পাইকগাছায় পুকুর থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার, জিজ্ঞাসাবাদে মা ও সৎ বাবাসহ ৪ জন

0
153

নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গড়ুইখালী বাজার সংলগ্ন পুকুর থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় শ্রাবন (১০) নামে ৪র্থ শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রের লাশ উদ্ধার করে। বুধবার রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে স্থানীয়রা তার লাশ পুকুরে ভাসতে দেখে তাকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য খুমেক হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এএসপি ( ডি সার্কেল) মোঃ হুমায়ুন কবির ওসি মোঃ এজাজ শফী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এঘটনায় পুলিশ নিহত শিশুর মা, সৎ পিতা, মামা-মামী ও নানাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নিয়েছে।

থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার গড়ইখালী বাজারের বাসিন্দা ও স্থানীয় পোষ্ট অফিসের ডাক পিয়ন সাঈদুর রহমান গাইনের মেয়ে রত্মার সাথে ২০১১ সালে বিয়ে হয় ঝিনাইদহের জনৈক মাসুদ রানার। সেখানে জন্ম হয় শ্রাবনের। এরপর গত প্রায় সাড়ে ৩ বছর আগে মায়ের সাথে তার বাবার বিচ্ছেদ হলে সেখান থেকে সে মায়ের সাথে গড়ুইখালীতে নানার বাড়িতে থাকত। এরপর গড়ইখালীর মৃত খানজাহান আলী সরদারের ছেলে আমিন সরদারের সাথে শ্রাবনের মা রত্মা ফের বিয়ে করেন।

রত্মা বেগম জানান, ঘটনার দিন বুধবার (২৩ জুন) দুপুরে পাশের বাড়িতে শ্রাবনসহ স্বপরিবারে দাওয়াত খেতে যান। এরপর বৃষ্টি শুরু ও পরে বৃষ্টি থামলে আছরের আজানের আগে শ্রাবন বাজারে খেলতে যায়। আর রত্মা ও তার পিতা সাঈদুরসহ বর্তমান স্বামী আামিন সরদার গড়ইখালীতে নির্মাণাধীন নতূন বাড়ির কাজ দেখতে যান। সন্ধ্যা নেমে আসলেও শ্রাবন বাড়িতে না আসায় সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজা-খুঁজির পর স্থানীয় মসজিদের মাইকে তার হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। এরপর আশ-পাশের সম্ভাব্য সব জায়গায় তার ব্যাপক খোঁজাখুজি শুরু হয়। এক পর্যায়ে তার নানী তার পরিহিত নতুন স্যান্ডেলের একটি ঘরের বারান্দায় অপরটি বসত ঘরে দেখতে পায়। এসময় শ্রাবনকে নিয়ে তার সন্দেহ বেড়ে যায়। একপর্যায়ে রাত ৮ টার দিকে বাড়ি সংলগ্ন পুকুরের ঘাটের নিচ থেকে গলাঁয় দোলনা বানানো কালো ফিতার ফাঁস দেওয়া মৃত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।

এ সময় তার পরনে জিন্সের প্যান্ট ও গাঁয়ে গেঞ্জি পরা ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে তার লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য লাশ খুমেক হাসপাতালে পাঠায়। ধারণা করা হচ্ছে, ঐসময় বিদুৎ না থাকার সুযোগে দূর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দেয়। তবে কারা কি উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করে? আর প্রকৃত রহস্যটাই বা কি ? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে পুলিশ নিহতের মা রতœা বেগম, সৎ পিতা আমিন সরদার, মামা বাদশা দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নিয়েছে। থানা পুলিশ জানায়, মায়ের বহু বিবাহের কারণে শত্রুতা, শ্রাবনের প্রতি নানা-নানীর অতি যতœ, রত্মার নামে নতূন বাড়ী নির্মাণসহ কয়েকটি সুত্র ধরে পুলিশ রহস্য অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে।

এদিকে শ্রাবনের নানীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার নতুন কেনা স্যান্ডেলের একটি বারান্দায় ও অপরটি ঘরে দেখলে এবং বাজারে খেলতে যাওয়ার সময় সময় তার পায়ে ঐ স্যান্ডেল থাকার বিষয়টি সত্য হলে ঘটনাটি তার নানার বাড়ীতেই ঘটে থাকতে পারে। বিদ্যুৎ না থাকায় শ্রাবনের বাড়ি ফেরার বিষয়টি তার নানীর দৃষ্টিগোচর হয়নি। তবে হন্তারকরা এ সুযোগটি কাজে লাগাতে তাকে বাজার থেকে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ থেকে শুরু করে অন্যরা বাড়িতেই ওৎ পেতে থাকে। এরপর সে বাড়িতে ফেরা মাত্রই কেউ বা কারা তাকে দড়ি দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা শেষে পুকুরে লাশটি ফেলে দেয়। আর এমনটি হলে হন্তারকরা তার পরিচিত ছিল। তাই তাদের দেখে শ্রাবন চিৎকার দেয়নি। এরই মাঝে সুযোগ বুঝে তারা তাকে হত্যা করে।

এসময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে পায়ের একটি স্যান্ডেল ঘরে ও লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় অপর স্যান্ডেলটি পা থেকে বারান্দায় খসে পড়ে। তবে হন্তারকরা দড়িসহ লাশটি ঘটনাস্থলেই ফেলে যেতে পারতো। তবে হয়তো তারা পানি ভরা পুকুরে ডুবে তার মৃত্য হয়েছে এমনটি প্রচার করতে চেয়েছিল। তবে, তড়িঘড়ি করে দড়ি লাশের গলায় থেকে যাওয়ায় এমনটি সম্ভব হয়নি। আর পুরো ঘটনা এমনটি হলে গলায় বাঁধা রশি ও পায়ের স্যান্ডেল ক্লু হতে পারে। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে পাইকগাছা থেকে সাংবাদিকরা সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়রা জানান, শ্রাবন অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির ছিল। এসময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তার হত্যার বিচার দাবি করেন। স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল গাইন বলেন, শ্রাবনের খোঁজাখুঁজি থেকে শুরু করে পুকুর হতে লাশ উত্তোলন পর্যন্ত সকল ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। তবে হত্যার ব্যাপারে কারোর প্রতি সন্দেহ করতে পারছেননা তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম কেরু বলেন, শিশু শ্রাবনের অকাল মৃত্যুতে এলাকাবাসী ভীষণ মর্মাহত,তারা এঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।

এ প্রসঙ্গে পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ এজাজ শফী বলেন, ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত শ্রাবন হত্যার ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাবেনা। তবে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তীক্ষ্ন অনুসন্ধান শুরু করেছে। এ এসপি( ডি-সার্কেল) মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, ইতোমধ্যে নিহত শিশুর মামা বাদশা গাইন দম্পতি, সৎ পিতা আমিন সরদার ও মা রত্মাকে জিজ্ঞাসাবদের জন্য থানা হেফজতে নেওয়া হয়েছে।

খুলনা টাইমস/এমআইআর