আবহাওয়া ও জলবায়ুগত দিক দিয়ে দেশে পাম উৎপাদনে অপার সম্ভাবনা

0
190

টাইমস ডেস্ক:
আবহাওয়া ও জলবায়ুগত দিক দিয়ে এদেশে পাম উৎপাদনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। পাম উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় দেশ মালয়েশিয়ার চেয়ে বাংলাদেশের জমির উর্বরতা শক্তি বেশি। আর এ উপযোগিতা ও সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে অনাবাদি, পতিত জমি এবং সড়ক কিংবা রেল লাইনের ধার ঘেঁষে পাম চাষ করা সম্ভব। তাতে পাম তেলে দেশ শুধু সমৃদ্ধই হবে না। বরং বিদেশে তেল রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশে পাম পাষ কেবলই আশাব্যঞ্জকই নয়, উৎসাহব্যঞ্জকও বটে। বর্তমানে সরকার ১২-১৫ হাজার কোটি টাকার তেল আমদানি করে। আমদানিকৃত ভোজ্য তেলের ৬০ শতাংশই পাম ওয়েল। তাছাড়াও ভোজ্যতেলের দিক থেকে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে পাম তেল। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে পাম চাষের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা জরুরি। যাতে যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ ল্যাব স্থাপন, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাম চাষ, তেল উৎপাদন ও বাজারজাত করা যায়। তাতে ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমবে। পাশাপাশি রফতানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি দেশের অর্থনীতির গতিধারাই পাল্টে দিতে পারে সম্ভাবনাময় পাম। ইতিমধ্যে রাজশাহীতে পরীক্ষামূলক পাম চাষে সাফল্যের হাতছানি মিলেছে। সেজন্য বিসিএসআইআর গবেষকরা বাণিজ্যিক পাম চাষে সড়ক কিংবা রেললাইনের ধারে, পতিত ও অনাবাদি জমি পাম চাষের আওতায় আনার সুপারিশ করেছেন।
সূত্র জানায়, গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজশাহীতে বিসিএসআইআর গবেষণা কেন্দ্র পাম চাষ শুরু করে। দেশে পাম গাছের প্রজনন, বৃদ্ধি, উৎপাদন এবং ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতেই ওই গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। তাতে দেখা যায় তিন বছরের মধ্যেই ৩ একর জমিতে রোপণ করা ৩শ’ পাম গাছে ফল এসেছে। তবে পুরোদমে উৎপাদনে আসতে আরও বছর দুয়েক সময় লাগবে। তবে ইতিমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদশেষ হয়ে গেছে। তবে গবেষণা প্রকল্পের ফল খুবই ভাল এসেছে। প্রয়োজনীয় সরকারি পদক্ষেপ ও সহযোগিতা পেলে হয়তো এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশও হতে পারে ভোজ্যতেল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ।
সূত্র আরো জানায়, বহু বাংলাদেশী মালয়েশিয়ায় গিয়ে সেখানকার বাণিজ্যিক পাম বাগানে শ্রম দিচ্ছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বাণিজ্যিক পাম চাষে কাজে লাগানো যেতে পারে। বাণিজ্যিক পাম চাষ, ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বিপণন সম্ভব হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিধারা পাল্টে যাবে। বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চলের মাটি, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা ও গড় বৃষ্টিপাত পাম গাছের বৃদ্ধির জন্য খুবই উপযোগী। তাছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ বিভাগীয় অঞ্চলগুলোর অনাবাদি জমিতেও পাম চাষে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এদেশের পাম ফল মালেশিয়ায় উৎপাদিত পাম ফলের চেয়ে আকারে বড়। উৎপাদনও প্রায় দ্বিগুণ। আবার পাম গাছে বছরে ৩ বার ফল নামানো যায়।
এদিকে প্রকল্পের আওতায় প্রথমে রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সেনা ক্যাম্প থেকে পাম গাছের চারা ও ফল সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাম গাছ ও তার ফল সংগ্রহ করা হয়। তবে রাজশাহীর বেলপুকুর এলাকায় মহাসড়কের পাশে লাগানো পাম গাছ থেকে পাম সংগ্রহ করে প্রথম গবেষণায় ভাল ফল মিলেছে। পাম ফলের বীজ ও উপরের মাংসল অংশ থেকে ভোজ্য তেল পাওয়া যায়। এখন ইঞ্জিনিয়ারিং মেশিন পদ্ধতিতে তেল উৎপাদনের অপেক্ষা রয়েছে। এ ধাপে যুক্ত হয়েছে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। মেশিনটি তৈরি হলেই সঠিকতা যাচাই করে পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধাপে পাম তেল উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হবে।
অন্যদিকে এশিয়া ও আফ্রিকান দেশগুলোতে পাম গাছ প্রচুর পরিমাণে থাকায় তারা দীর্ঘদিন যাবত এ পাম ওয়েল সিড থেকে তেল নিঃসরণ করে তা ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে ফ্যাটি এ্যাসিড ও কোলেস্টরেল থাকলেও তাতে ক্ষতি হচ্ছে না। তাছাড়া পামে আছে ভিটামিন ই। যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই শক্তিশালী ও কার্যকর। আবার পুষ্টিমানের দিক থেকে গাজরের তুলনায় পামে রয়েছে ১৫ গুণ এবং টমেটোর তুলনায় ৩০০ গুণ বিটা-ক্যারোটিন। যা মানবদেহে ভিটামিন এ উৎপাদনে সহায়তা করে। সঙ্গত কারণেই পাশ্চাত্যে এখন বহুগুণে পাম তেলের ব্যবহার বেড়েছে। তাছাড়া পামের বীজ থেকেও তেল উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু বীজ থেকে সামান্যই তেল পাওয়া যায়। ফলে সাবান ও প্রসাধনী তৈরির কোম্পানিগুলোয় বীজ ব্যবহার হয়। মূলত পামের প্রতিটি উপাদানেই রয়েছে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ।
এ প্রসঙ্গে বিসিএসআইআরের অয়েল, ফ্যাট এ্যান্ড ওয়েক্সেস রিসার্চ ডিভিশনের প্রিন্সিপ্যাল সায়েন্টিফিক অফিসার মো. মইনউদ্দিন প্রকল্পের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তাতে রাজশাহী অঞ্চলে পাম চাষ নিয়ে অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তার মতে. বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু পাম গাছের জন্য খুবই উপযোগী। সঠিকভাবে পামের চাষাবাদ, উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে দেশে ভোজ্য তেলের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব। সেইসঙ্গে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও পাম তেল রফতানি করে তেল উৎপাদনশীল দেশের তালিকায় শীর্ষে অবস্থানও সম্ভব।