মৃত্যুতেও মুক্তি নেই নমিতার, তিনদিন ধরে মরদেহ পড়ে আছে বাড়িতে

0
453

এম আর জামান টিপু, তালা প্রতিনিধি:
ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার জের ধরে প্রায় তিন বছর আগে শ্লীলতাহানি ও মারপিটে গুরুতর আহত সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মেশারডাঙ্গা এলাকার কার্ত্তিক ব্যাণার্জীর স্ত্রী নমিতা ব্যানার্জীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে শুক্রবার সন্ধ্যায়। তবে মামলাসহ নানা জটিলতায় তার মৃত দেহটির সৎকার না হওয়ায় গত ৩ দিন ধরে পড়ে রয়েছে নিজ বাড়িতেই।
গত ৩ বছরে মামলার পাশাপাশি তার চিকিৎসায় নিঃস্ব প্রায় পরিবারটি লাশের সৎকারের অনুমতির আবেদনে স্থানীয় প্রশাসনও যেন অসহায়। বিভিন্ন আদালতে নমিতাকে জড়িয়ে মামলা বিচারাধীন থাকায় লাশের সৎকারে নিতে হবে আদালতের অনুমতি। তবে শুক্র-শনিবার সরকারি ছুটি আর আজ রবিবার আদালত বন্ধ থাকায় আইনি বেড়াজালেই আটকা পড়েছে নমিতার লাশ।
অভিযোগ মতে, ২০১৬ সালের অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে এক নম্বর মেশারডাঙ্গা ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত কুলপোতার মৃত করুণাময় সানার ছেলে নিমাই পদ সানা ২৩ মার্চ দুপুর ১২ টার দিকে স্ব-দলবলে হানা দেয় মেশারডাঙ্গার মৃত প্রফুল্ল ব্যাণার্জীর ছেলে কার্ত্তিক ব্যানার্জির বাড়িতে। অপরাধ,পরিবারটি নির্বাচনে তার পক্ষে কাজ করেনি। প্রতিশোধের নেশায় নিমাই সানার নেতৃত্বে তার ভাই শিবপদসহ সত্যজিৎ মন্ডল, অভিজিৎ মন্ডল, প্রদীপ সরকার, কামনাশীষ মন্ডল, সুভাশীষ সরকার, বিশ্বদেব ব্যানার্জীসহ অন্তত ৩৫/৪০ জন দা, শাবল, কুড়াল ও লাঠিসোটা নিয়ে তছরুপ শুরু করে। তবে, কার্ত্তিক বাড়িতে না থাকায় তার স্ত্রী নমিতা ব্যাণার্জী (৪০) কে শাবল দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। পরণের শাড়ি ছিড়ে শ্লীলতাহানি ঘটায়। আতœচিৎকারে কার্ত্তিকের বড় ভাই আদিত্য, মেয়ে মুক্তি (১৫) তাকে রক্ষার চেষ্টা করলে হামলাকারীরা তাদেরকেও মারপিট ও শ্লীলতাহানি করে।
একপর্যায়ে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা বাড়িতে লুটপাট শুরু করে। বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে ঘরে থাকা ৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ অন্যান্য মালামাল লুট করে। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে তালা ও পরে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনায় পরের দিন ২৪ মার্চ কার্ত্তিকের ভাই আদিত্য ব্যাণার্জী বাদী হয়ে নিমাই পদ সানাকে প্রধান করে ২০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত আরো ১৫/২০ জনের নামে তালা থানায় একটি মামলা করেন।
মামলায় পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট প্রদান করে। এদিকে আহত নমিতার অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সর্বশেষ ভারত থেকে এনে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৯ মে তাকে সেখান থেকে মেশারডাঙ্গা বাড়িতে নিয়ে আসলে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। আর সেই থেকেই তার লাশটি পড়ে রয়েছে ঐ বাড়িতেই।
এ ব্যাপারে এএসপি (সার্কেল) হুমায়ুন কবির আগেই জানিয়েছিলেন, মামলা জটিলতা থাকায় আদালতের অনুমতিতে সৎকার কিংবা ময়নাতদন্তের পরামর্শ দেন। অন্যদিকে মায়ের লাশ বাড়িতে রেখেই মেয়ে মুক্তি রোববার গিয়েছিল এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পাটকেলঘাটায়। ফেরার পথে শোনা বাধাল ব্রীজের নীচে ভ্যান থেকে নেমে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথিমধ্যে আসামীদের দু’জন মোটর সাইকেলের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তাকে। তবে বিশেষ ক্ষতি না হওয়ায় বাড়ি ফেরে সে।
মৃতের পরিবারের দাবি, এবার আর জীবন ফিরে পাবার আকুতি নয়, অন্তত লাশটি সৎকারের অনুমতি চান তারা। এ ব্যাপারে মামলার প্রধান আসামি স্থানীয় ইউপি সদস্য নিমাই পদ সানার নিকট জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে অসদাচারণ ও বিভিন্ন কাগজে নমিতার লাশের সৎকার নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন,মামলা করতেই নাকি তার পরিবার নমিতার লাশের সৎকার করছেনা।
সর্বশেষ একদিকে নমিতার লাশের সৎকার সম্পন্ন না হওয়া অন্যদিকে আসামীদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়েছে পরিবারটি। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার রাত ৮ টা এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মেশার ডাঙ্গা বাড়িতেই পড়ে ছিল।