কর ছাড়ের মাধ্যমে করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহী করার উদ্যোগ

0
161

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: করদাতারা অনলাইনে রিটার্ন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহী হচ্ছে না। বিগত ২০১৬ সালে করদাতাদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দেয়ার কার্যক্রমটি চালু করা হয়। কিন্তু প্রায় ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও তা তৃণমূল পর্যায়ের করদাতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়নি। মূলত অনলাইন রিটার্ন ব্যবস্থাটি করদাতাবান্ধব করা যায়নি। ফলে করদাতারা অনলাইনে রিটার্ন দেয়ায় তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে অনলাইনে রিটার্ন জমায় করদাতাদের আগ্রহ বাড়াতে কর ছাড়ের কৌশল নেয়া হয়েছে। চলতি ২০২০-’২১ অর্থবছরের বাজেটে নতুন কৌশল হিসেবে অনলাইনে রিটার্ন জমা দিলে ২ হাজার টাকা করছাড়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যা একজন করদাতা একবারই পাবে। এখন দেখার বিষয়, করদাতারা তাতে কতোটা উৎসাহিত হয়। এনবিআর অনলাইন রিটার্ন জমায় করদাতাদের আগ্রহ বাড়াতে গত ১৬ জুলাই ৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি করদাতাদের আগ্রহ বাড়াতে কী কী করা উচিত সে বিষয়ে সুপারিশ করবে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অনলাইনে রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে সফটওয়্যারের নানা জটিলতার পাশাপাশি রিটার্ন দিতে হলে আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন নিতে হয়। আবার রিটার্ন দিলেও অনলাইনে কর পরিশোধ করা যায় না। বরং ব্যাংকে গিয়েই পে-অর্ডার করতে হয়। এসব কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনলাইনে রিটার্ন জমা নেয়ার উদ্যোগ বিফলে যেতে বসেছে। মূলত প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণেই বহু করদাতা ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে প্রায় ভেস্তে যেতে চলেছে এনবিআরের অনলাইন রিটার্ন জমা নেয়ার উদ্যোগ। তবে ভুক্তভোগী করদাতাদের মতে, এখন অনলাইনে যেভাবে সহজেই কেনাকাটা করা যায়, সেভাবে রিটার্ন ও কর পরিশোধের ব্যবস্থাও সহজ করা দরকার। তাহলেই করদাতাদের কাছে তা জনপ্রিয় হবে।
সূত্র জানায়, বছরে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেয় গড়ে ৬ হাজারের মতো করদাতা। অথচ বর্তমানে দেশে ৪২ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) রয়েছে। তাদের মধ্যে ২২ লাখের বেশি টিআইএনধারী তাদের বার্ষিক কর বিবরণী জমা দেয়। কিন্তু গত বছর সব মিলিয়ে ৫ হাজার ৮৪৮ জন অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়েছে। এর আগেরবার ৫ হাজার করদাতা ঘরে বসে রিটার্ন দিয়েছে, যা রিটার্ন জমা দেয়া মোট করদাতাদের দশমিক ২৫ শতাংশের মতো। তার মানে গড়ে প্রতি ৪শ জন রিটার্ন জমাকারীর মধ্যে একজন করদাতা ঘরে বসে রিটার্ন জমা দিয়েছে। এনবিআরের অনলাইন সিস্টেমটি করদাতাবান্ধব নয়। তাছাড়া অনলাইনে কর পরিশোধের সুযোগ নেই। পাশাপাশি এনবিআর অনলাইনে রিটার্ন জমা নেয়ার বিষয়ে তেমন প্রচারণাও চালায়নি। ফলে অনলাইনে রিটার্ন জমাদানে করদাতারা আগ্রহী হচ্ছে না। তবে এখন থেকে করদাতাদের মধ্যে অনলাইনে রিটার্ন জমায় আগ্রহ বাড়াতে রেডিও-টিভিতে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে। তাছাড়া ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচারণা চালানো হবে। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের কর কার্যালয়ের উদ্যোগে করদাতাদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভাও করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, এনবিআর কর বিভাগের অধীনে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালুর জন্য ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল মেয়াদে স্ট্রেনদেনিং গভর্ন্যান্স ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। ওই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স (বাইট্যাক্স) সিস্টেম চালু করা হয়। ওই প্রকল্পে মোট খরচ হয় ৫৯ কোটি টাকা। তার মধ্যে সিস্টেম বা সফটওয়্যার তৈরির কাজ পায় ভিয়েতনামের একটি প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫১ কোটি টাকায় কাজটির রফা হয়। ওই কাজের অংশ হিসেবে অনলাইনে রিটার্ন দেয়ার সফটওয়্যার, করদাতার তথ্যভান্ডার তৈরি করার কথা ছিল। কিন্তু পুরো অর্থ পরিশোধ করা হলেও এখনো ভিয়েতনামের ওই প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি কাজ বুঝিয়ে দেয়নি।
এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকল্পটির প্রভাব মূল্যায়ন করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমায় আগ্রহী না হওয়ার কারণ হিসেবে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের করদাতারা প্রযুক্তিবান্ধব নয় এবং অনেকের করভীতি আছে। করদাতারা অনলাইনে তথ্য প্রদানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ করদাতা হাতে-কলমে রিটার্ন প্রস্তুত করে আসছে। তাদের অনলাইনে আনাটা বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক করদাতার অনলাইনে কর পরিশোধে ভীতি রয়েছে। তারা ইকুইপমেন্টে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তাছাড়া অনলাইন রিটার্ন কীভাবে জমা দিতে হয় সেসব বিষয়ে এনবিআরের প্রচার-প্রচারণারও অভাব ছিল। ফলে করদাতাদের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য হাফিজ আহমেদ মুর্শেদ জানান, এখন আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে সনাতনী ও অনলাইন দুটি পদ্ধতিই চালু রয়েছে। একটি নতুন পদ্ধতি চালু হলে পরের কয়েক বছর এ নিয়ে করদাতারা তেমন একটা আগ্রহী হয় না। অনলাইন রিটার্ন জমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। করদাতারা বরং কর কার্যালয়ে গিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে কর দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।