৫ মিনিটেই বদলে যায় আইএমইআই নম্বর, ফিঙ্গার প্রিন্ট!

0
470

অনলাইন ডেস্কঃ ছিনতাই কিংবা চোরাই মোবাইল মাত্র ৫-৭ মিনিটেই খুব সহজে আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি) নম্বর পরিবর্তন করে সেই মোবাইল অপরাধীদের কাছে বিক্রি করা হয় দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ মূল্যে। মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে জঙ্গি কার্যক্রম, অপহরণ, হত্যা, গুম, মাদক ব্যবস্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড করে অপরাধীরা।
আর রাজধানীতে এই আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের সহজ কাজটি করত ১৮ বছর বয়সী মো. মাসুদ লাকুরিয়া। প্রতিটি মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের জন্য সে পেত ৩০০ টাকা। প্রতিদিন আইএমইআই পরিবর্তনে চোরাই মোবাইলসহ ডজনখানেকের বেশি মোবাইল আসত তার কাছে।
গতকাল সোমবার (২২ অক্টোবর) দিনব্যাপী রাজধানীর গুলিস্থান এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের মূলহোতাসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এসময় আইএমইআই পরিবর্তন করা বিপুল পরিমাণ মোবাইল, আইএমইআই পরিবর্তনের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, চক্রের মুল হোতা মো. মাসুদ লাকুরিয়া, মো. রিপন, মো. রাশেদ খান, মো. আনিস মোল্লা, মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. পলক, মো. রাশেদুল ইসলাম, মো. নাইম সরদার, মো. স্বপন, মো. মোতালেব, মো. রানা হামিদ, মো. আব্দুল মান্নান, মো. মাসুদ রানা, মো. নাজিম ও মো. কামাল হোসেন।
মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এমরানুল হাসান।
র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক জানান, গুলিস্থান পাতাল মার্কেটের বিসমিল্লাহ টেলিকমে অভিযান চালিয়ে মাসুদ লাকুরিয়াকে মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা অবস্থায় মোবাইল ও মোবাইলের বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গুলিস্থানের মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম মার্কেটের ১১ দোকানে অভিযান চালানো হয়।
এসময় আইফোন, স্যামস্যাং, অপ্পো, সনি ভিবো, শাওমিসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের ৫৩১টি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ, দুটি কম্পিউটার, আইএমইআই পরিবর্তনের ৬টি ডিভাইস জব্দ ও ১৫ জনকে আটক করা হয়।
এমরানুল হাসান বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন অভিযানের সময় আটককৃতদের মোবাইল ফোনে বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখতে পাই। তার কারণ অপরাধের পরই অপরাধীরা মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে ফেলে। এই অভিযানে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মোবাইল সিম উদ্ধার করা হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন নাশকতার পরিকল্পনা ছিল কিনা তা এখনও জানা যায়নি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এই ব্যাপারে আরও তথ্য জানা যাবে। চক্রটি আইএমইআই পরিবর্তনের সাথে সাথে ফিঙ্গার প্রিন্টও পরিবর্তন করে দিতো।’
র‌্যাব জানায়, গুলিস্থানের সংঘবদ্ধ এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে চোরাই ও ছিনতাই হওয়া দামি মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে তা বাজারে বিক্রি করতো। পরবর্তীতে মোবাইলগুলো অপরাধীরা কিনে জঙ্গি কার্যক্রম, অপহরণ, হত্যা, গুম ও মাদক ব্যবসার কাজে ব্যবহার করত। ফলে এই মোবাইলগুলো ট্রাকিং করেও অপরাধীদের সনাক্ত করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মাসুদ লাকুরিয়া এক বছর ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত। মূলত আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন শিখেছে তার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে। সে দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় মাসুদ লাকুরিয়া গুলিস্থান এলাকায় এই ব্যবসা নিজের নিয়ন্ত্রণে চালাচ্ছিলো। প্রতিদিন ডজনখানেকের বেশি মোবাইলের আইএমইআই ও ফিঙ্গার প্রিন্ট পরিবর্তন করতো সে। এই কাজে তার সময় লাগত মাত্র বড়জোর ৫ মিনিট।
এরইমধ্যে র‍্যাব-৩ সদস্যরা রাজধানীর আলী ইলেকট্রনিক্স, সিমলা ইলেকট্রনিক্স, সাকিব ইলেকট্রনিক্স, আজমেরি ইলেকট্রনিক্স, আবির ইলেকট্রনিক্স, সুমাইয়া টেলিকম, ইলেকট্রনিক্স কর্নার, ইলোক কনিক্স কর্নার, আলামিন ইলেকট্রনিক্স, রহমত ইলেকট্রনিক্স এবং সিটি ইলেকট্রনিক্সে অভিযান চালিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব সিও জানান, এই ডিভাইস দিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্টও পরিবর্তন করা সম্ভব।