৩ মাসের জন্য চালু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ফ্লাইট

0
158

টাইমস ডেস্ক:
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে সীমিত সময়ের জন্য ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে ঢাকা-দিল্লী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ লক্ষ্যে তিন মাসের জন্য ‘এয়ার ট্রাভেল বাবল’ চুক্তি করতে যাচ্ছে উভয় দেশ। ইতোমধ্যে এ চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে উভয় দেশ একে অন্যের প্রস্তাবে সম্মতি প্রকাশ করেছে। ফলে শিগগরিই দুই দেশের মধ্যে এ চুক্তি সম্পাদিত হতে যাচ্ছে। তবে কবে নাগাদ চুক্তি হতে পারে কিংবা ফ্লাইট চালু হতে পারে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেনি। জানা গেছে, এটি হলে বিজনেস, মেডিকেল ও অফিসিয়াল ক্যাটাগরিতে ফের ঢাকা-দিল্লি যাতায়াত করতে পারবেন যাত্রীরা। ‘এয়ার ট্রাভেল বাবল’ চুক্তির বিষয়ে মতামত জানতে চেয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েকটি প্রস্তাব পাঠায় বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। পরে গত ৭ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে সেই প্রস্তাবের উত্তর পাঠায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর দিন সেই প্রস্তাব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বাংলাদেশ মিশন। যেখানে দেখা যায়, ভারত এ চুক্তির বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, চুক্তির বিষয়ে ভারতের প্রস্তাবের বিষয়ে আমাদের মতামত পাঠানো হয়। এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব উভয় পক্ষের রয়েছে। তবে এখনো কোনো উত্তর আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, ভারত যদি তাদের প্রস্তাবগুলো ঠিক রাখে, তাহলে খুব শিগগিরই এ চুক্তি সম্পাদন করা হবে। জানা যায়, বেবিচক ভারতের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল, ‘এয়ার বাবল’ চুক্তির অধীনে উভয় দেশের মধ্যে মোট ৫৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। যার মধ্যে বাংলাদেশের বিমান সংস্থাগুলো পরিচালনা করবে ২৮টি এবং ভারতের বিমান সংস্থাগুলো পরিচালনা করবে ২৮টি। এতে সপ্তাহে উভয় দেশে যাতায়াত করতে পারবে ৫ হাজার যাত্রী। এ প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে ভারত তাদের উত্তরে জানিয়েছে, তাদের দেশের ৫টি এয়ারলাইন্স (এয়ার ইন্ডিয়া, স্পাইস জেট, গো এয়ার, ইন্ডিগো ও ভিস্তারা) ঢাকা-দিল্লি রুটে ২৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। তাদের ফ্লাইটগুলো চলবে দিল্লি-মুম্বাই-চেন্নাই-কলকাতা-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার এ ২৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এর মধ্যে বিমানের ফ্লাইটগুলো চলবে ঢাকা-দিল্লি-ঢাকা ও ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে, ইউএস বাংলার ফ্লাইটগুলো চলবে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা ও ঢাকা-চেন্নাই-ঢাকা রুটে এবং নভো এয়ারের ফ্লাইটগুলো চলবে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে। এ ছাড়া উভয় দেশের যাত্রীদের ৭২ ঘণ্টা আগে করোনাভাইরাস পরীক্ষার পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করা ও ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে ভারত। করোনা সংক্রমণের কারণে এ চুক্তিতেও বেশ কিছু বিধি-নিষেধ থাকবে। তবে ট্যুরিস্ট ভিসা আপাতত বন্ধ থাকবে। বিজনেস, মেডিকলে ও অফিসিয়ার ক্যাটাগরিতে যাত্রীরা উভয় দেশে যাতায়াত করতে পারলেও আপাতত ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ থাকবে।
বিপাকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা: বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক বিমান (এয়ার বাবল) চলাচল শুরু না হওয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য ভিসার আবেদন করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নয়াদিল্লি গিয়ে ভিসার আবেদন করতে হয়। কারণ এস্তোনিয়া, বেলজিয়াম, লাটভিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের ঢাকায় ভিসা কনস্যুলার সেবা নেই। বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসলাম হোসেন বলেন, বেলজিয়ামসহ কয়েকটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করতে চাই। কিন্তু এসব দেশের কনস্যুলার নয়াদিল্লিতে। কিন্তু এয়ার বাবল চালু না হওয়ায় সেখানে যেতে পারছি না। একই কথা বলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রণব চক্রবর্ত্রীসহ অনেকে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ভারতের সঙ্গে এয়ার বাবল চালু করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক। তিনি বলেন, বিশেষভাবে রক্ষণশীল বলে পরিচিত জাপানও এয়ার বাবল কার্যকর করেছে। বিমান ভ্রমণের বিষয়গুলো উভয় দেশর জন্য উপকারী। শিক্ষার্থী এবং যারা চিকিৎসা নিতে চান, তাদের বিমান ভ্রমণের বিকল্প থাকা উচিত। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আগস্টে বাংলাদেশ সফরের সময় শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার অনুমতি দিতে দুই দেশের মধ্যে এয়ার বাবল স্থাপনের প্রস্তাব করেছিলেন। বাংলাদেশ সরকার এই প্রস্তাবে স্বাগতও জানিয়েছিল। কিন্তু এখনো দেশ দুটির মধ্যে এয়ার বাবল চালু হয়নি। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জানান, ভারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এয়ার বাবল চুক্তি করেছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। উড়োজাহাজ উড্ডয়নের আগে ও অবতরণের পরে কঠোরভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কারণে অনেক দেশ একই রকম ব্যবস্থা নিয়েছে। ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারত এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, মালদ্বীপ, কানাডা, জার্মানি, জাপানসহ ১৫টিরও বেশি দেশের সঙ্গে এয়ার বাবল কার্যকর করেছে। তিন মাসের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে এয়ার বাবল চালুর যে সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে তাতে এসব শিক্ষার্থী উপকৃত হবে।