বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে পাউবোর দূর্বল বেড়িবাঁধে ঝুঁকি বাড়ছে পাইকগাছায়

0
173

শেখ নাদীর শাহ্ ::

পাউবোর দূর্বল বেড়িবাঁধের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে পাইকগাছা পৌরসভা এলাকা। ষাটের দশকে নির্মিত বাঁধে দীর্ঘ দিন সংষ্কারের অভাবে ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

ভৌগলিক অবস্থানে খুলনার পাইকগাছা দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব ও নদী সমূহে নব্যতা হ্রাসে প্রায় প্রতি বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগ লেগে থাকে এ অঞ্চলে। নিয়মিত প্রাকৃতিক দূর্যোাগের পাশাপাশি মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের অতিরিক্ত পানির চাপে দূর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ বছরের একটা বড় সময় ঝুঁকিতে অতিবাহিত করেন। বিশেষ করে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাউবো’র দূর্বল বেড়িবাঁধের ভাঙ্গনে জনপদের মানুষ চরম বিপর্যয়ের মূখে পড়ে থাকে। তাছাড়া প্রতি বছর ভাঙ্গনের মুখে স্থানীয়দের স্বেচ্ছা শ্রমে কোন রকম জোড়া-তালি দিয়ে চলতে হয় তাদের। ফলে বর্ষা মৌসুমে তারা আতংক আর আশংকায় পার করেন গোটা সময়।

সূত্র জানায়, ষাটের দশকে নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা বাঁধে দীর্ঘ দিন যাবৎ নিয়মিত মাটির কাজ না হওয়ায় অব্যাহত প্রাকৃতিক দূর্যোগে বাঁধের অধিকাংশ এলাকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে দূর্বল হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরী ভিত্তিতে টেকসই বেঁড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সভাপতি মানবধিকার কর্মী এ্যাড.এফ.এম.এ রাজ্জাক বলছিলেন, পাইকগাছায় পাউবোর বেশির ভাগ বাঁধে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সরু ও দেবে গেছে। অধিকাংশ বাঁধগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি যাতায়াতের রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া অধিকাংশ বাঁধের তীরবর্তী এলাকায় অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষে বাতাসে পানির আঁছড়ে পড়ায় দূর্বল বাঁধগুলি আরো দ্রæত গতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক এলাকায় চিংড়ি চাষীরা আবার কতৃপক্ষের সাথে যোগসাজসে কিংবা চুরি করে বাঁধ কেটে বা বাঁধের নীচে পাইপ ঢুকিয়ে পানি সরবরাহ করায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় বাঁধ গুলি।

এদিকে বর্ষা মৌসুমে চরম ঝুঁকির মুখে বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও চলতি শুষ্ক মৌসুমে পাউবো কর্তৃপক্ষ কার্যত কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছেননা। বর্ষা মৌসুমের আগেই যতদ্রæত সম্ভব বাঁধগুলির সংষ্কার নাহলে যেকোন মূহুর্তে ঐ সকল এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলেও আশংকা তার।

ভূক্তভোগী এলাকাবাসী জানায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাত, ২০০৯ সালে ২৫ মে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় আইলার জলোচ্ছ¡াস, পৌরসভার দক্ষিণ-পশ্চিমে শিববাটি থেকে বোয়ালিয়া পর্যন্ত বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি, ফসল ও লিজ ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। ঐসকল ঘটনায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা। ক্ষতির মুখে স্থানীয়রা ঐসময় স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ভাঙ্গনকৃত বাঁধগুলো কোন রকম জোড়া-তালি দিয়ে পানির অনপ্রবেশ বন্ধ করলেও দীর্ঘ সময়ে বাঁধগুলো স্থায়ী ও টেকসই মেরামত হয়নি। বাঁধগুলো পড়ে আছে সেই অবস্থায়। সরেজমিনে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে দূর্বল বেড়িবাঁধের কারণে পৌর এলাকা রীতিমত অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।

উপজেলা পাউবোর অফিস থেকে মাত্র দু’ কি: মি: দুরত্বে শিববাটির আশ্রয়ন প্রকল্পের ইন্দুকাটা এলাকায় ওয়াপদার বেড়িবাঁধের একাধিক ভাঙ্গনকৃত এলাকা পড়ে আছে একই অবস্থায়। আর ভাঙ্গনকৃত এলাকা দিয়ে চুয়ে চুয়ে লোনা পানি ঢুকছে পৌর অভ্যন্তরে। এখনই বাঁধটির সংষ্কার না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি কিংবা জোয়ারের অতিরিক্ত পানির চাপে বাঁধগুলো ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়ে ঘটে যেতে পারে কোন বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়। গত বারের তিক্ত অভিজ্ঞতায় এখন পর্যন্ত কার্যত কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় এসয় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর জানান, গত প্রায় এক দশক যাবৎ তিনি শুনে আসছেন যে, বিশ্বব্যাংক ও জাইকা নতুন বেঁড়িবাঁধ নির্মাণ করবে। এপ্রসঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সময় অনেক সভা-সেমিনারের পাশাপাশি আন্দোলনও হয়েছে তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় টেকসই ও মজবুত বেঁড়িবাঁধ নির্মাণে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান।

সর্বশেষ এব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য এলাকাবাসী স্থানীয় এমপি,উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।