সিএসআর খাতে অর্থ ব্যয়ে কার্পণ্যে শাস্তির মুখে পড়বে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান

0
199

টাইমস ডেস্ক:
কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর খাতে অর্থ ব্যয়ে অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানই আগ্রহী হচ্ছে না। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ৮ ব্যাংক ও ৮ নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিএসআর খাতে এক টাকাও খরচ করেনি। তাছাড়া ওই সময় সিএসআর খাতে খুব সামান্য ব্যয় করেছে আরো ১৪টি ব্যাংক। যাদের সামাজিক কার্যক্রমে ব্যয়ের পরিমাণ এক কোটি টাকারও কম। আর আইডিএলসি, আইপিডিসি, লংকাবাংলা ও উত্তরা ফাইন্যান্স ছাড়া বাকি সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সামাজিক ব্যয় লাখের ঘরেই সীমাবদ্ধ। করোনাকালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের প্রবণতা কমে যাওয়াকে সংশ্লিষ্টরা নেতিবাচক হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত সিএসআর খাতে অর্থ ব্যয় না করা ব্যাংক ৮টি হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, বিদেশি কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। তাছাড়া ৮টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স ও প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স। এতোদিন বিষয়টি ঐচ্ছিক থাকায় তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তেমন কিছু বলার ছিল না। তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী চলতি বছরের জুলাই থেকে সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কর্মসূচির ৬০ শতাংশই করোনা সংকট মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যথায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
সূত্র জানায়, চলতি ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে সিএসআর খাতে ব্যাংকগুলো প্রায় ৫১৭ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যা আগের ছয় মাসের তুলনায় প্রায় ১০৮ কোটি টাকা বেশি। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত খাতটির ব্যয় ছিল প্রায় ৪০৯ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে সব নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিএসআর খাতে ব্যয় করেছে প্রায় ১২ কোটি টাকা, যা আগের ষান্মাসিকের তুলনায় প্রায় ৯ কোটি টাকা বেশি। ২০১৯ সালের শেষ ছয় মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিএসআর খাতে ব্যয় করেছিল প্রায় ৩ কোটি টাকা। কিন্তু গত ১৭ জুন এক প্রজ্ঞাপনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সিএসআর কর্মসূচির ব্যয়ের ৬০ শতাংশই স্বাস্থ্য খাতে করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা উপকরণ ও সুরক্ষাসামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া স্বাস্থ্য খাতে নির্ধারিত ব্যয়ের যে সীমা রয়েছে তা নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সিএসআর ব্যয় বণ্টনে স্বাস্থ্য খাতে ৬০ শতাংশ ছাড়াও শিক্ষা খাতে ৩০ শতাংশ এবং জলবায়ু ঝুঁকি তহবিল খাতে ১০ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব বিবেচনায় কোভিড-১৯ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে নির্ধারিত ৬০ শতাংশ ব্যয়ের পরিমাণ এবং যথার্থতা নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ফরম্যাটে এ সংক্রান্ত ব্যয়ের তথ্য পাঠানোর কথাও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোরশেদ মিল্লাত জানান, যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে তা ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। এখানে সিএসআরের বিষয়টি ঐচ্ছিক ছিল। সে কারণে যারা সিএসআর খাতে ব্যয় করেনি তাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী ‘নিট প্রফিট আফটার টেক্স’ সরকারকে আয়কর দেয়াসহ যাবতীয় খরচ শেষে কোনো ব্যাংক লাভে থাকলে সে ব্যাংককে করোনা উপলক্ষে সিএসআর বাবদ লাভের ৬০ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। কোনো ব্যাংক এ আদেশ অমান্য করলে তাকে অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। চলতি বছরের জুলাই থেকে নতুন এ নিয়ম কার্যকর হবে। সে হিসাবে ডিসেম্বরের প্রতিবেদনে কোনো ব্যাংক উল্লিখিত নিট লাভে থাকার পরও ১০০ টাকায় ৬০ টাকা স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় না করলে সে ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিংয়ে নেগেটিভ পয়েন্ট যোগ হবে। এটাই শাস্তি হিসেবে বিবেচিত হবে।