পাইকগাছায় দূর্ভোগের অপর নাম ওড়াবুনিয়া গ্রাম মাটির রাস্তায় ইটের পরিবর্তে বসানো বাঁশের সাঁকোই যাতায়াতের একমাত্র ভরসা!

0
166

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ওড়াবুনিয়া। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের একটি দূর্গম গ্রাম। চারপাশে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পানি বেষ্টিত গ্রামে যাতায়াতের ভাল কোন রাস্তা নেই। পানীয় জলের সু-ব্য্স্থার পাশাপাশি স্যানিটেশন ব্যবস্থাও নাজুক। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক পাটপরিবর্তনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গ্রামটির সার্বিক উন্নয়নে প্রতিশ্রæতি দিলেও দৃশ্যত কোন উন্নয়ন হয়নি এলাকার।
পানি বেষ্টিত নিভৃত গ্রমে পাঁচ শ’রও বেশি মানুষের বসবাস থাকলেও তাদের খবর নেয়ার যেন আজ আর কেউ নেই। জাতীয় ও স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের অনেকে গ্রামে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের খোঁজ-খবর কিংবা উন্নয়নের আশ্বাস দিলেও নির্বাচনের পর আর তাদের দেখা মেলেনা বলে আক্ষেপের সাথে জানান স্থানীয়রা। শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয়রা কোন রকম স্বাচ্ছন্দে থাকলেও বর্ষা মৌসুম এলেই দূর্ভোগের আর অন্ত থাকেনা তাদের। দূর থেকে গ্রামটিকে দেখলে মনে হয়, মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কোন দ্বিপ এটি।
সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে দেখা যায়, গজালিয়া চৌরাস্তা থেকে পশ্চিমে কয়েক কিলোমিটার লম্বা গ্রামটির অস্তিত্ব। গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ে যাতয়াতের জন্য একমাত্র মাটির রাস্তাটি। তবে তা অত্যন্ত সরু ও নীচু। রাস্তায় হাটতে হাটতে পশ্চিম প্রান্তে চোখে পড়বে রাস্তার উপর বাঁশের সাঁকো। বর্ষা মৌসুমকে কেন্দ্র করে বছরের একটি বড় সময় জুড়ে গ্রামের সিংগভাগ এলাকা থাকে জলমগ্ন।
ওড়াবুনিয়ায় একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক বা উ”চ মাধ্যমিকে পড়তে প্রতিদিন দীর্ঘ পথ পাঁড়ি দিতে শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে অনেকেই স্কুল-কলেজে যাতাযাত বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয়রা জানান, এলাকায় পানীয় জলের তীব্র সংকটে গ্রামের মহিলাদের সুপেয় পানি সংগ্রহে প্রতিদিন পায়ে হেঁটে যেতে হয় অন্তত ৬ কিঃমিঃ পথ। গ্রামের অভ্যন্তরে যাতায়াতের কোন মাধ্যম নাথাকায় হাঁটাই যেন গ্রামবাসীর একমাত্র ভরসা।
স্থানীয় শিক্ষক তপন কুমার মন্ডল বলছিলেন, বর্ষা মৌসুমে তাকে গ্রামের বাইরে স্কুলে যেতে অন্তত দু’টি ড্রেজ সাথে নিয়েই বের হতে হয়! কয়েক কিঃমিঃ রাস্তার পানি ঠেলে পায়ে হেঁটে যেতে হয় গন্তব্যে। এলাকার উন্নয়ন বলতে গ্রামটিতে বিদ্যুতায়ন ছাড়া দৃশ্যত কোন উন্নয়ন হয়নি বলেও জানান এ স্কুল শিক্ষক।
গ্রামের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ শিবানী মন্ডল জানান, প্রতিদিন খাওয়ার উপযোগী পানি আনতে তাকে প্রতিদিন প্রায় ৫ কিঃমিঃ পথ হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। এতে ভোগান্তি বাড়ে বর্ষা মৌসুমে। রাস্তা না থাকায় তারা দলবদ্ধ হয়ে পানির মধ্যে সাঁতরে খাওয়ার পানি সরবরাহ করেন।
গ্রামের বাসিন্দা দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছবি মন্ডল জানান, রাস্তার অভাবে বর্ষা মৌসুমে তাদের দু’টি ড্রেজ নিয়ে স্কুলে যেতে হয়। অবস্থা বেগতিক হলে বন্ধ থাকে স্কলে যাতায়াত।
সংশ্লিষ্ট ইউপির ওয়ার্ড সদস্য নজরুল ইসলাম হিরা বলছিলেন, গ্রামের রাস্তার দু’পাশ জুড়ে মৎস ঘের ও সরকারী খাল থাকায় রাস্তার কাজ করা সম্বব হয়না। বাঁশের সাঁকোটি নিয়মিত মেরামত করা হলেও বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানির চাপে অল্প সময়ে নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে রাস্তার দু’পাশে পাইলিং করে মাটিভরাট দিয়ে উচু করতে পারলে রাস্তাটি হয়তো টিকতে পারে বলেও মন্তব্য তার। তবে ইউনিয়ন পরিষদের এত বড় বাজেট না থাকায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছেনা। কাবিখা প্রকল্পে ৩ লাখ টাকার বরাদ্দ পেলেও কাজ করতে না পারায় প্রকল্পটি গড়ের আবাদ গুচ্ছ গ্রামে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
চাঁদখালী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ আক্কাস ঢালী বলেন, ওড়াবুনিয়া রাস্তার জরিপ কার্য সম্পন্ন হয়েছে। আগামীতে কার্লভার্টসহ রাস্তার কাজ করা হবে।
পাইকগাছা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, ওড়াবুনিয়ার সংলগ্ন খালের উপর একটা ব্রিজের জন্য পরিমাপ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।