ক‘দিন খাবারের চিন্তা করা লাগবে না

0
758

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাটাইমস :
‘আম্পানে আমাগে সব শেষ কুরে দে। ছ্যালে মেয়ে নে চলতে পারতি নে। এ জ্যাগায় আগের মতো কোনো কাজকাম নি। অন্য কোনো দিক যে যাব, তাও যাতি পাত্তিনে। কামায় নেই, চলতি জম্মের কষ্ট হুতি। এ সময় তোমাগো এসব চাল, ডাল, তেল ও লবণ উপকার হবেনে। কদিন খাবারের চিন্তা তো আর কুরা ল্যাগদি না।’

খুলনার উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার বানীশান্তা যৌনপল্লিতে খুলনা ব্লাড ব্যাংক ও খুলনা ফুড ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সোমবার (১৫ জুন) দুপুরে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। এই সহায়তা পাওয়া ব্যক্তিদের একজন যৌনকর্মী তহমিনা বেগম (৪৭)। ত্রাণ পাওয়ার পর এভাবে নিজের অনুভূতি জানান তিনি। এদিন তার মতোই ৯৩ জন যৌনকর্মীকে এই সহায়তা দেওয়া হয়। অবহেলিত বানীশান্তার যৌনপল্লিতে এসব যৌনকর্মীদের মধ্যে চাল, ডাল ও আলু সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ট্রলারযোগে দুর্গম জায়গায় এ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে ছিলেন খুলনা ব্লাড ব্যাংক ও ফুড ব্যাংকের সদস্যরা।

প্রায় ৩২ বছর আগের মোংলা বন্দর অন্যরকম ছিল বলে জানান ওই পল্লির আর একজন যৌনকর্মী ডলি বেগম। তিনি বলেন, এই জায়গার পশুর নদ তখন এত বড় ছিল না। বন্দরে অনেক জাহাজ আসত। তখন কাজকর্ম ভাল হতো। আস্তে আস্তে জাহাজ আসা বন্ধ হয়ে গেল, সঙ্গে ব্যবসাও কমে যায়। এমনিতেই অনেকটা অসুবিধেয় দিন যাচ্ছে। তারমধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় চার মাস হতে চলল পুরোপুরি ব্যবসা বন্ধ। এরমধ্যে আম্পান যেন করোনার মধ্যে আরেক করোনা হয়ে আসল। দুঃখের ওপর কষ্ট। দোকান, ঘর, খাট, সৌর বিদ্যুতের প্যানেল সব ঝড়ে ভেসে গেছে। শুধু বালিশ, তোশক আর একটা পানির ট্যাংক খুঁজে পাই।     
খাদ্যসামগ্রী পেয়ে ভীষণ খুশি রাজিয়া নামের ওই যৌনপল্লির একজন বাসিন্দা। তিনি বললেন, এই পল্লিতে এত দুঃসময় আগে আসেনি। চার মাস সবার কাজ বন্ধ। এরপর ঝড়ে দোকানপাট ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। উপায় না পেয়ে অধিকাংশ মেয়েরা নদীতে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে পোনা ধরছে। পেটতো চালাতে হবে। তবে এই খাবার খেয়ে আপাতত কদিন চলে যাবে।

খুলনা ব্লাড ব্যাংক ও খুলনা ফুড ব্যাংকের সভাপতি মো. সালেহ্ উদ্দীন সবুজ বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। তখন মানুষের সহায়তা করার লক্ষ্যে তহবিল গঠন করে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। পরে ওই তহবিল থেকে ঘরবন্দী মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। এরই আওতায় আমাদের সমাজের এক শ্রেণির মানুষ যৌনকর্মীদের ঘরবাড়ি ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়ায় ও তাঁদের কাজকর্ম বন্ধ থাকায় খাদ্যসহায়তা দেয়া হয়েছে।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মফস্বল সংবাদকর্মীদের কথা ভেবে দাকোপ রিপোর্টার্স ক্লাবের ২৮ জন সদস্যদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়া বানীশান্তার বিভিন্ন জায়গায় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা। উপকূলজনপদ মানুষের মধ্যে তাঁরা প্রায় ২০০ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে।