পুতিনের ফ্রি কিক এবং গোল…

0
450

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

রাশিয়া বিশ্বকাপে ভ্লাদিমির পুতিন দেখিয়ে দিয়েছেন, যদু-মধু টাইপের ‘খেলোয়াড়’ তিনি নন। বিশ্বকাপ শেষে হতে না হতেই বিশ্ব রাজনীতির খেলায় নেমেই গোল পেয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। পুতিনের ‘ফ্রি কিক’ শাঁই করে ঢুকে গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জালে।

মার্কিন রাজনীতিক ও বিশ্লেষকেরা আগেই সতর্ক করেছিলেন, পুতিন ঝানু ‘স্ট্রাইকার’। তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক নম্বর শত্রু’। তাঁর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকই করা উচিত নয়।

রাজনীতির মাঠের নবাগত খেলোয়াড় ট্রাম্প অন্যের বুদ্ধিতে চলার লোক নন। তা ছাড়া ‘ঘাড় ত্যাড়া’ বলেও তাঁর পরিচিতি আছে। বিরুদ্ধবাদীদের মুখে ছাই দিয়ে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস ঘোষণা করে, ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে ১৬ জুলাই দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকটি হবেই হবে।

হেলসিঙ্কি বৈঠকের দিন তিনেক আগে ১২ জন রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগে অভিযুক্ত করেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ডেমোক্র্যাট নেতারা বৈঠক বাতিলের দাবি জানান।

বৈঠক বাতিলের দাবি ট্রাম্প অগ্রাহ্য তো করলেনই, উল্টো তিনি ফিনল্যান্ডে পা রাখার আগে চমক দেন। জানান, পুতিনের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন। বৈঠকে কোনো সহযোগী থাকবেন না।

ট্রাম্পের মিত্রদের মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা। পুতিনকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা সমস্বরে কপাল ভাঁজ করে বললেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। আর যা-ই হোক, সাবেক কেজিবি এজেন্টের সঙ্গে ট্রাম্পের একাকী বৈঠকের ফল মোটেই ভালো হবে না। ‘আলাভোলা’ ট্রাম্পকে একা পেয়ে সহজেই বশ করে ফেলতে পারেন পুতিন!

যথারীতি বৈঠক হলো। প্রায় দুই ঘণ্টার একান্ত বৈঠক শেষে সন্দেহবাদীদের আশঙ্কাই সত্যি হয়ে দেখা দিল। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প যা বললেন, এতে মার্কিন রাজনীতিবিদেরা হতবাক। যেন ট্রাম্পের মুখ দিয়ে কথা বলছেন পুতিন!

ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে নিজের গোয়েন্দা সংস্থা বা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট—কাকে বিশ্বাস করেন? উত্তরে ট্রাম্প বললেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, রাশিয়া এই কাজ (নির্বাচনে হস্তক্ষেপ) করেনি। আর তিনিও (ট্রাম্প) রাশিয়ার এমন কাজ করার কোনো কারণ খুঁজে পান না।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প তাঁর নিজ দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমালোচনা করেন। বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের তদন্তকে হাস্যকর বলে অভিহিত করেন।

ব্যস, আর কী লাগে! ট্রাম্প নিজ দেশে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় শিবিরের ‘কামানের মুখে’ পড়েন। দলবল-নির্বিশেষে সমানে ট্রাম্পের মুণ্ডুপাত চলছে।

ট্রাম্পের সমালোচনা করে রাজনৈতিক মহলে বলা হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাশিয়ার দাবিকেই সমর্থন করলেন। তিনি নিজে ও যুক্তরাষ্ট্রকে চরমভাবে হেয় করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের ইতিহাসে তাঁর ‘পারফরমেন্স’ সবচেয়ে লজ্জাজনক।

ট্রাম্পকে নিয়ে কটূক্তিরও বন্যা বইছে। তিনি পুরোপুরি পুতিনের পকেটে ঢুকে গেছেন বলে কেউ কেউ খোঁচা মারছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগও করা হচ্ছে।

হেলসিঙ্কি বৈঠকের আপাতত দৃশ্যমান কোনো প্রাপ্তি নেই। তবে যা স্পষ্ট, তা হলো পুতিনের ‘বশীকরণ মন্ত্র’ কাজ দিয়েছে। ঘোরের মধ্যে ট্রাম্প গোল খেয়ে চিপায় পড়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন হতচ্ছাড়া দশায় পুতিন একটু হাসতেই পারেন!