এইচএসসির বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা চেয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ

0
230

টাইমস ডেস্ক:
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে এবার উচ্চমাধ্যমিক তথা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করেই এইচএসসির ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে এক পরীক্ষার্থীর পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকবিভাগের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং ৯টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করে এই নোটিশ পাঠানো হয়। আগামী ৩ দিনের মধ্যে নোটিশে উল্লিখিত দাবি মেনে না নিলে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রেজিস্ট্রি ডাক যোগে শতাব্দী রায় নামের এক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর পক্ষে এই নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। নোটশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন আইনজীবী নিজে। শতাব্দী রায়ের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, নোটিশে শিক্ষার্থী দাবি করেছেন, জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রস্তত করলে তিনিসহ আরও অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করার প্রস্তুতি থাকার পরেও পূর্বের জিপিএর কারণে ভাল ফলাফল বঞ্চিত হবেন। শতাব্দী রায় সাভারে অবস্থিত মোফাজ্জল-মোমেনা চাকলাদার মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী এবং ২০২০ সনের উচ্চমাধ্যমিকপরীক্ষার একজন পরীক্ষার্থী। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের গড় করার কারণে একদিকে যেমন অনিয়মিত, একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য, প্রস্তুতিহীন শিক্ষার্থীর জন্য সুযোগ তৈরি হবে, তেমনি কোনো কারণে জেএসসি কিংবা এসএসসিতে কম জিপিএ পাওয়া মেধাবী, পরিশ্রমী শিক্ষার্থীরা তাদের প্রচেষ্টা প্রমাণে ব্যর্থ হবে। পূর্বের ফলাফলের গড় করে পরবর্তী পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারণ এক ধরনের জোরপূর্বক এবং বেআইনি বলে নোটিশে বলা হয়েছে, যা দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ আইনত করতে পারেন না। উল্লেখ্য, গত বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করেই এবারের এইচএসসির ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে পরীক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের কাছে আমরা মতামত ও পরামর্শ নিয়েছি। পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্বের অনেক দেশের পরিস্থিতি দেখে আমরা ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরাসরি পরীক্ষা বাতিল করে পরীক্ষার্থীদের জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি-সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ওপর মূল্যায়ন করে গ্রেড নম্বর নির্ধারণ করা হবে।
অটোপাসের সিদ্ধান্তে দুশ্চিন্তায় অনেক শিক্ষার্থী: এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ছাড়া রেজিস্ট্রেশন করা সকল শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেয়ার সিদ্ধান্তকে অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থী নেতিবাচকভাবে সমালোচনা করেছেন। বরং তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের গড়ের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার ফল নির্ধারণ করা হবে বলে যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তা আসলে যৌক্তিক নয়। তারা বলছেন, অনেকে এই দুটি স্তরে খারাপ করলেও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সেটি পুষিয়ে নেয়। কিন্তু এবার সেই সুযোগ আর থাকছে না। আবিদান হাফসা নামের এক পরীক্ষার্থী জানান, জেএসসিতে তিনি জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তবে অসুস্থ থাকার কারণে এসএসসির ফল ভালো করতে পারেননি। তাই এইচএসসির ফলে সে বিষয়টি পুষিয়ে নেয়ার প্রস্তুতিও ছিল। তবে এমন সিদ্ধান্তের কারণে তার আর সে সুযোগ থাকল না। তিনি বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা হলে হয়তো আমি রিকভার করে আরও ভালো করতে পারতাম। আমার বিশ্বাস ছিল যে, আমি ভালো রেজাল্ট করতে পারব। এজন্য অনেক ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সকলকে অটোপাসের সিদ্ধান্ত হওয়ায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না। মিরপুরে হাসনা বানু নামের একজন অভিভাবক বলেন, পরীক্ষা ছাড়া পাস করানোর বিষয়টি আসলে ভালো সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ সব বাচ্চা জেএসসি বা এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করেছে বিষয়টি তেমন নয়। অনেকে নিচের স্তরের পরীক্ষাগুলোর ফল খারাপ করলেও উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে ভালো ফল পেয়ে থাকে। এবার সেই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল। তাদের ভবিষ্যৎ জীবনেও এর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন এই অভিভাবক। তিনি বলেন, অনেকে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করবে। রাজধানীর একাধিক পরীক্ষার্থী বলেন, সরকারি এই সিদ্ধান্তে কেউ কেউ অনেক বাড়তি সুবিধা পাবে, কেউ আবার ভালো প্রস্তুতি নিলেও পরীক্ষা দিতে না পারায় পিছিয়ে পড়বে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে সমস্যায় পড়বে। জিপিএ পয়েন্ট কম থাকায় অনেকে ভালো মানের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করারও সুযোগ পাবে না। আপত্তি রয়েছে। তারা আরও জানান, এসএসসি ও এইচএসসির ফল যেহেতু মেডিকেল, বুয়েট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই এ ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত অনেক পরীক্ষার্থীর জন্যই বাধার সৃষ্টি করতে পারে। যা নিয়ে চিন্তিত তারা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক রায়হান আরা জানান, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে যেহেতু নিরাপত্তার কারণে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়, সে হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তবে একই সঙ্গে, এটি যেহেতু একটি বিশেষ পরিস্থিতি, তাই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালের বিষয়টি যেহেতু সব থেকে আলাদা, সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অবশ্যই চিন্তা করার সুযোগ থাকবে। কোন কোন ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তের জন্য ঝামেলা হতে পারে সেই বিষয়গুলো নজরে আনার আহ্বান জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। এই ফলের কারণে যদি কোনো শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ না পায় বা সমস্যা তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন।