অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন লাখ লাখ নতুন পাসপোর্টপ্রত্যাশী

0
166

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: নতুন পাসপোর্টের অপেক্ষায় লাখ লাখ আবেদনকারী অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। দেশের কোনো পাসপোর্ট কার্যালয়েই মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বা ই-পাসপোর্টের নতুন আবেদন জমা নেয়া হচ্ছে না। কবে থেকে আবেদন নেয়া হবে সে তথ্যও মিলছে না। শিগগিরই নতুন পাসপোর্ট দেয়া হবে কিনা পাসপোর্ট অফিস সংশ্লিষ্টরা তা বলতে পারছে না। করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২৩ মার্চ থেকে পাসপোর্টের নতুন আবেদন নেয়া বন্ধ রয়েছে। এখনো পাসপোর্ট অফিসগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। অবশ্য করোনা সংকটের মধ্যেই এমআরপির রি-ইস্যু বা মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন জমা নেয়ার কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। খুব প্রয়োজনে কিছু কিছু নতুন আবেদন জমাও নেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী ও পাসপোর্ট অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কবে থেকে নতুন আবেদন জমা নেয়া শুরু হবে সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে পাসপোর্ট অফিসগুলো সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনাও পায়নি। তবে বিপুলসংখ্যক লোকজন প্রতিদিনই পাসপোর্ট অফিসে এসে খোঁজ নিচ্ছে। পাশাপাশি ফেসবুকে পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন পেইজ ও গ্রুপগুলোতে নতুন আবেদন কবে জমা নেয়া হবে প্রতিদিন শত শত মানুষ জানতে চাইছেন। অনেকের অভিযোগ, রি-ইস্যুর জন্য আবেদন জমা দিয়েও সময়মতো পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি কেউ কেউ করোনার আগে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে আবেদন করেও এখনো পাসপোর্ট হাতে পাননি।
সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে সারাদেশে প্রতিদিন ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার পাসপোর্টের জন্য নতুন ও রি-ইস্যু আবেদন জমা পড়তো। তার মধ্যে ঢাকার আগারগাঁওয়ে প্রতিদিন ১৮শ’ থেকে দুই হাজার আবেদন জমা নেয়া হতো। কিন্তু সাড়ে ৪ মাসের বেশি সময় ধরে ওই কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বড় ধরনের জটের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন আবেদন জমা নেয়া শুরু হলে সক্ষমতা অনুযায়ী ওই চাপ সামলানোও কঠিন হয়ে পড়বে। সাধারণত জরুরি ফি দিয়ে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে এবং সাধারণ ফি দিয়ে ২১ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু চলমান সময়ে চাপ না থাকলেও রি-ইস্যু আবেদনের বিপরীতে বা আগে জমা নেয়া আবেদনের বিপরীতে পাসপোর্ট সরবরাহেও কয়েক মাস লেগে যাচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, প্রায় একযুগ আগের এমআরপি মেশিনগুলো দিয়েই পাসপোর্ট অধিদফতরের কার্যক্রম চলছে। ওসব মেশিনের সক্ষমতা কমে এসেছে। তাছাড়া পুরো কার্যক্রম ই-পাসপোর্টে চলে যাওয়ায় নতুন করে এমআরপির বই আমদানিতে ধীরগতি রয়েছে। পুরোনো মেশিন এবং বই সংকটের কারণে সময়মতো এমআরপি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া চাহিদার তুলনায় ই-পাসপোর্টেও পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। সেজন্য ই-পাসপোর্টে আবেদন করেও ছবি, চোখের মণি বা তথ্য নেয়ার জন্য লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
এদিকে পাসপোর্ট অধিদফতর সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশেষ ধরনের একটি বদ্ধ কক্ষে এমআরপি প্রিন্ট করা হয়। সেখানে একাধিক বিশেষজ্ঞ দায়িত্ব পালন করলেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গ্রুপ আকারে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীও করোনা আক্রান্ত। আবার আক্রান্তদের আশপাশের লোকজনকেও ছুটিতে পাঠাতে হয়েছে। সেজন্য সবকিছু দ্রুত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্টও সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী জানান, নতুন পাসপোর্টের আবেদনের প্রেক্ষিতে আবেদনকারীর আঙুলের ছাপ ও খুব কাছ থেকে ছবি নিতে হয়। ই-পাসপোর্টের জন্য চোখের মণি ও কয়েকটি আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পাশাপাশি দৈনিক অনেক মানুষের আঙুলের ছাপ বা চোখের মণি নিতে গিয়ে কর্মকর্তাদেরও ওই ঝুঁকিতে পড়তে হয়। সেজন্য নতুন আবেদন জমা নেয়া বন্ধ রয়েছে। তবে দ্রুত যাতে নতুন আবেদন নেয়া যায় সেজন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনা করা হবে। চাহিদা এবং ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই কার্যক্রমটা দ্রুত চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।