প্রাথমিকে দেশসেরা প্রধান শিক্ষিক নওগাঁর ফাতেমা খাতুন

0
143

টাইমস ডেস্ক:
প্রাথমিকে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছেন নওগাঁর ফাতেমা খাতুন। গত ১ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এক স্মারকে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৯ এর জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে’ প্রধান শিক্ষিকা ক্যাটাগরিতে তার নাম উঠে এসেছে। তিনি নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্তিপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার পেছনে ফাতেমা খাতুনের রয়েছে অনেক শ্রম ও সাধনা, যা একদিনে সম্ভব হয়নি। শুধু শ্রেষ্ঠত্বের পদক পাওয়ার জন্য নয়, একজন শিক্ষক হিসেবে যা করণীয় তাই তিনি করেছেন। অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা ও উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেছেন বিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে। তিনি বিশ্বাস করেন আন্তরিক ও নিবেদিত হয়ে কাজ করলে সফলতা আসবেই। ঝরে পড়া রোধ করতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের খাতা-কলম, চশমা ও চার্জার লাইটসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা করেছেন ফাতেমা খাতুন। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে প্রতি মাসে বেতনের ১০ শতাংশ টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ডে দেন। ভালো ফলাফলে শিখনফল অর্জনে সহায়ক কার‌্যাবলি হিসেবে স্থানীয় উদ্যোগে পাঁচজন প্যারাটিচারের ব্যবস্থাসহ শিক্ষার্থীদের কাছে বিদ্যালয় নিরাপদ ও আনন্দদায়ক করে তুলেছেন। বিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় স্থানীয় উদ্যোগে ২০১৮ সালে বায়োমেট্রিক হাজিরা ও ছয়টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন। বিগত বছরগুলোতে- ছুটির মধ্যেও প্রতিদিন বিদ্যালয় সকাল ৭টা-৯টা পর্যন্ত প্রথম-পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য রাতে পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখতেন। করোনাভাইরাসের মধ্যে বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও অভিভাবকদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রেখেছেন। এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজখবর রেখেছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি বন্ধুর মতো মিশতেন। তার প্রচেষ্টায় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ছাত্রছাত্রীরা উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কৃতীত্বের সাক্ষর রেখেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের হাতের লেখা ভালো করার জন্য মায়েদেরও লেখা শেখানোর ব্যবস্থা করেছেন। ফাতেমা খাতুন ১৯৯০ সালে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার বাগধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। গত ৩০ বছরের চাকরি জীবনে অনেক বিদ্যালয়বান্ধব কাজ করেছেন এই প্রধান শিক্ষিকা। প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে তার ১৪ বছরের অর্জনের মধ্যে রয়েছে- ২০২০ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা, ২০১৯, ২০১৮, ২০১৭ ও ২০১৫ সালে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ঝরে পড়া রোধে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়, ২০১৯, ২০১৮, ২০১৬, ২০১৪, ২০১৩, ২০১২, ২০১০ ও ২০০৭ সালে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়, ২০১৯, ২০১৮, ২০১৭, ২০১৫, ২০০৯ ও ২০০৮ সালে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা, ২০১৬ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ এসএমসি এবং ২০১১ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষা পদক লাভ করেন। দেশসেরা প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন বলেন, আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের সব সম্মানিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবক, সহকর্মীদের। সেই সঙ্গে কীর্ত্তিপুরবাসী, আমার বন্ধু-বান্ধব, নওগাঁবাসী এবং দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। একই সঙ্গে আমার প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আমার অকৃত্রিম স্নেহ ও ভালোবাসা। সবার প্রেরণা ও উৎসাহে আজ আমি দেশসেরা প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছি। আমার আজকের প্রাপ্তিতে সারাদেশ থেকে যারা আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তাদের সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। তিনি বলেন, একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছি মাত্র। দেশসেরা হবো এটা কখনোই ভাবিনি। ছাত্রছাত্রীদের সাফল্যই ছিল আমার একমাত্র স্বপ্ন। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম আন্তরিক ও নিবেদিত হয়ে কাজ করলে সফলতা আসবেই। জাতীয় পর্যায়ে আমার এ অর্জন আমি সবার জন্য উৎসর্গ করলাম। এ আনন্দ আমার একার নয়। আমি সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে চাই। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। সৃষ্টিকর্তা যেন চাকরির শেষদিন পর্যন্ত আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করেন। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রুবি বানু বলেন, ফাতেমা খাতুন জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছেন। এমন একজন গুণী মানুষের সঙ্গে একই বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করতে পেরে সত্যিই আমি গর্বিত। তিনি শিক্ষা বিষয়ে খুবই সচেতন। কীভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করালে ভালো ফলাফল করা সম্ভব সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিতেন। আমাদের সব সময় উৎসাহ দিতেন। নওগাঁ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাইয়ার সুলতানা বলেন, তিনি তার কর্মদক্ষতার মধ্য দিয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করেছেন। প্রতি বছর জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ভাইভা দিয়েছেন। তিনি তার কার্যক্রম ও দক্ষতা, প্রতিষ্ঠানের অ্যাক্টিভিটিস ও আইসিটিতে অভিজ্ঞতা দেখিয়েছেন। প্রতিটি পয়েন্টে যে নম্বর থাকে সেগুলোতে তিনি পাস করেছেন। জেলা থেকে বিভাগেও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এরপর জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন।