সাগর চরের রাস মেলাকে ঘিরে উপকুলীয় অঞ্চলে উৎসব-আনন্দ

0
389

ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা (খুলনা):
আগামী ১০ থেকে ১২ নভেম্বর তিন দিন ব্যাপী সাগর দ্বীপে আলোর কোলে বসবে রাস মেলাকে কেন্দ্র করে মিলন মেলা। হাজার হাজার দর্শনার্থীদের আগমনে মেলা হয়ে উঠবে উৎসব মুখর। এ বছর রাস মেলাকে কেন্দ্র করে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের উদ্যোগে বনজ সম্পদ রক্ষায় নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। ইতিমধ্যে সব রকমের প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট জনেরা। প্রতিবছর কার্ত্তিক অগ্রাহায়ণের শুক্লাপক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পার্থিব জীবনের কামনা বাসনা পূরণের লক্ষ্যে সুন্দরবনের শেষ প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের তীরে দূবলার দ্বীপে এক নিবীড় পরিবেশ হাজির হয়। সেখানে সূর্যদয়ের সাথে সাথে সমুদ্র স্নান করতে পুত পবিত্র হয়ে ভগবানের কাছে কায়মনোবাক্যে আরতী জানায়। অসংখ্যা হিন্দু নর-নারী গঙ্গাসাগরের মেলার মত তীর্থ স্থান মনে করে এই মেলায় উপস্থিত হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনও এখানে এসে সমুদ্র ভ্রমনে যায়। এ মেলাকে ঘিরে উপকূলবর্তী মানুষের মধ্যে উৎসব মূখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। খুলনা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ আবু সালেহ জানান, সাগর মেলার দর্শনার্থীদের ১০ নভেম্বরের আগে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময় ছাড়া কোন দর্শনার্থীরা সুন্দরবন অভ্যান্তরে প্রবেশ করতে পারবে না। এ ছাড়া বন বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।
কয়রা উপজেলার বিভিন্ন মানুষের সাথে বলে জানা গেছে,মেলায় যাওয়ার জন্য নৌবিহারের আয়োজন করে মানুষ। এই মেলাকে অনেকে মগদের মেলা বলে মনে করে থাকেন। অপরদিকে বয়বৃদ্ধ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা বলে থাকেন বিংশ শতাব্দির ২য় দশকে ফরিদপুর জেলার ওড়াকান্দি গ্রামের জনৈক শ্রী শ্রী হরিচাদ ঠাকুর স্বপ্নদৃষ্ট হয়ে এখানে পূজা পার্বনাদী অনুষ্ঠান করেন। সেই থেকে ধীরে ধীরে ক্রমাগত লোকজন সমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। দেবতা নীল কমল ও গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা এখানে এসে নির্জনে প্রার্থনা করে। এছাড়া লাখ লাখ ভ্রমন পিপাষু সমুদ্র কোলে ৫ মাইল প্রস্থ বালু চরে পদব্রজে ভ্রমন করে। যুবকেরা বালু চরে ফুটবল সহ নানা খেলায় মেতে ওঠে। সৌন্দর্য পিপাসুদের ক্যামেরা বন্দি হয় সুন্দর সুন্দর দৃশ্য। জনমানব শুণ্য এ দ্বীপে কার্ত্তিক অগ্রাহায়ণের শুক্লাপক্ষে সে এক অভিনব দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। তীর্থ যাত্রী ও ভ্রমণকারীরা নৌকায় নৌকায় রান্না ও আহার করে। মনোরম পরিবেশে বালু চরে এবং বনের ভিতরে নির্ভয়ে চলাফেরা করে মানুষ। শত শত নৌকা, ট্রলার ও লঞ্চের সমাগমে স্থানটি দু’এক রাত্রের জন্য আলোক মেলায় সজ্জিত হয়ে ওঠে। জ্যোৎস্না রাতে সাগর তীরের বালু চরে মুখরিত হয়ে ওঠে নর-নারীর পদচারণায়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় তীর্থ যাত্রীরা সাগর স্নানে নেমে পড়ে। সে এক অভুতপূর্ব মনোরম পরিবেশ যা দর্শনে দু’দন্ডের জন্য হয়েও নাগরীক জীবনের কোলাহল থেকে মুক্ত হতে পারে মানুষ। লোকালায় থেকে নানা প্রকার নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, ফল ফলারী, মিষ্টি প্রভৃতি পণ্য সামগ্রী নৌকা পথে দুবলার চরে বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীরা জোগান দিয়ে থাকে। মেলায় সকল প্রকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে কয়েক দিন। দুবলার ফিসার ম্যান বা জেলে পল্লী থেকে এ মেলার দূরত্ব ৬/৭ কিঃমিঃ পশ্চিমে এবং টাইগার পয়েন্ট থেকে ১০/১১ কিঃমিঃ পূর্বে অবস্থিত। অনেকের সন্তানাদী জন্মগ্রহণ না করলে ধর্মভীরু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা দুবলার মেলায় মানত করে এবং বছরের এই সময় এসে মানতকারীরা আনুসাঙ্গিক অনুষ্ঠানাদী সম্পন্ন করে থাকে। আবার কেউ কেউ জীবনের কৃত পাপ মোচন হবে মনে করে এই স্থানে আগমন করে এবং সমুদ্রে ঢেউয়ের মধ্যে স্নান করে পুতঃপবিত্র হতে দেখা যায়। দেবতা নীল কমল ও গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রার্থনা করে। বাদ্য নিত্য গীত ও বিভিন্ন প্রকার অনুষ্ঠানাদী এখানে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ঢেউ সেবনের সময় মন্ত্রাদী উচ্চারণ করে পাঠা ছাগল, ফল ও মিষ্টি সাগরে নিক্ষেপ করতে দেখা যায় ভক্তদের। চলতি বছর ১০ থেকে ১২ শে নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে দুবলার চরের এই রাস মেলা।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বশিরুল-আল মামুন বলেন,সাগর মেলাকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগে অভিযান পরিচালনার জন্য বিভিন্ন টিম গঠন করা হবে। তীর্থযাত্রিরা যাতে নিবিঘ্নে চলাচল করতে পারে তার জন্য সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে। তিনি সার্বক্ষণিক তদারকিতে থাকবেন বলেও জানান।