বিশ্ববাজারে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা বাড়ছে

0
209

টাইমস ডেস্ক:
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় মাধ্যম হিসাবে কাজ করছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত। বিদেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে এদেশে তৈরি হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি পণ্য রফতানির হার। বিশ্বের ১৮০টি দেশে বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও র্হার্ডওয়্যার রফতানির বাজার তৈরি হয়েছে। গত দুই বছরে এই খাত থেকে দেশে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় এসেছে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশেই মোবাইল ও ল্যাপটপ রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি এদেশের তরুণ আউটসোসিংয়ে মাধ্যমেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। এ খাত থেকে সরকার আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের টার্গেট নিয়েছে। টেলিযোগাযোগ ও বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের নতুন দ্বার খুলে দিচ্ছে। একই সাথে বড় হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যারের বাজারও। বর্তমানে দেশের বাজার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যে দেশী সফটওয়্যার নির্মাতারাই দখলে রেখেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। তবে এখনো বড় প্রতিষ্ঠানের কাজগুলোর ক্ষেত্রে বিদেশী সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরতা রয়েছে। দেশের ৬০ ব্যাংকের মধ্যে ২৭টি ব্যাংকে দেশী সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে। মূলত দেশের সফটওয়্যার খাতে বেশি চাহিদা রয়েছে ইআরপি, বিভিন্ন এ্যাপ্লিকেশন তৈরিসহ, ডিজিটালাইজেশনের কাজে ব্যবহৃত সফটওয়্যার। দেশের বাজারে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশী সফটওয়্যার নির্মাতারা বিদেশেও রফতানি করছে। অবশ্য এখনো দেশ থেকে বড় ধরনের একক সফটওয়্যার রফতানি হাতেগোনা। এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিপিও, সার্ভিস রফতানি হচ্ছে। বিপিওর ক্ষেত্রে ব্যাংকের নানা কাজ, নানা রকম সেবা দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিংয়ে গ্রাফিক্স, ওয়েবের কাজ হচ্ছে। কিন্তু এখনো এক্ষেত্রে সফটওয়্যার রফতানির সব অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে আসে না। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি রফতানির মাধ্যমে ঠিক কত ডলার বাংলাদেশ আয় করেছে প্রকৃত তথ্য পাওয়া কঠিন।
সূত্র জানায়, বিগতত ২০১৮ সালে দেশ সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে রফতানিতে ১ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। টাকার হিসেবে তা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। সরকারেরও লক্ষ্য ছিল ২০১৮ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন রফতানি আয় করা। আর ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রফতানি করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সফটওয়্যার রফতানিতে ক্যাশ ইনসেনটিভ দেয়াসহ এ খাতের উন্নয়নে নেয়া নানা পদক্ষেপের কারণে ২০১৮ সালে সফটওয়্যার রফতানি বেড়েছে। গত দুই বছরে এ খাতে আয় বেড়ে দেড় বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি খাত ভবিষ্যত অনেক আশা জাগায়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এটা একটা বড় ক্ষেত্র। এখান থেকে তারা আয় রোজগার করতে পারবে।
সূত্র আরো জানায়, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশে সেবার ক্ষেত্রে সম্ভাবনা যেমন বাড়ছে. তেমনি তৈরি হচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জ। বেসিস, বাক্যসহ দেশে দেড় হাজার আইটি ও আইটিইএস কোম্পানি রয়েছে। তার মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের ৫শ’ কোম্পানি রফতানিতে রয়েছে। শুধু বেসিসে এক হাজারের বেশি সদস্য কোম্পানি রয়েছে। যদিও অটোমেশন, প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি ও নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সঙ্গে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। তারপরও সরকারের নীতিনির্ধারকরা আশাবাদী এ খাত একদিন তৈরি পোশাক শিল্পকে ছাড়িয়ে যাবে। কারণ এ খাতে অনেক কাজ রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন ইন্টারনেটের উচ্চগতি। তাহলেই এদেশের প্রযুক্তিবিদরা বড় চমক দেখাতে পারবে।
এদিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে শুরুতে মানুষের মনে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব কাজ করতো। এখন ওই নেতিবাচক ধারণাটি নেই। দেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে তথপ্র্রযুক্তি ছাড়া উন্নত বিশ্বের সঙ্গে একসঙ্গে চলা যাবে না। এ কারণেই এ খাত থেকে এক বিলিয়ন ডলারের রফতানি করা সম্ভব হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রফতানি মানে শুধু সফটওয়্যারে মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশ হার্ডওয়্যারেও উন্নতি করছে। ভারত, চীন ও ইউরোপের দেশগুলোর পাশাপাশি এখন ফিলিপিন্স, পাকিস্তানের মতো দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। ফলে তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও দক্ষ জনশক্তি তৈরির মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বেসিসের সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লা এন করিম জানান, গত কয়েক বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে বিলিয়ন ডলার আয় হচ্ছে। দিন দিন ‘ইমার্জিং চেন’ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তা আরো বড় আকারে করতে হলে ইন্টারনেট স্পীড বাড়াতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, সুইডেন, হল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের ৭০ থেকে ৮০টি দেশে এদেশের তরুণরা আউটসোসিং করছে। ১০ বছর আগে যা ভাবা যেত না। ভারতে আউটসোসিংয়ের জন্য হায়দারাবাদের নামই হয়ে গেছে ‘সিলিকন ভ্যালি’। তখন থেকেই দেশটির যুবসমাজ বিলিয়িন বিলিয়ন ডলার আয় করছে। এখন বাংলাদেশেরও এমন সুযোগ তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর অনেক বড় কোম্পানিগুলো এদেশের তরুণদের কাজ দিতে আগ্রহী। কারণ এখানে প্রতি ঘণ্টা কাজ ৩ থেকে ৪ ডলারে করে নেয়া যায়। যা অন্য যে কোন দেশ থেকে অনেক কম। এ কারণেই এদেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বিশ্ববাজারে বড় একটা স্থান করে নেবার সম্ভাবনা রয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পকে অতিক্রম করতে পারবে কিনা বলা মুশকিল। এবারের ডিজিটাল মেলায় ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক প্রদর্শন হয়েছে। আর ফাইভ-জি এলে ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব খাতেই বড় ধরনের উন্নয়ন ঘটবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, তৈরি পোশাকের মতোই ধীরে ধীরে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় একটি খাত হিসাবে তথ্য প্রযুক্তি খাতও এগিয়ে যাচ্ছে। একদিন এ খাত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস হবে। ২০২১ সালে এদেশ এই শিল্পের প্রথম ধাপটি পার করব। বাংলাদেশ ২০২১ সালে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করবে। আর ২০৪১ সালের মধ্যে এ সেক্টর থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের চেয়েও বেশি আয় হবে। এ খাতে দেশের তরুণ প্রজন্ম আশার আলো দেখতে শুরু করেছে। তারা এখনই আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তারা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার রফতানি করছে। দেশে তৈরি মোবাইল ল্যাপটপ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত দেশী সফটওয়্যার ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যেই বিদেশী ‘সফটওয়্যারকে রিপ্লেস’ করা হয়েছে। বিদেশী সফটওয়্যারের জায়গায় দেশী সফটওয়্যার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এদেশের সফটওয়্যার ১৮০ দেশে রফতানি হয়। আয়ারল্যান্ডের পুলিশ এদেশের সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, সিকিউরিটি জন্যও সফটওয়্যার আছে এবং মোবাইল অপারেটররা দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।