দুর্নীতির দায়ে বেতন কমলো গাইবান্ধার সেই পিআইও নুরুন্নবীর

0
176

টাইমস ডেস্ক: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের দায়ে (শৃঙ্খলা ও অপীল) বিধিমালা-২০১৮ মোতাবেক বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে। একইসঙ্গে স্থায়ীভাবে লঘু-দÐ হিসেবে নুরুন্নবী সরকারের বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ (১০ম গ্রেডের প্রারম্ভিক বেতন) নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি ১০ম গ্রেডের প্রারম্ভিক বেতন পাবেন। বর্তমানে নুরুন্নবী সরকার রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। গত রোববার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন-১) উপসচিব লুৎফুন নাহার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য জানা গেছে। অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত থাকাকালীন পিআইও নুরুন্নবী সরকার ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে একইদিনে কর্মস্থলে উপস্থিত থেকেও দাফতরিক কাজে বাইরে অবস্থান দেখিয়ে পূর্ণ দিনের দৈনিক ভাতা উত্তোলন করেন। এমন অভিযোগ এবং সহকর্মীদের সাথে খারাপ আচরণের জন্য সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও অপীল) বিধিমালা-২০১৮ এর ৩(খ) ও (ঘ) ধারামতে অসদাচরণ ও দুর্নীতির দায়ে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। মামলা নং ০৫/২০২০ইং। উল্লেখিত অভিযোগের কারণে পিআইও নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে অধিদপ্তর হতে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগনামা গঠন করে তার বিবরণীসহ প্রেরণ করা হলে তিনি গত ১৫ অক্টোবর অভিযোগনামার জবাব দাখিল করেন। এরপর অভিযোগের বিষয়ে আরও তথ্য অনুসন্ধানের জন্য অধিদপ্তরের পরিচালক (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ) এসএম এনামুল কবির যুগ্মসচিবকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্ত করে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে পিআইও নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় অফিস আদেশে। আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, যেহেতু পিআইও নুরুন্নবী সরকারকে গুরুদÐ দেয়ার সিন্ধান্ত নিয়ে চলতি বছরের ১০ জানুযারি ২য় কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়। কিন্তু তিনি তার কোনো জবাব দাখিল করেননি। যেহেতু বিল উত্তোলনের বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গাইবান্ধা অনুমোদন করেছেন এবং উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, সুন্দরগঞ্জ বিল পাস করেছেন বিধায় শাস্তির বেলায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা-২০১৮ এর বিধি ০৩ এর (ঘ) অনুযায়ী দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে একই বিধিমালার বিধি ৪ এর উপবিধি ২(ঘ) মোতাবেক লঘু-দÐ হিসেবে স্থায়ীভাবে বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ আদেশও দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে সুন্দরগঞ্জে যোগদানের পর থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটসহ নানা বির্তক কর্মকাÐে আলোচিত হন পিআইও নুরুন্নবী সরকার। একাধিক হামলা-মামলার শিকার, দুর্নীতি ও চাঁদাদাবির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুদকসহ পাঁচটি মামলা হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৯ সালের জুন ক্লোজিং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকার বিল স্বাক্ষর করে নেয় পিআইও নুরুন্নবী। এরপর সেপ্টেম্বর মাসে দেশজুড়ে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সময় পিআইও নুরুন্নবী সরকারের দুর্নীতি কর্মকাÐ নিয়ে একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে একটি বেসরকারি টেলিভিশন। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমও তার বিরুদ্ধে একের পর এক প্রতিবেদন প্রচার-প্রকাশ করে। দুর্নীতির দায়ে অধিদপ্তর স›দ্বীপে বদলি করে তাকে। কিন্তু সুন্দরগঞ্জ ছাড়তে নারাজ নুরুন্নবী শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েও ব্যর্থ হন। সর্বশেষ তিনি গত ১৬ সেপ্টেম্বর স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের ১২ গণমাধ্যম ও মানবাধিকারকর্মীর বিরুদ্ধে আমলী আদালত (কোতোয়ালী) রংপুরে পৃথক দুটি মানহানির মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রংপুরের পুলিশ পরির্দশক (নিরস্ত্র) মো. সাইফুল ইসলাম। স¤প্রতি আদালতে মামলার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। তবে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিবাদী গণমাধ্যকর্মীরা।