জুলিয়া সুকায়না একজন ইউএনও’ এবং করোনাকালে পাইকগাছার মানবসেবা

0
503

শেখ নাদীর শাহ্ :

একজন জুলিয়া সুকায়না। পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ সহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। কখনো মমতাময়ী, কখনো কঠোর, কখনোবা হময়ী। সর্বোপরি দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ন অভিভাবক হিসেবে ইতোমধ্যে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

উপজেলার প্রথম নারী নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পাইকগাছায় যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচিত তিনি। নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ বিশেষ করে চলতি করোনা মহামারীতে নিজের জীবন বাজি রেখে প্রশাসনকে সাথে নিয়ে তিনি সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি ছুটে চলেন,উপজেলার এ-প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কখনোবা পায়ে হেঁটে খাবারের প্যাকেট হাতে পৌছে দিয়েছেন কর্মহীন অভূক্ত পরিবারে। গোটা পাইকগাছা নামক পরিবারের একজন সদস্য তিনি।

উপজেলার প্রথম করোনা আক্রান্ত হিসেবে কপিলমুনির সাংবাদিক তপন পালের বাড়িটিকে লকডাউন থেকে শুরু করে সর্বশেষ তার করোনাজয় পর্যন্ত ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতেও কোন রকম কার্পণ্য করেননি তিনি। মাঝের অস্বস্তিদায়ক দিনগুলোর প্রতিটি মূহুর্ত নীরিক্ষণ বিশেষ করে খাওয়া-দাওয়া,নানা পরামর্শ ও মনোবল চাঙ্গা রাখতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছিলেন তিনি। এজন্য স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
উপসর্গের ভিত্তিতে নমুনা দেওয়ায় উপজেলার প্রথম ব্যক্তি হিসেবে গত ১ মে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হন সাংবাদিক তপন পাল। পরের দিন নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে তার বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেন উপজেলা প্রশাসন। এরপর তার স্ত্রী তৃপ্তি পালের নমুনাতেও পজেটিভ শণাক্ত হয়। তবে নিজ বাড়িতেই আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে উপজেলা প্রশাসন। সর্বশেষ জুনের মধ্যভাগে ফের সংগৃহীত নমুনায় ১৯ জুন তাদের সকলের নমুনা নেগেটিভ আসলে ২০ জুন উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা সেনেটারী ও নিরাপদ খাদ্যকর্মকর্তা উদয় কুমার মন্ডল স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশকে সাথে নিয়ে তপন পালের বাড়িসহ আশ-পাশের এলাকা উন্মুক্ত ঘোষণা করেন।

এ ব্যাপারে করোনাযুদ্ধ জয়ী সাংবাদিক তপন পাল তার প্রতিক্রীয়ায় জানান, করোনা গোটা পৃথিবীর ন্যায় তাকেও নানা শিক্ষা দিয়েছে। তার উপর বয়ে চলা মহামারী করোনা তাকে যতটা না পীড়া দিয়েছে তার চেয়েও বেশী পাইকগাছাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্তরিকতা ও ভালবাসা তাকে সিক্ত করেছে। যা নি:সঙ্গ ও একাকিত্ব সময়ে তাকে উজ্জিবীত রাখতে টনিক হিসেবে কাজ করেছে। বিশেষ করে উপজেলার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ইউএনও’র নীরিক্ষণ আজীবন তাকে ঋণী করে রেখেছে।

তিনি আরো বলেন,করোনাকালে নি:সঙ্গ-নিস্তব্দ পৃথিবীর বুকে পীড়িত মানুষের সেবায় যখন ডাক্তার,সাংবাদিক ও পুলিশই কেবল জীবন বাজি রেখে পাশে পড়ে রয়েছেন,ঠিক তখনই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে সাহস জুগিয়েছেন বেঁচে থাকতে। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কেন জানি তার বার বার মনে হয়েছে,তুমি একা নও,মায়ের ভূমিকায় আমিও আছি জাগিয়ে রাখতে প্রতিটি সময় তোমার পাশে।

প্রসঙ্গত,জুলিয়া সুকায়না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পাইকগাছায় যোগদানের পর সরকারী নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তায়নের পাশাপাশি,সৃষ্টিশীল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভর করে উপজেলা চত্বরে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতিকৃতি স্থাপন, সভা পরিষদ চত্বর, মিনি পার্কসহ নানা সৃষ্টি নজর কেড়েছে সবার। ভয়াল প্রাকৃতিক দুর্যোগ বুলবুল,আম্ফান ও চলমান করোনা মোকাবেলায় নিজেকে সামনে রেখে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশের প্রতিটি স্তরে প্রশাসনের এমন নজর কাড়া কর্মতৎপরতা বজায় থাকলে অন্তত অটুট থাকবে বিশ্বাস, পথ হারাবেনা বাংলাদেশ।