সুন্দরবন রক্ষা ও দস্যু দমনে খুলনা জেলা পুলিশের অভিযান

0
766
ওবায়দুল কবির সম্রাট:
সুন্দরবনের বনজ সম্পদ রক্ষা ও দস্যু দমনে পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে খুলনা জেলা পুলিশ। সুন্দরবন কেন্দ্রীক অপরাধকে ঘিরে বিশেষ এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।পুলিশ জানায়, রবিবার ( ৫ জুলাই) সকাল ১০ টায়  খুলনা জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ (বিপিএম) এর নির্দেশনায়  খুলনা জেলা (দক্ষিণ) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ   এর নেতৃত্বে কয়রা  উপজেলার কাটকাটা এলাকা থেকে অভিযান শুরু করে গহীন সুন্দরবন গেওয়া খালি, চাম্টা,জাবা,শলক মনিসহ গহীন  সুন্দরবনে  রাত ১০ টা পর্যন্ত অভিযান  পরিচালনা করেন কয়রা থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ রবিউল হোসেন।এস আই আসাদুল ইসলাম, এস আই শাহাবুদ্দীন গাজী , এস আই শারাফাত, এস আই আবু সায়েম, এ এস আই খায়রুলসহ ১৫ জন পুলিশ সদস্য অংশ নেয় এ অভিযানে।
অভিযান শেষে  কয়রা থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ রবিউল হোসেন বলেন, সুন্দরবনকে আমরা স্থানীয়দের ও দেশবাসীর কল্যাণে নিরাপদ রাখতে কাজ করছি। এই বনকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাক, তবে অপরাধ যেন কমে আসে সে জন্য কাজ চলছে । এর জন্য শুধু সুন্দরবনে বিষ প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে নয়, যারা দস্যুতা করে, বাঘ-হরিণ শিকার করে তাদের প্রতি আমাদের কঠিন নিষ্ঠুরতা থাকবে। তাদের সবার প্রতি আমাদের একটাই কথা, তারা যেন ভালোর পথে ফিরে আসে, নয়তো তাদের ফল ভোগ করতে হবে।প্রথমদিন অভিযানে কয়েকটি হরিণ মারা ফাঁদ উদ্ধার হয়েছে বলে জনান তিনি। খুলনা জেলা (দক্ষিণ) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন , সুন্দরবনের মধ্যে চোরা শিকারীরা বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার (বাঘ) শিকার করে তার চামড়া, হাড় ও মাংশপেশী বেশীদামে বিক্রি করছে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে লোনা পানির কুমিরও মারা পড়ছে। প্রতিনিয়ত চোরাই ভাবে মায়া ও চিত্রাহরিন জাল ও ফাদঁ পেতে শিকার করছে। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন থেকে এ মায়াবী হরিণের বিচরণ। এক শ্রেনির হরিণ শিকারীরা অসাধু কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী ও কিছু কিছু মাছ কোম্পানীর সহায়তায় জেলে বেশে বনের গহীনে প্রবেশ করে। বনের মধ্যে অস্ত্র বা ফাঁদ পেতে শিকার করছে অহরহ হরিন যা লোকালয় এনে বেশি মুল্যে বিক্রি করছে তারা। তাছাড়া জেলেরবেশে বনে প্রবেশ করে নদী ও খালে গিয়ে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছে। সুন্দরবনের খালের মধ্যে বিষ প্রয়োগ করলে শুধু মাছ নয় এ খালে যা কিছু থাকে সব কিছুই মরে যায়। আর এ বিষ যুক্ত মরা মাছ অন্য পশুপাখী খেলে সেগুলোও মারা যায়। যার ফলে বনের পরিবেশ নষ্টসহ ক্ষতি হয় অপুরনীয়। একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনসহ মানুষসৃষ্ট নানা কারণে সুন্দরবনের প্রাণীকুল সংকটের মধ্যে রয়েছে। তার মধ্যেও মানুষের নিষ্ঠুরতা। এ বনে নানা প্রজাতির পশুপাখী ছাড়াও রয়েছে মৎস্য সম্পদের ভান্ডার, যা এ বনের জন্য এক বিরল দৃষ্টান্ত। প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় সুন্দরবনের ভুমিকা অপরিসীম। তাই এ বনের বিপুল পরিমাণ গাছপালা ও পশুপাখি রক্ষার জন্য বিশেষ করে সরকারের নির্দেশনা মতে চলতি দুই মাস মৎস্য সম্পদের পাশাপাশী নানা অপরাধ মুলক কর্মকান্ডসহ বনের দস্যুদমন ও বনজ সম্পদ রক্ষায়ও এখন থেকে কাজ করবে পুলিশ। তাই আইজিপি মহাদয়ের নির্দেশ ক্রমে জেলা পুলিশ সুপারের দিক নির্দেশনায়  এ অভিযান অব্যাহত থাকার ঘোষনা দেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।তিনি আরও বলেন, সব ধরণের অপরাধ দমনে সাগর-সুন্দরবনে অভিযানের ক্ষেত্রে পুলিশের সক্ষমতাে এখন নেই। তবে বর্তমান সক্ষমতা নিয়েই আমরা শুরু করেছি। উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনে আধুনিক ও দ্রুতগামী নৌ যান নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
অভিযানের প্রয়োজনীয় জলযান সংগ্রহ ও অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।