ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসনে তীব্র জনবল সঙ্কটে কাড়িক্ষত সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

0
658

টাইমস ডেস্ক:
ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসনে তীব্র জনবল সঙ্কট বিরাজ করছে। ওই মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে রয়েছে- ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি), সহকারী কমিশনার (ভূমি), অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, কানুনগো, সার্ভেয়ার, ড্রাফটম্যান, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা ও চেইনম্যান। বর্তমানে মাঠপর্যায়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৯ হাজার ৯৪টি পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জনগণকে যথাযথ সেবা দেয়া যা”েছ না। তাছাড়া আগামী কয়েক বছরে মাঠ পর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীই অবসরে যাবেন। তখন যে শূন্যতা স”ষ্টি হবে, তখন জনগণের চাহিদা অনুযায়ী ন্যূনতম সেবা দেয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মাঠপর্যায়ে ভূমি ব্যব¯’াপনায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই (ক্যাডার বাদে) ২০০৪ সালের আগে নিয়োগপ্রাপ্ত। তারপর এখন পর্যন্ত আর কোনো নিয়োগ হয়নি। উ”চ আদালতে একটি মামলার রায়ে সামরিক শাসনামলে করা নিয়োগ বিধিমালাগুলো বাতিল হয়ে যায়। ফলে মাঠপর্যায়ে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে বর্তমানে কর্মরত সব কানুনগো আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যেই অবসরে যাবেন। এই সময়ে সিংহভাগ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) ও ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তাও অবসরে যাবেন। তখন বর্তমানের চেয়ে এক-তৃতীয়াংশেরও কম জনবল কর্মরত থাকবেন। মূলত অতীতে কতিপয় কর্মচারীর করা মামলা-মোকদ্দমার কারণে নিয়োগই প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে। পদ আঁকড়ে রাখতে ও পদোন্নতির আশায় ওই কর্মচারীরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একের পর এক জটিলতা স”ষ্টি করে চলেছে। সূত্র জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) অনুযায়ী সারাদেশে ৩ হাজার ৪৫৭টি ভূমি অফিসে অনুমোদিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ ২৬ হাজার ১৪৪টি। তার মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছে ১৭ হাজার ৫০ জন। আর শূন্য পদের সংখ্যা ৯ হাজার ৯৪টি। বর্তমান সরকার ভূমি সেবাকে ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। কিš’ অনেক আগের নিয়োগপ্রাপ্ত বয়স্ক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি সেবা দেয়ার উপযোগী নন। ফলে মাঠপর্যায়ে উন্নত সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিয়েছে। আর সংকট দূর করতে হলে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া ছাড়া বিকল্প নেই। যদিও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধার বিষয় বিবেচনা করে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের গ্রেড উন্নীত করে যথাক্রমে ১১ ও ১২ গ্রেডে নেয়া হয়েছে। পিএসসি সর্বশেষ ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে পারে। সেক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়কে পিএসসির সহায়তা নিতে হয়। কারণ পিএসসির মাধ্যমেই ওই দুটি পদে শিক্ষিত, মেধাবী ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই লক্ষ্যে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে মোট ৯ হাজার ৯৪টি শূন্য পদের মধ্যে এক হাজার ৩৯২ জন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও এক হাজার ৪৪০ জন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠপর্যায়ে কিছু অদক্ষ কর্মচারী রয়েছে, যারা পদোন্নতি পেয়ে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা হতে চায়। মূলত তারাই নানাভাবে ওই দুটি নিয়োগ বিধিমালার বিরোধিতা করছে। তাদের মধ্যে একাধিক কর্মচারী বিধিমালা দুটি বাতিল চেয়ে আদালতে মামলাও করেছে। তবে বিধিমালা দুটির আওতায় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে আদালত থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। বিধিমালা দুটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ভেটিং শেষে ভূমি মন্ত্রণালয় নিয়োগবিধি দুটির গেজেট প্রকাশ করবে। তারপর পিএসসির মাধ্যমে কর্মকর্তা ও মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কর্মচারী নিয়োগ-সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করা হবে। তার আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিধিমালা পরীক্ষণ-সংক্রান্ত উপ-কমিটির প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটি, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন নিয়োগ বিধিমালা দুটির অনুমোদন দিয়েছে এবং সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে সৎ, যোগ্য, দক্ষ জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। তাতে ভূমি ব্যব¯’াপনায় দ্রুত ডিজিটাইজেশন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। ফলে একদিকে যেমন ভূমির কাজে স্ব”ছতা নিশ্চিত করা যাবে, অন্যদিকে দুর্নীতিও দূর হবে। এদিকে এ প্রসঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন শাখার অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস জানান, পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় জনগণকে আশানুরূপ ভূমি সেবা দেয়া যা”েছ না। বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনেকেই আগামী কয়েক বছরে অবসরে যাবেন। তখন মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর শূন্যতা প্রকট হবে। অবিলম্বে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা না গেলে আগামী দু-তিন বছর পর জনগণকে ভূমি-সংক্রান্ত কোনো সেবা দেয়া সম্ভব না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ জানান, মাঠপর্যায়ে তীব্র জনবল সংকট রয়েছে। জনগণের মধ্যে ভূমির যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা দরকার। অতীতে অনাকাড়িক্ষত মামলা-মোকদ্দমার কারণে নিয়োগ দেয়া যায়নি। ওসব সমস্যার মধ্যেও দুটি নিয়োগবিধি তৈরি করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ে সেগুলোর ভেটিং বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এই বিধি দুটিও বাতিল চেয়ে মামলা করা হয়েছিল। কিš’ আদালত নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেননি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে দ্রুত গেজেট প্রকাশ করে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা যাবে।