সাতক্ষীরায় নাশকতার ডজন মামলার আসামীরা এখন আ’লীগে

0
424

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়ন এলাকায় নাশকতার ডজন মামলার আসামী ও জামায়াত-বিএনপির অনেকে নেতাকর্মীরা ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করার অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রে জানা যায়, গোদাঘাটা গ্রামের সুলতান সরদারের পুত্র নাশকতাসহ বর্তমানে ১৪টি মামলার আসামি আবুল কালাম আজাদ জামায়াত-বিএনপি থেকে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করেছেন। আবুল কালাম আজাদ বর্তমান সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের শ্রম সম্পাদক পদে দায়িত্ব রয়েছেন। বামপন্থী রাজনৈতিক দলে যোগদানের মধ্য দিয়ে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্ব-পরিবারে শহীদ হবার পর আশির দশকের শুরুতে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে আবুল কালাম আজাদ জাসদ ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। তৎকালীন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হবির হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগদেন। ৯০ এর গণ আন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকারের পতনের পর আবুল কালাম আজাদ জাতীয় পার্টি ছেড়ে চলে আসেন বিএনপিতে। এরমধ্যে তিনি সাতক্ষীরা সুন্দরবন টেক্সটাইলস মিলস এর সিবিএ নেতা নির্বাচিত হয়ে নিজের ভাগ্যের কিছুটা পরিবর্তন করেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি- জামায়াত জোট ক্ষতায় আসলে যুদ্ধাপরাধী হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে বিএনপি ছেড়ে জামাতে যোগদেন। মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডল ছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য। মানবতা বিরোধী মামলার আসামি মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডলকে ধরম শ্বশুর পাতিয়ে শুরু করেন জামায়াতের রাজনীতি। এভাবে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত আবুল কালাম আজাদ জামায়াতের দুর্ধর্ষ নেতা হিসেবে অংশ নেন হত্যাসহ নাশকতামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে। জঙ্গি স্টাইলে কিলিং মিশনে অংশ নিয়ে তিনি সাতক্ষীরা সিটি কলেজের প্রভাষক এবিএম মামুন, শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পদাক রবিউল ইসলামসহ বিভিন্ন হত্যাকান্ডে জড়িত। এছাড়া গাছ কাটা, রাস্তাকাটা, সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাট মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর, চাঁদাবাজি সহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। সিবির নেতা থাকা অবস্থায় আবুল কালাম আজাদ ডাকাতি করতেন বলে স্থানীয়রা জানান। শিবপুর ইউনিয়নের মেম্বর আনিছুর রহমানের বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়েন আবুল কালাম আজাদ। তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা থানায় ৭/৮ টি মামলা নিয়মিত মামলা ছাড়াও আদালতের তার নামে মামলা রয়েছে। যথাক্রমে মামলা নং ৩৪ তাং- ১২/০৩/১৪, ডি. আর ১৯৮/১৪। মামলা নং ২৪ তারিং-১২/০৩/১৪, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা নং ৮৭, তাং- ২৮/০৩/১৩, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা নং ১২৮ (ক), ১৫৮ ৯৩০ ২৫ঘ, তাং- ১২/০২/১৪ মামলা নং ২২(৩) ১৩, ডিআর ১৪৮/১৩। মামলা নং ১১৭ (ক) তারিখ ০৮/০২/১৪, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষশতা আইনে মামলা ১৫৩/১৬ (২), মামলা নং ৫৫ তাং- ২০/০৭/১৪, মামলা নং ২২ (৩) ১৩ ডি.আর ১৪৮/১৩ তাং২৮/০২/১৪, মামলা নং ২৪/(৩) ১৪ জি আর ১৪৬/১৩ তাং ১২/০৩/১৪ ডি. আর ১৯৯, ১৪৬ এস.