সাতক্ষীরায় ডিবি পুলিশের হেফাজতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যু!

0
124

দেবহাটা প্রতিনিধি : মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার একদিন পর সাতক্ষীরার গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে থাকাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বাবলু সরদারের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বলছে গ্রেপ্তার পরবর্তী ডিপ্রেশনের কারনে আত্মহত্যা করছেন তিনি। অপরদিকে বাবলু সরদার গোয়েন্দা পুলিশের নির্যাতনে মারা গেছে বলে দাবি তার পরিবারের।
পুলিশ জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা জুড়োন সরদারের ছেলে বাবলু সরদার (৫৬) গ্রেপ্তার পরবর্তী ডিপ্রেশনের কারনে গোয়েন্দা পুলিশের লকআপের মধ্যে আত্মহত্যা করেছে। তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মাদক মামলা রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন আলম চৌধুরী জানান, বাবলু সরদার নামের ওই ব্যক্তিকে শনিবার সকালে তার গ্রামের বাড়ি দেবহাটা উপজেলার বসন্তপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ৫০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, এঘটনায় দেবহাটা থানায় মামলা (নং-০৬) দায়ের পরবর্তী গ্রেপ্তার হওয়া বাবলু সরদারকে গোয়েন্দা পুলিশের লকআপে রেখে দেওয়া হয়। আজ রোববার তাকে আদালতে নিয়ে যাবার কথা ছিল। শনিবার দিবাগত রাতের কোন এক সময় সে নিজের কোমরে ব্যবহৃত ঘুনশি/কাইতেন (নাইলনের সুতালী) দিয়ে লকআপের গেটের গ্রীলের সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়।
বাবলু সরদারের মেয়ে সুলতানা মুন্নি ও পুত্র বধু স্নেহা জানান, শনিবার সকালে বোরকা পরা এক নারী আকস্মিকভাবে তাদের বাড়িতে যেয়ে তার তার বাবার ঘরে ঢুকে যায়। এরপর মুহুর্তের মধ্যে বাইরে বেরিয়ে বাড়ির নিকটে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মনিরুল ইসলামসহ অন্যান্যদের ইশারা করে ডেকে নেন। সঙ্গে সঙ্গে তার বাবাকে ঘর থেকে পাওয়া ওই ফেন্সিডিল সহ গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এসময় তার বাবাকে তাদের সামনে হ্যান্ডকাপ দিয়েও মারপিট করে ডিবি সদস্যরা। একইসাথে তাদের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে ৩৬ হাজার টাকাও নিয়ে যায় ডিবি সদস্যরা। মুন্নি ও স্নেহা বলেন, আমাদের বাবা কোমরে কখনও ঘুনশি/কাইতেন বা এ ধরনের সুতালি ব্যবহার করতেন না। তাহলে তিনি কিভাবে লকআপের মধ্যে আত্মহত্যা করলেন প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, গেটের গ্রীলের সাথে নিজেকে কোমরের সুতালিতে ঝুলিয়ে কি কখনও আত্মহত্যা করা সম্ভব? পুলিশ তাকে হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।
এদিকে বাবলু সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন জানান, তার বাবাকে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে ৪৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ আটক করা হয়। এসময় বাড়িতে থাকা ৩৬ হাজার টাকাও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা নিয়ে যায়। তিনি বলেন, পুলিশ আমার বাবাকে মারধর করেছে এবং এক পর্যায়ে তিনি মারা গেছেন। এখন পুলিশ নাটক করে বলছে বাবা আত্মহত্যা করেছেন। আলমগীর হোসেন আরও বলেন পুলিশ আমাদের বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছে ‘আপনাদের লোক আত্মহত্যা করেছে। লাশ নিয়ে যান’। আমরা বলেছি আমাদের স্বজনকে জীবিত অবস্থায় ফেরত দিতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ফেন্সিডিলসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি নিজের কোমরে থাকা ঘুনশি/কাইতেন (নাইলনের সুতালী) লকআপের গেটের গ্রীলের সাথে গলায় পেঁচিয়ে ঝুঁলে রাত তিনটার দিকে আত্মহত্যা করেছে। পরে ম্যাজিস্ট্রেট আকতার হোসেন ও মেডিকেল অফিসার ডা. জয়ন্ত কুমারের উপস্থিতিতে লাশ নামিয়ে ময়নাতদন্ত করার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সুপার আরও জানান এই স্পর্শকাতর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারনে পুলিশের এএসআই শেখ সোহেল ও কনস্টেবল শরিফুলসহ দুই সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারনটি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।