পাইকগাছায় মাতৃত্বকালীণ ভাতার কার্ড বিক্রির অভিযোগ!

0
260

কপিলমুণি প্রতিনিধি:
মাতৃত্বকালীণ ভাতার কার্ড বিক্রি ও ব্যাংক একাউন্ট খোলার নামে পাইকগাছায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুল হক প্রায় ৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছেন, ১০ টাকার একাউন্ট খোলা হয়েছে।
জানা যায়,পাইকগাছা উপজেলায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুল হক দিঘলিয়া উপজেলা থেকে বদলী হয়ে পাইকগাছায় যোগদান করার পর নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি, সেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যাবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড প্রদানে পাইকগাছা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের জন্য ৭৯০ জনের নামের তালিকা চেয়ে পত্র প্রেরণ করেন। সে অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিয়নে ৭৯ টি করে মাতৃত্বের কার্ড পায়। কিন্তু মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুকৌশলে প্রথমে ইউনিয়ন প্রতি ৭২টি ও পরবর্তীতে আরো ৩ টি করে মোট ৭৫ টি করে কার্ড প্রদান করেন। সে মোতাবেক স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তাদের নামের তালিকা প্রেরণ করেন। এরপর ঐ কর্মকর্তা নাজমুল হক সোনালী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নামে প্রতিটি কার্ডের বিপরীতে ৫৫০ টাকা করে গ্রহন করেন।
সোনালী ব্যাংক পাইকগাছা শাখার ব্যবস্থাপক আরিফ উদ্দীন বলেন, মাতৃত্বকালীন প্রদানে ১০ টাকায় সাফসিডি একাউন্ট খোলা হয়েছে। কিন্তু তার হাতে থাকা ৪টি করে ১০টি ইউনিয়নে ৪০টি কার্ড থাকে। এর কিছুদিন পর ৫/১২/১৯ তারিখে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে ৩২.০০০০.০১২.০১৮.২৯১৬-৪৮১ নং স্বারকে সচিব ফকরুল কবিরের স্বাক্ষরিত ১০টি ইউনিয়নের আরও ৫০টি কার্ড প্রদান করেন। তবে সংশ্লিষ্ট এ কর্মকর্তা অতি গোপনে এ ৫০টি কার্ডসহ আগের রেখে দেওয়া ৪০ টি মোট ৯০ টি কার্ডের কথা সম্পূর্ণ গোপন রেখে তার একান্ত কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ইউপি সদস্য মর্জিনা খাতুন, মঙ্গলী রানী, চঞ্চলা রানী, তৃষ্ণা রানীসহ কয়েক জনের মাধ্যমে কার্ড প্রতি ৪/৫ হাজার টাকা করে নিয়ে বিক্রি করে এসকল নাম তালিকাভুক্ত করে পাঠান।
অপরদিকে সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংক পাইকগাছা শাখায় ১০ টাকায় সাবসিডি ব্যাংক একাউন্ট খুলে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে একাউন্ট খোলার নামে জনপ্রতি ৫৫০ টাকা করে গ্রহন ও কার্ড বিক্রি থেকে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুল হক প্রায় ৮ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
উপজেলার গদাইপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, মহিলা বিষয়ক অফিস থেকে প্রথমে ৭২টি ও পরে আরও ৩টি মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ডের নামের তালিকা চেয়েছিলেন। সে অনুযায়ী তারা তালিকা জমা দিয়েছিলেন বলে জানালেও পরের ৫০টি কার্ডের ব্যাপারে তার জানা নেই বলে জানান তিনি।
ইউপি সদস্য জবেদ আলী গাজী জানান, তার ওয়ার্ডে মাতৃত্বকালীণ ভাতার ৫টি কার্ড ৫ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং তাদের প্রতিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য ৫৫০ টাকা করে ইউপি সচিবের মাধ্যমে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে জমা দেয়া হয়েছে।
চাঁদখালী ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, মাতৃত্বকালীণ ভাতার প্রতিটি কার্ডের বিপরীতে ইউপি সচিবের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য ৫৫০টাকা করে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে প্রদান করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ইউপির দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব শেখ জামাল হোসেন জানান, তিনি তাবলীগ জামায়াতে যাওয়ার আগে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য প্রত্যেক মায়ের কাছ থেকে ৫৫০টাকা করে উত্তোলন করে ঐ কর্মকর্তাকে দিয়েছেন।
পাইকগাছা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার আরিফ উদ্দীন জানান, প্রতিটি মাতৃত্বকালীণ সাবসিডি একাউন্ট খুলতে ১০টাকা করে নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তার ব্যবহার এত রুঢ় তা আমি আপনাদের বোঝাতে পারবো না।
এব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুল হকের ব্যবহৃত মোবাইলে কল দিলে তিনি রিসিভ করলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ফোনটি কেটে দেয়ার আগে সরাসরি অফিসে যোগাযোগের জন্য বলেন।