টিসি ১৮৬, ৫৬ এবং মামলা নং ৮৭ (৩) ১৩ ডি, আর ২১১/১৩ তাং ২০/১০/১৩ রয়েছে। রাজনীতিতে এই আবুল কালাম আজাদ বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন। ২০১৪ সালে আবুল কালাম আজাদ মামলা থেকে রেহাই পেতে ডিগবাজী খেয়ে জামায়াত থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। যোগদানের পর ডাকার জোওে উপজেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদকের পদটি বাগিয়ে নেন তিনি। দলের তৃণমূল নেতাদের চরম বিরোধীতা সত্বেও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগে ঠাঁই হয় আবুল কালাম আজাদের। তার অপকর্মের কাহিনী তুলে ধরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শওকাত আলী। এদিকে শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হোসেন মালি জানান, ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও পরবর্তী সহিংসতায় নেতৃত্বদানকারী আবুল কালাম আজাদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন শতশত নেতাকর্মী। আবুল কালাম আজাদ ও আবুর কাশেমের নেতৃত্বে আবাদের হাটখোলা এলাকায় অরবিন্দু, স্বপন, তাপস আচার্য, গোপাল, ঘোষালসহ সংখ্যালয়ু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট সংঘটিত হয়। কালাম বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন সইতে না পেরে অনেকেই পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। শিবপুর ইউনিয়নবাসীর মনে মূর্তমান আতংক আবুল কালাম আজাদের সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত করায় ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে তৃণমূল আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, কার স্বার্থে কী কারণে আবুল কালাম আজাদের মতো দুর্ধষ সন্ত্রাসীকে দলে ঠাঁই দেয়া হয়েছে? শুধু আবুল কালাম আজাদ নয়। তার মতো অনেকেরই ঠাঁই হয়েছে আওয়ামীলীগের পতাকা তলে। নাশকতা মামলার আসামী সদর উপজেলার চুপড়িয়া গ্রামের দেলদারের ছেলে মাহবুব, তালার তৈরকুপি গ্রামের জুম্মান মোড়লের ছেলে মাও. আবুল কালাম উপজেলা জামায়াতের সহ-সভাপতি তারও ঠাই হয়েছে আওয়ামীলীগে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে দুটি নাশকতার মামলা। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা, এমনিভাবে জেলার সাত উপজেলায় জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নাশকতা মামলার শত শত আসামি আওয়ামীলীগে যোগদান করে ছড়ি যুরাচ্ছেন ত্যাগী বিদগ্ধ তৃণমুল নেতাদের উপর । এতে করে ক্ষোভের আগুনে জালছে তৃণমূল আওয়ামীলীগ। বিগত দিনে সাতক্ষীরাকে রক্তাক্ত করেছিল এই আবুল কালাম আজাদ। হাসিনা হটাও আন্দোলনের কমিটির সে ছিল আহবায়ক। বিভিন্ন সময়ে আবুল কালাম আজাদ সরকার বিরোধী বক্তব্য দিয়ে জামায়াত শিবিরকে নাশকতায় উস্কানি দিয়েছে। আবুল কালাম ও তার বাই আবুল কাশেমের নেতৃত্বে এলাকার সংখ্যালগুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভাংচুর করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু লোক আবুল কালামের ভয়ে জমিজমা বিক্রি করে অন্যত্র চলে গেছেন। দলের গঠনতন্ত্রকে উপেক্ষা করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য না হয়েও তাকে উপজেলা আওয়ামীলীগে ঠাই দেয়া হয়েছে। এছাড়া সূত্রে আরো জানান গদাঘাটা গ্রামের রাজ্জাকের ছেলে ইমান আলি বিএনপি থেকে ডিক বাজি দিয়ে যুবলীগে অনুপ্রবেশ করেছেন। ইমান আলি এখন যুবলীগের ওয়ার্ড সভাপতি পদে দায়িত্ব রয়েছেন। একই গ্রামের মাও নুর ইসলামের ছেলে ওবায়দুল্লাহ শাহিন জামাত-শিবির থেকে ডিকবাজি দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগে অনুপ্রবেশ করেছেন। ওবায়দুল্লাহ শাহিন বর্তমান শিবপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক পদে দায়িত্ব রয়েছেন। নেবাখালী গ্রামের খোকন কাজীর ছেলে তুষার কাজী বিএনপি থেকে ডিক বাজ দিয়ে কৃষকলীগে অনুপ্রবেশ করেছেন। তুষার কাজী বর্তমান কুষকলীগের ইউনিয়ন কমিটির সদস্য পদে রয়েছেন ও তার ভাই মিজান বিএনপি থেকে ডিক বাজি দিয়ে কৃষকলীগে অনুপ্রবেশ করেছেন। মিজান ওয়ার্ড কমিটির কৃষকলীগের সভাপতি দায়িত্ব রয়েছেন। জামায়াত-বিএনপি নেতাকর্মীরা আওয়ামলীগে অনুপ্রবেশ না করে এমন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের নির্দেশনা থাকলে এবং জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সর্তক থাকলেও এমনকি যাদের বিরুদ্ধে নাশকতা ও সন্তাসি কর্মকান্ডের অভিযোগে মামলা রয়েছে তারা যেন আওয়ামীলীগে যোগদান করতে না পারে সেদিকে নির্দেশনা দেওয়া হলেও ধাপে ধাপে জামাত-বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকে আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনে অনুপ্রবেশ করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এব্যাপারে আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।