মার্চ থেকেই ”হোম ডেলিভারী সার্ভিসের” মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষকদের পেনশন হবে অনলাইনে

0
258

বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাট জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসর উত্তর ছুটি (পিআরএল), পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরি আদেশ এখন থেকে অনলাইনে পাবেন পেনশনে যাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকারা। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ‘ই-পেনশন ও পিআরএল মঞ্জুরি আদেশ হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ নামের এই ই-সেবার মাধ্যমে শিক্ষকরা ঘরে বসেই এসব মঞ্জুরি আদেশ পাবেন। এসব আদেশ পেতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য ও হয়রানি কমাতে এ উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।
যার ফলে শিক্ষকদের অবসরে যাওয়ার নির্দিষ্ট সময় হলে অবসর-উত্তর ছুটি, পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরি আদেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-মেইল ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যক্তিগত ইনবক্সেওই শিক্ষক, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও হিসাবরক্ষণ অফিসে চলে যাবে। শিক্ষক তার নিজস্ব ই-মেইল, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, ইমো হোয়াটসআপের মাধ্যমেও ওই আদেশ পাবেন। ওই আদেশের বলে শিক্ষক কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়া অবসর-উত্তর ছুটিতে চলে যেতে পারবেন। নির্দিষ্ট সময়ে তিনি আনুতোষিক (অবসর উত্তর ছুটি শেষ হওয়ার পরে এককালীন টাকা) পেয়ে যাবেন। প্রতি মাসে তিনি পেনশনও পাবেন নিয়মিত ভাবে।
‘ই-পেনশন ও পিআরএল মঞ্জুরি আদেশ হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ আগামী এক বছরের মধ্যে যেসব শিক্ষক পিআরএলে যাবেন তাদের তালিকা চূড়ান্ত করেছেন। অনলাইনে শিক্ষকদের জন্য নির্দিষ্ট ফরমও দেয়া হয়েছে। ওই ফরমে শিক্ষকদের নাম, পদবি, সর্বশেষ কর্মরত বিদ্যালয় ও পিআরএল এ গমনের তারিখ, পিআরএল আদেশ পাঠানোর জন্য মুঠোফোন নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা পূরণ করে উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দিতে হবে। উপজেলা শিক্ষা অফিস তার উপজেলার তালিকা জেলায় প্রেরণ করবেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ওই শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে পিআরএল মঞ্জুরি আদেশ পৌঁছে যাবে।
এদিকে বাংলাদেশের এই প্রথম অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষকদের অবসর-উত্তর ছুটি, পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরি আদেশ প্রদানের ঘোষণায় শিক্ষকদের মাঝে এক ধরণের উৎসাহ কাজ করছে। অবসর প্রাপ্ত শিক্ষকরাও এই পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল আজিজ বলেন, একজন চাকরজীবী যখন অবসরে যান তখন তিনি নানা রকম চিন্তা ভাবনায় পড়েন। এর মধ্যে সব থেকে বড় চিন্তা থাকে পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরি নিয়ে। নিজেদের এই ন্যায্য পাওনা নিতে বিভিন্ন অফিসে যেতে যেতে পায়ের জুতো ছিঁড়ে যায়। অনেক সময় এক ধরনের বাধ্য হয়ে অনৈতিক সুযোগ সুবিধা দিয়েই নিজের কাজ সেরে নিতে হয়। পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরির বিষয়ে বর্তমানে যে পদ্ধতির কথা শুনেছি এটি বাস্তবায়ান হলে শিক্ষকরা হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে।
সহকারি শিক্ষক রাবেয়া বেগম বলেন, আমার পরিবারে ৪জনই শিক্ষক। বাবাও শিক্ষকতা করতেন। বাবার কাছ থেকে জেনেছি পেনশনের টাকা তোলা কতটা কষ্টের। তারপরও শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিয়েছি। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা সাধনে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন হচ্ছে। আমাদের শিক্ষকদের পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরি আদেশ অনলাইনের মাধ্যমে দেয়ার ঘোষণা যুগান্তকারী বলে আমি মনে করি।
বাগেরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কবির উদ্দিন বলেন, ‘একজন মানুষ দীর্ঘদিন চাকরি করার পরে যখন সে অবসরে যায় তিনি এক ধরনের হতাশায় ভোগেন। এরমাঝে তার মনে আসে অবসর উত্তর ছুটি (পিআরএল), পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরি আদেশ পাওয়ার জন্য প্রচলিত বিড়ম্বনার ভয়। সে সব ভয় ও হয়রানি বন্ধে আমরা অবসর উত্তর ছুটি (পিআরএল), পেনশন ও আনুতোষিক মঞ্জুরি আদেশ ই-মেইল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষকের ব্যক্তিগত ইনবক্সেপ্রেরণ করব। সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও হিসাবরক্ষণ অফিসেও প্রেরণ করব। যার ফলে ওই শিক্ষককে আর অহেতুক হয়রানির শিকার হতে হবে না। পর্যায়ক্রমে আমরা শিক্ষকদের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা অনলাইনের মাধ্যমে করার আশা ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।#