পলাতক এসআই আকবরকে ধরতে ইমিগ্রেশনে পিবিআইয়ের চিঠি

0
178

টাইমস ডেস্ক:
সিলেট কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়ি হেফাজতে রায়হান আহমদের (৩৪) ম”ত্যুর ঘটনার তদন্ত কাজ শুরু করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ও তদন্ত স্বার্থে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া পলাতক রয়েছেন। তিনি যেন কোনোভাবেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্য ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছে তদন্তকারী সং¯’াটি। গতকাল ব”হস্পতিবার ধানমন্ডিতে অব¯ি’ত পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে সং¯’াটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, সিলেটের ঘটনার ডকেট ((সাক্ষ্য-প্রমাণ ও তথ্যের নথি)) আমরা গত পরশুদিন রাতে পেয়েছি। ঘটনা¯’লে সিলেটের পিবিআই টিম তিন থেকে চার ঘণ্টা ছিল। আমরা আমাদের তদন্ত শুরু করে দিয়েছি। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের মনে হয়েছে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া উপপরিদর্শক আকবরকে আমাদের দরকার। তিনি বলেন, এ কারণে সমগ্র ইমিগ্রেশনে আমরা জানিয়ে দিয়েছি, আকবর যেন কোনোমতেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে না যেতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও সীমান্তের বিভিন্ন ইমিগ্রেশন সেন্টারে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, আকবর যেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে। তাকে ধরার জন্য আমরা টিম রেডি করেছি। তাকে আমাদের খুবই দরকার। ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার আরও বলেন, আমাদের আইজিপি স্যার সবসময় বলেন, করোনার মধ্যে তোমরা যে সুনাম কামিয়েছ, আকাম করে এ সুনাম নষ্ট করো না। আকবর যেহেতু এই অপকর্ম করে বাহিনীর সুনাম নষ্ট করেছে এবং সে আমাদের কথা চিন্তা করে নাই, সুতরাং তার বিষয়ে কোনো চিন্তা করার সুযোগ নেই। ‘১০ হাজার টাকার কারণেই কি এমন ঘটনা ঘটেছে’-এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখছি। একদিনেই সবকিছু বলা যাবে না। তবে আমরা একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কবর থেকে তার লাশ আবার উঠাব এবং তদন্ত করব। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরের বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনো মামলার ফাইল পাইনি। পেলে তদন্ত কাজ শুরু করব। এ ক্ষেত্রে তদন্তভার সিনিয়র কোনো অফিসারকে দেয়া হবে। এদিকে সিলেট নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান উদ্দিনের লাশ পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। গত বুধবার সকাল ৯টার দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিসবাহ উদ্দিন ও সজিব আহমদের নেতৃত্বে আখালিয়া এলাকার নবাবী মসজিদের পঞ্চায়েত গোর¯’ান থেকে লাশটি তোলার কাজ শুরু করেন। দুই ঘণ্টা পর লাশটি উত্তোলন করে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা গেছে, পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য রায়হানের লাশ কবর থেকে উত্তোলনের আবেদন করেছিলেন মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই আবদুল বাতেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতেই রায়হান আহমদের লাশ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেয়া হয়। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করেছে পিবিআই। মঙ্গলবার রাতেই এই মামলার নথি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর পিবিআই কর্মকর্তারা গত বুধবার দুপুরে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যান এবং আলামত সংগ্রহ করেন। এর আগে গত শনিবার মধ্যরাতে রায়হানকে তুলে নিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করে পরিবার। সকালে তিনি মারা যান। নির্যাতনের সময় এক পুলিশ সদস্যের মুঠোফোন থেকে রায়হানের পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে টাকা চাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা সকালে ফাঁড়ি থেকে হাসপাতালে গিয়ে রায়হানের লাশ শনাক্ত করেন। ঘটনার শুরুতে ওই ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ছিনতাইকারী সন্দেহে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হয়েছেন বলে প্রচার করেন। কিš’ গণপিটুনির ¯’ান হিসেবে যে কাষ্টঘর এলাকার কথা বলেছিল পুলিশ, সেখানে সিটি কর্পোরেশনের বসানো সিসিটিভি ক্যামেরায় ওই সময়ে এমন কোনো দ”শ্য দেখা যায়নি। রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে পুলিশ সদস্যরা নির্যাতন করে তার স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ এনে মামলা করেন। বিষয়টি তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের ম”ত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় সিলেট মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে- রোববার ভোররাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে রায়হানকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আনা হয়। সেখানে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসু¯’ হয়ে পড়লে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহী। সেখানে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে মারা যান রায়হান। নিহত রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারীপাড়া এলাকার তৎকালীন বিডিআরের নায়েক ম”ত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবীবাজার এলাকার একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে চাকরি করতেন। নিহারিপাড়ায় স্ত্রী, ছয় মাস বয়সী মেয়ে, মা ও চাচাকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।