বিচার বিভাগ নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করা আইনজীবীর ক্ষমা প্রার্থনা

0
177

খুলনাটাইমস: ফেইসবুক প্রধান বিচারপতি ও বিচার বিভাগ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যে অনুতপ্ত হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। ফেইসবুকে এমন মন্তব্য গুরুতর অপরাধ হয়েছে স্বীকার করে এ আইনজীবী প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন, বিচার বিভাগের সম্মান-মর্যাদাকে আঘাত করে এমন কোনো মন্তব্য, কাজ ভবিষ্যতে তিনি করবেন না। আদালতের তলবে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচার কক্ষে হাজির হয়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তবে এ আইনজীবী আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে রেহাই পাবেন কিনা, তা জানা যাবে আগামী রোববার। সর্বোচ্চ আদালত ওইদিন বিষয়টিতে আদেশের জন্য রেখেছে। আদালতে রুলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। আর আইনজীবী মামুন মাহবুবের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন, আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ আরও অনেকেই। শুনানিতে মাহবুবে আলম ভারতসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে ‘আদালত অবমাননা’ মামলার নজির তুলে ধরে বলেন, “টুইট মন্তব্যের কারণে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত শুক্রবার প্রবীণ আইনজীবী ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা কর্মী প্রশান্ত ভূষণকে আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন। আজ এ বিষয়ে আদেশ হওয়ার কথা রয়েছে। আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব ফেইসবুক পোস্ট দিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তাতে বিচার বিভাগ, আদালতের মর্যাদা-সম্মানকে আঘাত করা হয়েছে। এতে আদালত অবমাননা হয়েছে। আর আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুবের পক্ষে আইনজীবীরা বলেন, সৈয়দ মাহবুব হোসেন ফেইসবুকে মন্তব্য করে নিঃসন্দেহে দোষ করেছেন। তবে পরে ভুল বুঝতে পেরে পোস্টটি মুছে ফেলে আরেকটি পোস্ট দিয়েছেন। সেই পোস্টে তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছেন। তিনি এই কাজের জন্য অনুতপ্ত। তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছেন। ভবিষ্যতে তিনি আর এমন কাজ করবেন না বলে আনিজীবীরা নিশ্চিয়তা দিয়ে শেষবারের মত তাকে সুযোগ দেওয়ার আর্জি জানান। এক পর্যায়ে সৈয়দ মামুন মাহবুবের স্ত্রী আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলের চেম্বার থেকে ভার্চুয়াল আপিল আদালতে যুক্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনিও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিনও সমিতির পক্ষ থেকে সৈয়দ মামুনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনিও বিচারপতিদের প্রতিশ্রুতি দেন, ভবিষ্যতে আইনজীবী সৈয়দ মামুন এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন না। যদি ঘটান তাহলে সমিতি থেকে তার সদস্যপদ বাতিল করা হবে। এসময় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, “বারকে জানিয়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কনস্টিটিউশনাল কোর্ট কি কোনো দেশে বন্ধ থাকে? থাকতে পারে। মহামারী শুরু হওয়ার পর আপনারা বলেছেন, কোর্ট বন্ধ রেখেছি। কোনো একটা পদক্ষেপ আমি আপনাদের না জানিয়ে নিইনি। এরপর আইনজীবী মামুন মাহবুব ডায়েসে রাখা ল্যাপটপের সামনে ভার্চুয়ালি হাত জোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন আদালতের কাছে। এসময় তিনি বলেন, “ফেইসবুকে এ মন্তব্য করে আমি গুরুতর অপরাধ করেছি। আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে শেষবারের মত আমাকে ক্ষমা করুন, আমি অনুতপ্ত। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত সোয়া দুই ঘণ্টা শুনানির সময় এই আইনজীবী ডায়েসের সামনে দাঁড়িয়েই ছিলেন।
ফেইসবুক পোস্টে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচার বিভাগ সম্পর্কে আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুবের অবমাননাকর মন্তব্যের বিষয়টি গত ১২ আগস্ট প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চের বিচারকাজ চলার সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নজরে আনেন। এরপর এ আইনজীবীকে তলব করে আপিল বিভাগ। এই মন্তব্যের কারণে তার বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না, আপিল বিভাগের এক নম্বর বিচার কক্ষে সশরীরে হাজির হয়ে তার ব্যাখ্যা দিতে বলে আদালত। সেই অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে ভুল শিকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব।