বাগেরহাটে ফহম চেয়াম্যান বাহিনীর নির্যাতনের শিকার আ’লীগের কর্মীরা

0
580

বাগেরহাট প্রতিনিধি:
বাগেরহাট সদরে এক দলীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনীর একের পর এক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন খোদ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা। খানপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিনের ক্যাডার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডার মিরান শেখের নেতৃত্বে এসব হামলা. মারপিট, লুটপাট ও মহিলাদের শ্লীলতাহনীর ঘটনার কোন প্রতিকার না পেয়ে আওয়ামীগ পরিবারের অনেক নেতাকর্মী এলাকা ছাড়ছেন। ফহম চেয়ারম্যান বাহিনীর বিরুদ্ধে নেতাদের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ও থানায় ৫টি মামলা করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগীরা। এমনই অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে ফহম চেয়ারম্যান বাহিনীর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সখিনা বেগম নামের নামের এক নির্যাতিতা গৃহবধূ।
এসময়ে ওই বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার খানপুর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র মন্ডল, ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি ও কালীবাড়ী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ফারুক মল্লিক, খারপুর ৭ নম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বাবুল শেখ, ৭ নম্বার ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য ফিরোজ হাওলাদারসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী উপস্তিত ছিলেন।
নির্যাতনের শিকার খানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, অন্যদল থেকে আওয়ামী লীগে এসে দলীয় মনোনয়নে ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে ফকির ফহম উদ্দিন এলাকায় ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলেছেন। তার ক্যাডার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডার ও সব সময়ে শাষকদলের আশ্রয়ে থাকা মিরান শেখের নের্তৃত্বে সন্ত্রাসীরা খারপুর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। ফহম চেয়ারম্যান বাহিনীর নির্যাতনে এলাকার সাধারন মানুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও রক্ষা পাচ্ছেনা। এই বাহিনী একর পর এক খানপুর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র মন্ডল, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক জামিল হোসেন বাবু, ৫ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সভাপতি শরিফ ফকির, ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি সভাপতি ফারুক মল্লিক ও তার ছেলে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য পরভেজ মল্লিক, খারপুর ৭ নম্বার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বাবুল শেখ, ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সমির সেন. ৭ নম্বার ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য ফিরোজ হাওলাদার, ৮ নম্বার ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য দেলোয়ার হাওলাদার, ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সদস্য দিপু হাওলাদার, আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য অনিল মন্ডল, আরিফ হাওলাদার, ফিরোজ খানকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছে। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলায় ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে কারো হাত বা করো পা। এমনকি গৃহবধূ মাহিরা বেগম, সখিনা বেগম ও তার মেয়ে কলেজ ছাত্রী সোহেলী আক্তার পিয়াও এই বাহিনীর নির্যাতর ও শ্লীলতাহানীর হাত থেকে রেহাই পাননি।
সংবাদ সম্মেলনে এই বাহিনীর হাতে নির্যাতন ও শ্লীলতাহানীর শিকার গৃহবধূ সখিনা বেগম জানান, এই বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডার মিরান শেখ তাতে বিভিন্ন সময়ে কুপ্রস্তাব দেয়। গত ২৯ অক্টোবর দুপুরে মিরান শেখ তার বাড়ীতে এসে কুপ্রস্তাবে রাজী না হলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। স্বামী ফিরোজ খান বাড়ীতে এলে তাকেসহ পরিবারের সদস্যরা প্রতিকার চাইতে ইউপি চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিনের বাড়ীতে যাই। চেয়ারম্যান কোন প্রতিকার না করে উল্টো আমাকে তালাক দেয়ার জন্য আমার স্বামীকে চাপ দেয়। স্বামীসহ পরিবারের সদস্যরা চেয়ারম্যানের বাড়ী থেকে বের হবার সাথে সাথে তার বাহিনীর সদস্যরা আমাদের লোহার রড দিয়ে মারপিট করে আহত করাসহ মহিলাদের শ্লীলতাহানী ঘটায়। ছিনিয়ে নেয় স্বর্ণেও চেন, আন্টি ও ৪০ হাজার টাকা।
নির্যাতনের শিকার আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, ফহম চেয়াম্যান বাহিনীর নামে থানায় ৫টি মামলা করেও তার কোন প্রতিকার পাননি। মামলা করা হলেও পুলিশ তাদের আটক করেনা। আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসে তারা নিযর্তিনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। দলীয় নেতাদের কাছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মিলছেনা। এই অবস্থায় খানপুর এলাকায় খোদ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়ীকে বসবাস করতে না পেরে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলেও জানান। এই বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিকার চেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক এবং বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি আহাদ উদ্দিন হায়দার জানান, খারপুর এলাকার আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর চালানো নির্যানের বর্ণানা আমিও শুনলাম। তাদের দায়ের করা ৫টি মামলার কাগজপত্রসহ সংবাদ সম্মেলনের কপি আমি জেলা আওয়ামী লীগের র্শীষ নেতাদের কাছে পৌঁছে দেবো।
এলাকায় নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলে খোদ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর একের-পর এক অত্যাচার-নির্যাতন ও মহিলাদের শ্লীলতাহানীর ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে খারপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিন তার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগকে মিথ্যা. ভিত্তিহীন ও দলীয় প্রতিপক্ষের অপপ্রচার বলে দাবী করেন। তিনি বলেন, তার কোন ক্যাডার বাহিনী নেই। আমি খারাপ লোক হলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য সমাপ্ত কাউন্সিলে বিপুল ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হতে পারতাম না। আমার জনপ্রিয়তার কারনে দল ও দলের বাইরে কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারে নেমেছে।