সড়ক দুর্ঘটনার বিচার

0
205

সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের এক নিত্যনৈমিত্তিক চিত্র। যা বহু আলাপ-আলোচনা, নিয়মবিধি অনুসরণ করা থেকে আরম্ভ করে আইন প্রণয়নসহ মামলা-শাস্তি কোন প্রক্রিয়ায়ই থামানো সম্ভব হয়নি। করোনা দুর্যোগে পথ দুর্ঘটনার কমতির কোন লক্ষণও দৃশ্যমান হয়নি। সড়ক পরিবহনের অব্যবস্থাসহ নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করা এবং অদক্ষ চালকের হাতে গাড়ি ও যাত্রী জিম্মি হয়ে যাওয়া এক নিত্যচিত্র। দুর্ঘটনার কারণে অনেক ক্ষেত্রে মামলা পর্যন্ত হয় না- শাস্তি তো দূরের কথা। আলোচিত দুর্ঘটনায় যখন সড়ক-মহাসড়ক এবং জনসাধারণ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, সেখানে দুর্ঘটনাটি মামলা পর্যন্ত গড়ায়। পরবর্তীতে আইনি প্রক্রিয়া এবং শাস্তি আদৌ হয় কি না তাও প্রশ্নবিদ্ধ। আর এমন সব নৈরাজ্য, অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলায় পতিত সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা আজ অবধি জনবান্ধব হয়ে উঠতে পারেনি। মাত্রাতিরিক্ত যানজট, চালকের বেপরোয়া গতি ছাড়াও মেয়াদোত্তীর্ণ জরাজীর্ণ গাড়ি রাস্তায় নামানো-সব মিলিয়ে প্রতিদিনের যাত্রাপথের যে দুর্ভোগ, তা বলে শেষ করা যায় না। লাইসেন্সবিহীন চালকের আধিক্যও কম নয়। আবার বর্তমানে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ চালকদের লাইসেন্স দিতেও পারছে না। গাড়ি চালনার অনুমোদনসাপেক্ষে তাদের সক্ষমতাকে সনদপত্রের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াও বর্তমানে স্থবিরতার মুখে। কারণ বিআরটিএ নতুন লাইসেন্স তৈরি করতে পারছে না। পুরনো লাইসেন্সের নবায়ন করাও জট পাকানো। ফলে গাড়ির সংখ্যা বাড়ার পথে চালক বৃদ্ধির যে সুযোগ তৈরি হয় সেখানেও রয়েছে হরেক রকম গাফিলতি ও জটিলতা। চালক যদি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হয়ে অনুমোদন ব্যতিরেকে গাড়ি চালায়, তাহলে অসহায় যাত্রী ও পথিকদের প্রাণ ঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণ। আর ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে নামানো-সেও এক রচম সর্বনাশা বিষয়। বিশিষ্টজনেরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন, বিচারহীনতার অপসংস্কৃতিই পথ দুর্ঘটনাকে জিইয়ে রাখতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে। অপরাধী যখন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি থেকে অব্যাহতি পেয়ে যায় সেক্ষেত্রে নতুন দুর্ঘটনা শুরু হতে সময়ও লাগে না। সব থেকে বেশি জরুরী সড়ক দুর্ঘটনার যাবতীয় অনিয়ম প্রতিরোধ করা, যাতে অসহায় যাত্রী এবং পথচারী বিপাকে না পড়ে। সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে তীক্ষè নজরদারি বাড়ানোও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা। এ ছাড়া দ্রুতগতি আর স্বল্প গতি যানের ভিন্ন মাত্রার সড়ক নির্মাণও অপরিহার্য। সড়কের পাশে ছোট লেন করে রিক্সা, সাইকেলসহ অন্যান্য কম গতিসম্পন্ন যান চলাচলের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। এ ছাড়া পথচারী, যাত্রী এমনকি চালকদেরও সড়ক পরিবহন আইনকে যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজনে পদচারী সেতু ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা একান্ত আবশ্যক।