রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দায়িত্ব বাংলাদেশের- সু চি

0
381

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দায় বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপিয়েছেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি। মঙ্গলবার সিঙ্গাপুর সফররত সু চি এক বক্তৃতায় বলেছেন, তাদের ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের। মিয়ানমার তাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত।

উল্লেখ্য, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রত্যাবাসনের যাবতীয় পথ রুদ্ধ করে রেখেছে। পাশাপাশি প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার দায় বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে আসছে। কয়েক প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে বসবাস করলেও তাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করে না মিয়ানমার। গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হওয়া এসব রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমার চুক্তি স্বাক্ষর করলেও এখনও শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন।

সু চি তার বক্তৃতায় রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় অস্বীকার করেছেন। এ সময় রোহিঙ্গা শব্দের বদলে তাদেরকে ‘বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া’ মানুষ আখ্যা দেন তিনি। সু চি তার বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া জনগণের পুনর্বাসনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তাদের ফেরার ব্যাপারে সময়ের কাঠামো নির্ধারণ করা কঠিন। প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে দুই দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

তার দাবি, ঢাকাকেই প্রক্রিয়াটি শুরু করার জন্য প্রথম উদ্যোগ নিতে হবে। মিয়ানমার নেত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকেই প্রত্যাবাসনকারীদের ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা কেবল সীমান্তে তাদের স্বাগত জানাতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, কত দ্রুত তারা পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে চায়।’ সু চি আরও বলেন, রাখাইন রাজ্যের জন্য সন্ত্রাসবাদ একটি হুমকি হয়ে আছে যা এই অঞ্চলে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ না এখানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঝুঁকি থেকে যাবে। এই হুমকি শুধু মিয়ানমার নয়, এই অঞ্চল ও আশেপাশের অন্যান্য দেশের জন্যও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।’

সু চি এমন সময় প্রত্যাবাসনের দায় বাংলাদেশের ওপর চাপালেন যখন মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এইআরডব্লিউ অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশ থেকে রাখাইনে ফেরা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে দেওয়া মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতির সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছে ওই সংস্থা।

সু চির মক্তব্য নিয়ে মঙ্গলবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ বলছে, নির্যাতনের এই আলামত প্রত্যাবাসন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্তি ও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানের অপরিহার্যতাকে সামনে এনেছে। নোবেলজয়ী সু চি’কে একসময় মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া এক সংগ্রামী হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর সেনা অভিযান ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার তিনি সমালোচনার মুখে রয়েছেন। জাতিসংঘ ওই সেনা অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে মিয়ানমার সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা সেখানে নৃশংসতার জন্য রোহিঙ্গাদেরই দায়ী করে আসছে। তারা রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করে থাকে।