যাচাই-বাছাই ছাড়া এই তালিকা প্রকাশ অবান্তর

0
436

মহান স্বাধীনতা অর্জনের আটচল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এর বিরোধীতাকারী ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সমর্থন এবং তাদের সাথে একাত্ম হয়ে এদেশের নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ যারা চালিয়েছে তাদের একটি তালিকা প্রণয়ন একটি গণদাবি ছিল। তারই প্রেক্ষিতে মহান বিজয় দিবসের আগের দিন গত রোববার ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাজাকারের প্রথম তালিকায় নানা অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। এতে এমন সব ব্যক্তির নাম এসেছে, যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, লড়াই করেছেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন। এমনকি শহীদ পরিবারের সদস্যদের নামও রয়েছে তালিকায়। অথচ এতে নেই চিহ্নিত অনেক রাজাকারের নাম। এসব কারণে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতকৃত রাজাকারদের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে হুবহু প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে কোনো ভুলত্রুটি আছে কি না, সেটি জানেন না বলে জানিয়েছিলেন খোদ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী! এটি একটি দুঃখজনক এবং লজ্জাস্কর বিষয়। রাজাকারের তালিকা তৈরির আগে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ ছিল। রাজাকার, আলবদর, আলশামসের তালিকা প্রকাশের মতো কাজ একটি ঐতিহাসিক কর্মযজ্ঞ। শুধু মন্ত্রণালয়, প্রশাসন বা জেলা প্রশাসক-উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দিয়ে সম্পন্ন করা নয়, এই কাজে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের গবেষকদেরও অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিৎ ছিল। তালিকাটি প্রকাশের আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হলে অসঙ্গতিগুলো ধরা পড়ত। সেক্ষেত্রে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম থাকত না।

রাজাকারের তালিকায় যেসব মুক্তিযোদ্ধার নাম এসেছে তা তাদের জন্য তো অবশ্যই পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সবার জন্যই অসম্মানের। যারা দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে লড়েছেন তাদেরকে ভুল করে দেশবিরোধী আখ্যা দেওয়াটাও চরম ধৃষ্টতা। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে এরকম ভুল করা গর্হিত। অন্যদিকে চিহ্নিত রাজাকারদের নাম তালিকায় না থাকা অবাক করার মতো বিষয়। এসব ভুল এই তালিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রাজাকারের তালিকায় এসব অসঙ্গতি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে কাজটি দায়সারাভাবে করা হয়েছে এবং এরকম একটি গুরুত্বপূণ ইস্যুতে পর্যাপ্ত সময় ও শ্রম ব্যয় করা হয়নি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি তথা খামখেয়ালি গ্রহণীয় নয়। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এর জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহীতার আওতায় আনা হোক। আমরা আরও নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই করে রাজাকারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির আহ্বান জানাই।