলক কঠোরতম শাস্তিই আসামীদের প্রাপ্য।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪ (১)৩০ ধারায় দোষী সাব্যস্তকরে ১৬ আসামীর সবাইকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে অর্থদন্ড দিয়েছেন বিচারক। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আসামীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দন্ডাদেশ কার্যকর করতে এবং জরিমানার অর্থ আদায় করে নুসরাতের বাবা-মাকে দিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে।
প্রতিবাদী নুসরাত : সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন নুসরাত। যখন ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়েছিল, তখনও নুসরাত বলছিলেন, তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন। প্রতিবাদী এই তরুণীর জন্য প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালিত হয় গোটা দেশজুড়ে। ৭ এপ্রিল নুসরাত ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসকদের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দী দেন, যাতে তিনি অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যান। নুসরাত হত্যার মামলটি তদন্ত প্রথমে করছিলেন সোনাগাজী থানার পরিদর্শক কামাল হোসেন; কিন্তু ওই থানার ওসিসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নুসরাত হত্যাকান্ডের সময় গাফিলতির অভিযোগ উঠলে তদন্তদভার আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপর। পিবিআইর পরিদর্শক শাহ আলম এজহারভুক্ত আট আসামীর সঙ্গে আরও আটজনকে যুক্ত করে ১৬ জনকে আসামী করে গত ৫ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত। অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে প্রথম মামলায় নুসরাতের জবানবন্দী নেওয়ার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ায় সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ঢাকার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে।
যেভাবে হত্যা নুসরাত : নুসরাত তারই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেই আসামীদের চক্ষুশূল হয়েছিলো। হত্যাকান্ডের মামলায় পিবিআই দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নুসরাতের মায়ের করা মামলার পর থেকেই ক্ষিপ্ত হন আসামীরা। অধ্যক্ষ সিরাজ গ্রেপ্তার হওয়ার পর আসামীদের কয়েকজন কারাগারে তার সঙ্গে দুই দফা দেখা করতে গিয়ে নুসরাতকে হত্যার নির্দেশনা পেয়েই মাঠে নামেন। আর এই পরিকল্পনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জড়িত ছিলেন অধ্যক্ষ সিরাজের অনুগতরা, যাদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি, সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ছাত্র, অধ্যক্ষের আত্মীয় এমনকি নুসরাতের সহপাঠীও ছিলো। পিবিআইয়ের ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে অধ্যক্ষ সিরাজকে এক নম্বর আসামী করা হয়। অভিযুক্ত ১৬ জন আসামীর মধ্যে ১২ জন আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। মামলার অভিযোগপত্রে নুসরাতকে হত্যার সচিত্র ঘটনাপ্রবাহও তুলে ধরে পিবিআই। যৌন নিপিড়ন অভিযোগে নুসরাতের মায়ের করা মামলার ভিত্তিতে অধ্যক্ষ সিরাজকে গত ২৭ মার্চ পুলিশ গ্রেপ্তার করলে সিরাজের পক্ষ নেয় স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তার মুক্তি দাবিতে মানববন্ধনেও সক্রিয় ছিল মাদরাসার কিছু শিক্ষার্থী। মামলা তুলে নিতে ক্রমাগত হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল বলে নুসরাতের পরিবারের অভিযোগ ছিল।
অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১ এপ্রিল শাহাদাত হোসেন শামীম (নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ক্ষিপ্ত ছিলেন), নূর উদ্দিন (অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ), ইমরান, হাফেজ আব্দুল কাদের (নুসরাতের ভাই নোমানের বন্ধু) ও ইফতেখার উদ্দিন রানা জেলখানায় গিয়ে সিরাজের সঙ্গে দেখা করে। তখনই অধ্যক্ষ তার মুক্তির চেষ্টা এবং মামলা তুলে নিতে নুসরাতের পরিবারকে চাপ দিতে বলে। হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর পরও মামলা না তোলায় আসামীরা আলোচনা করে ‘প্রয়োজনে যে কোনো কিছু’ করার পরিকল্পনা করে। ৩ এপ্রিল শামীম, নূর উদ্দিন, আব্দুল কাদেরসহ কয়েকজন কারাগারে গিয়ে আবার অধ্যক্ষ সিরাজের সঙ্গে দেখা করেন। সিরাজ তখন নুসরাতকে ভয়ভীতি দেখানো এবং প্রয়োজনে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ দেয় আর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালানোর কথা বলে। সেদিন বিকালে মাদরাসার পাশে একটি টিনশেড কক্ষে শামীম, নূর উদ্দিন, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, নুসরাতের সহপাঠী জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, অধ্যক্ষ সিরাজের ভাগ্নি ও নুসরাতের সহপাঠী উম্মে সুলতানা ওরফে পপি, আসামী শামীমের দূরসম্পর্কের ভাগ্নি, নুসরাতের সহপাঠী কামরুন নাহার মনিসহ আরও কয়েকজন বৈঠক করে। নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় ওই বৈঠকেই। অধ্যক্ষ সিরাজের মুক্তির দাবিতে পালিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে মদদ দেওয়া সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম হত্যাকান্ড ঘটাতে শামীমকে ১০ হাজার টাকা দেন। সেখান থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে কামরুন নাহার মনি দুটি বোরকা ও চার জোড়া হাতমোজা কিনে।
৪ এপ্রিল রাতে মাদরাসার ছাত্র হোস্টেলে বসে আবারও পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন আসামীরা। পরদিন ভূইয়া বাজার থেকে এক লিটার কেরোসিন কিনে নিজের কাছে রেখে দেয় শামীম। ৬ এপ্রিল সকাল ৭টার পর মাদরাসায় যায় শামীম, নূর উদ্দিন ও হাফেজ আব্দুল কাদের। সকাল সোয়া ৯টার মধ্যে আসামীরা পরিকল্পনা অনুযায়ী যার যার অবস্থানে চলে যায়। শামীম পলিথিনে করে আনা কেরোসিন অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে থেকে একটি কাচের গ্লাসে নিয়ে ছাদের বাথরুমের পাশে রেখে দেয়। আর মনির কেনা দুটি এবং বাড়ি থেকে নিয়ে আসা একটি বোরখা এবং চার জোড়া হাতমোজা নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারের তৃতীয় তলায় রাখা হয়। শামীম, জাবেদ ও জোবায়ের সাড়ে ৯টার দিকে বোরখা ও হাতমোজা পরে তৃতীয় তলায় অবস্থান নেন।
নুসরাত পরীক্ষা দিতে এলে পরিকল্পনা অনুযায়ী উম্মে সুলতানা পপি তাকে মিথ্যা কথা বলে ছাদে নিয়ে আসেন। নুসরাতকে বলা হয়, তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদে কারা যেনো মারছে। নুসরাত ছাদে যাওয়ার সময় পপি তাকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত তাতে রাজি না হয়ে ছাদে উঠে যান। মনি, শামীম, জোবায়ের ও জাবেদও সে সময় নুসরাতের পিছু পিছু ছাদে যায়।
ছাদে তারা নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয় এবং কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে। নুসরাত স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে শামীম বাঁ হাত দিয়ে নুসরাতের মুখ চেপে ধরেন এবং ডান হাত দিয়ে নুসরাতের হাত পেছনে নিয়ে আসে। পপি তখন নুসরাতের ওড়না খুলে জোবায়েরকে দেয়। জোবায়ের ওড়না দুই ভাগ করে ফেলে। পপি ও মনি ওড়নার একাংশ দিয়ে নুসরাতের হাত পিছন দিকে বেঁধে ফেলে। অন্য অংশ দিয়ে নুসরাতের পা বেঁধে ফেলেন জোবায়ের। জাবেদ পায়ে গিট দেয়। সবাই মিলে নুসরাতকে ছাদের ওপর শুইয়ে ফেলে। শাহাদাত তখন নুসরাতের মুখ ও গলা চেপে রাখে। নুসরাতের বুকের ওপর চেপে ধরে মনি। পপি ও জোবায়ের পা চেপে ধরে। এক আসামী নুসরাতের হাত-মুখ, আরেকজন তার পা, অন্যজন তার বুকে চেপে বসে।
জাবেদ বাথরুমের পাশে গ্লাসে রাখা কেরোসিন এনে ঢেলে দেয় নুসরাতের গায়ে। শামীমের ইশারায় জোবায়ের ম্যাচ জ্বেলে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন ধরানোর পর প্রথমে ছাদ থেকে নামেন জোবায়ের। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী মনি ‘চম্পা/শম্পা’ বলে ডেকে পপিকে নিচে নিয়ে যান। তারা নিচে নেমে পরীক্ষার হলে ঢুকে যান। জাবেদ ও শামীম সাইক্লোন সেন্টারের তৃতীয় তলায় গিয়ে বোরখা খুলে ফেলেন। তারপর জাবেদও পরীক্ষার হলে ঢুকে যান। শামীম তার বোরখা ফেলে দেন মাদরাসার পুকুরে। জোবায়ের মাদরাসার মূল গেইট দিয়ে বের হয়ে যান এবং বোরখা ও হাতমোজা ফেলে দেন সোনাগাজী কলেজের ডাঙ্গি খালে। হত্যাকান্ড শেষ করে আসামীরা নিরাপদ স্থানে সরে গিয়ে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেন।
এদিকে অগ্নিদগ্ধ নুসরাত নিচে নেমে এলে কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল ও নাইটগার্ড তার গায়ের আগুন নেভায়। নূর উদ্দিনও ওই সময় নুসরাতের গায়ে পানি দেন। আর হাফেজ আব্দুল কাদের ফোন করে নুসরাতের ভাই নোমানকে জানান, তার বোন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
দেহের ৮০ শতাংশজুড়ে আগুনের ক্ষত নিয়ে নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে ঘটনা একইভাবে বর্ণনা করেন বলে অভিযোগপত্রে তুলে ধরা হয়েছে। রায় ঘোষণার পরপরই নিন্দার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শিরোনাম হয় বিশ্ব গণমাধ্যমেও। নুসরাত হত্যাকা-ের পর ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেছিল গোটাদেশ। আমরা মনে করি, নুসরাত হত্যাকা-ের ‘সময়ের সেরা’ ওই রায় ‘মাইলফলক’ হিসেবে দেশের ইতিহাসে বিবেচ্য হয়ে থাকবে, কাল থেকে কালান্তর।

লেখক- দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক